শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
জেলা ছাত্রলীগকে নানা চ্যালেঞ্জ

কসবায় ছাত্রলীগের কমিটি পুনবর্হাল না করলে রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে জেলা ছাত্রলীগকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে কসবা পৌর ছাত্রলীগ ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দাবি না মানলে প্রয়োজনে রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধেরও ঘোষণা দেয়া হয়।

ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে জেলা ছাত্রলীগের প্রতি নানা চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, জেলা কমিটি বিলুপ্ত করলেও সেটি গঠনতান্ত্রিক না হওয়ায় এই কমিটিই কসবাতে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। জেলা কমিটি যেখানে এক বছরের বদলে সাত বছর ধরে চলছে সেখানে উপজেলা কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ বলার বিষয়টি হাস্যকর বলে উল্লেখ করা হয়। কসবা উপজেলা ছাত্রলীগ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এক নেতার পক্ষে কাজ করছে বিধায় রাতের আধারে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটি বিলুপ্ত করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

এর আগে বুধবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারন সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ও সাংগঠনিক কাজে স্থবিরতা হওয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার অন্তর্গত কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। জেলা শাখার এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ হয়।

এদিকে কমিটি বিলুপ্তের প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হতে থাকে। সকাল থেকেই সেখানে জেলা কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরণের শ্লোগান দেওয়া হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতা এস.এম শাফায়েত হৃদয়ের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক পৌর মেয়র মোঃ এমরান উদ্দিন জুয়েল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারমান মোঃ মনির হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক পলাশ, সুমন রানা, মো. ইব্রাহিম, শ্যামল ভ‚ঁইয়া, সাইফুল ইসলাম, ফজলে রাব্বি, আজমীর গাজী, বশির আহমেদ, আমিনুল হক তুহিন, বিল্লাল মুন্সী, পাশা আলী, রিফাত খাঁ, মো. নাঈম, মো. আলাউদ্দিন, হৃদয় শীল, আনোয়ার আলম প্রমুখ।

এদিকে কমিটি বিলুপ্তির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে লেখালেখি হচ্ছে। কেউ এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। আবার কেউ এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার তোলপাড় শুরু হয়েছে।

অনেকে অভিযোগ করেছেন, পাশের আখাউড়াসহ একাধিক উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমহীন কমিটি রয়েছে। অথচ সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু কসবা উপজেলা কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া উদ্দেশ্যমূলক। এ নিয়ে ওই এলাকার সংসদ সদস্য তথা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কিংবা স্থানীয় অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও পরামর্শ করা হয়নি বলে জেলা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।

এ ব্যাপারে বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির আহবায়ক আফজাল হোসেন খান রিমন বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যে কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের আলাদা সুনাম আছে। মন্ত্রী মহোদয়সহ স্থানীয় নীতিনির্ধারকদের কারো সাথে কোনো ধরণের পরামর্শ না করে, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না দিয়ে জেলা ছাত্রলীগ যা করেছে তা কোনোভাবেই ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি হয়নি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনার প্রতিবাদে পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল ইউনিট কর্মসূচি পালন করে।’

কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, ‘এভাবে কমিটি ভাঙা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কসবা উপজেলা ছাত্রলীগ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছিলো। জেলা কমিটি কোনো কারণ ছাড়াই কসবা ছাত্রলীগের কমিটির বিলুপ্ত করায় নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ কমিটি বহাল না করলে আমরা রেল ও সড়ক পথ অবরোধ করবো।

সাবেক মেয়র ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমরান উদ্দিন জুয়েল বলেন, ‘কসবা ছাত্রলীগ একটা মডেল। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কারো পক্ষে কাজ করায় কমিটির ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ওনি বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টির সমাধান করবেন। যদি সেটা না হয় তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘কসবা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করতে একটা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের একটা নির্দেশনা ছিলো। এরই আলোকে এটা করা হয়েছে। তবে এটা সত্য যে ওই এলাকার সংসদ সদস্য তথা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটা সম্ভব হয়নি।’

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘তিন মাস মেয়াদি কমিটির বয়স হলো ছয় বছর। এ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন বিদেশ চলে গেছে, একজন কাজী হয়েছেন। আবার অনেকে চাকরি পেয়েছেন ও বিয়ে করেছেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় কেউ কর্মসূচি পালন করে থাকলে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা ছাত্রলীগকে উজ্জীবিত করতে সিভি নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ ওই নেতা আরো জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের বিষয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের একটি নির্দেশনা রয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে