শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

সরাইলে ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়েছে কৃষকের স্বপ্ন 

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৪৭
সরাইলে ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়েছে কৃষকের স্বপ্ন 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল। এতে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বোরো ফসলের মাঠ।

এসব ধানক্ষেতে অধিকাংশই শীষ বেড়িয়েছে । আবার অনেক জমিতে শীষ বেরুচ্ছে। ধানের শীষ দেখে কৃষকও স্বপ্ন বুনছেন আর কদিন পরেই পাকা ধান ঘরে তুলবেন। কিন্তু নিউ আশা ব্রীকস নামক একটি ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে ১৫ কৃষকের স্বপ্ন।

সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তীর গোড়াইল বিলের মাঝখানে নিউ আশা ব্রিকস। গত কয়েকদিনে ধমকা হাওয়ায় ওই ইটভাটার নিচু চিমনির ধোঁয়ায় পাশের বোরো ধানের প্রায় একশ বিঘার জমির ধান পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ১৫ জন কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে গেছে ।

গত বুধবার বিকেলে সরেজমিনে ধরন্তীর গোড়াইল বিলে গিয়ে দেখা গেছে নিউ আশা ব্রিকসের নিচু চিমনির ধোঁয়া ইটভাটার উত্তর দিকে প্রায় একশ বিঘা জমির শীষযুক্ত ধান পুড়ে গেছে। গত কয়েকদিনের চিমনির ধোঁয়ায় এসব জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। আবার অনেক জমির শীষ সাদা হয়ে গেছে। শুধু ধানই নয় বিলের প্রাকৃতিক ঘাসও জ্বলে গেছে।

এ সময় হিরণ মিয়া নামের এক কৃষক ধানে হাত বুলাতে বুলাতে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, মহাজনদের কাছ থাইকা লগ্নি টাকা আইন্যা জমি করছি। এ জমির ওপর সংসারের সারা বছরের খোড়াকি সহ সন্তানের লেখাপড়া,কাপড়-চোপড় ওষুধপত্রের খরচাদি নির্ভর করে। ব্রিক ফিল্ডের ধোঁয়ায় আমার কপাল পুড়ছে ।

অহন মহাজনের ঋণ শোধ করুমই কেমনে, সারা বছর কি খাইয়া বাচুম? একই কথা বললেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক খন্দকার আবু হানিফ, রিপন মিয়া, আকতার হোসেন, ইলিয়াছ মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আমির হোসেনসহ আরও অনেকে।

এদিকে খবর পেয়ে কালিকচ্ছ ইউনিয়ন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান ভূইয়া গত বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে ধোঁয়া থেকেই এমনটি হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। ধোঁয়ার ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা ।

গড়াইল বিল কমিটির সভাপতি বাচ্চু মেম্বার বলেন, আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন। আমি শুক্রবার বিলে গিয়ে ইটভাটা মালিকের সাথে কথা বলব।

এ ব্যাপারে নিউ আশা ব্রিকসের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তার কাগজ পত্র সব হালনাগাদ আছে। তিনি আরও বলেন,৮/১০ ধরে ব্যবসা করছি অতীতে কখনো এমনটি হয়নি। যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি অবশ্যই দেখব।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারি পরিচালক বিসল চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।তিনিও জানান ওই ইটভাটার কাগজপত্র হাল নাগাদ আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে শুধু নিউ আশা ব্রিক্সই নয় ওই হাওরে সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলায় ফসলি জমিতে ১০/১২টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হলেও মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগী কৃষকেরা প্রতিবাদ করতে সাহস করেনা।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে