রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ছাগলনাইয়া দৃষ্টিনন্দন মসজিদ,দেখতে ছুটে যান দূর-দূরান্তের লোকজন

আজাদ মালদার, ফেনী প্রতিনিধি
  ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:০৬
ছাগলনাইয়া দৃষ্টিনন্দন মসজিদ,দেখতে ছুটে যান দূর-দূরান্তের লোকজন

ফেনীর ছাগলনাইয়াতে একটি মসজিদ, একটি গ্রাম ও এলাকাকে অতি অল্প সময়ে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিতি করে তুলেছে। ইতোমধ্যে ঐ মসজিদটির নির্মাণ শৈলীর কথা গ্রাম ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তের মানুষের কানে পৌঁছে গেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুঁটে যান ওই মসজিদ দেখার জন্য। এতে ধীরে ধীরে মসজিদটির পরিচিতি যেন ক্রমেই বেড়েই চলেছে।

মসজিদটির পরিচিতি হচ্ছে, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের বাংলাবাজার থেকে উত্তরে ৫ নং ওয়ার্ডের উত্তর হরিপুর গ্রামে কাবিল ভূঁইয়া বাড়ির সামনে অবস্থিত। সে কারণে মসজিদটির নামকরণ হয়েছে 'কাবিল ভূঁইয়া জামে মসজিদ’।

ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের পাঠান নগর ইউনিয়নের বাংলাবাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাংলা বাজার হতে আঁকাবাঁকা পথে ঐ মসজিদে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০/১৫ মিনিট । সেখানে মসজিদের সামনে পৌঁছে দেখা যায় বেশ সুন্দর স্থাপত্য। দূর থেকে মসজিদের সামনের অংশটি দেখতে মনে হয়, এটি টেলিভিশন আকৃতির। মসজিদটি দুই তলা বিশিষ্ট ভবন। এর সুউচ্চ বিশেষ ধরনের মিনারটি যেন মসজিদটির সৌন্দয্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। আকর্ষনীয় ডিজাইনের এ মসজিদটির সাথে তুলনা করার জন্য শুধু ফেনী জেলা নয়, আশে পাশেও কেউ এটি দেখেননি। সে কারণেই প্রতিনিয়ন বহু লোক সেটা দেখতে যায় বলে গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলেন, এ মসজিদ টি মালয়েশিয়ার একটি মসজিদ থেকে নকশা ও ডিজাইন করে এটি তৈরি করা হয়েছে।

মসজিদের সামনে গিয়ে দেখা হয় কাবিল ভূঁইয়া বাড়ির বাসিন্দা ও মুসল্লিদের সাথে কথা বলে জানতে চাইলে তারা জানান, মসজিদটি শতবর্ষী। ছোট বেলায় সেখানে গ্রামের একাধিক সমাজের লোকজন জুমা নামাজসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তিতে এটি চারপাশের টিনসহ টিনের ঘর করা হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর,ওই মসজিদের স্থানে একটি ছাদ ঢালাই করে ১ তলা মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়।

গত কয়েক বছর ধরে মসজিদটি ধীরে ধীরে জরাজির্ণ হতে থাকে। এরপর মসজিদের সভাপতি মো. দিলদার হোসেন ভূঁইয়া মজনু সহ সমাজের নেতৃস্হানীয় ব্যক্তিদের বৈঠকে পুরানো মসজিদটি ভেঙ্গে সেই স্থানে একটি দোতলা দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

মসজিদ কমিটির সদস্য ও মসজিদ কমিটির সাবেক সেক্রেটারি, মসজিদ পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ বেলাল ভূঁইয়া, মসজিদের ইমাম সহ মুসল্লিরা বলেন, প্রাথমিকভাবে মসজিদের নির্মানের জন্য ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় নতুন আঙ্গিকে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং একটানা বিরতিহীনভাবে কাজ করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়।

তারা জানান, ২০২৩ সালের ২১ জুলাই নব-নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যেমে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ ঢাকার বায়তুল মোকারমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান।

মসজিদটির সামনে দিয়ে একটি গ্রামীন পাকা সড়ক। তারপর মসজিদ বরাবর সোজাএকটি পুকুর। মসজিদের ঠিক সামনেই পুকুর পাড়ে একটি ছোট আম গাছ যেন মসজিদ থেকে বের হলেই মুসল্লিদের ছায়া দিচ্ছে।

গ্রামীন সড়ক থেকে যেন সোজা মসজিদে প্রবেশ পথে রেলিং দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। বেষ্টনীর দুই পাশ দিয়ে ৮টি সিড়ি মাড়িয়ে মসজিদে ঢুকতে হয়।

মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. দিলদার হোসেন ভূঁইয়া মজনুর সহযোগিতায় মাত্র চার শতক জায়গার ওপর এ দোতলা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নীচ তলা ও দোতলায় এক হাজার ৪৩৫ বর্গফুট আয়তনের এ মসজিদে এক সাথে ৫০০ লোক নামাজ আদায় করতে পারে। এ মসজিদ নির্মানের জন্য নকশা তৈরি করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর স্থপতি মো. রাশিদুল হাসান। তিনি শুধু নকশা করেই দেননি।

নির্মাণের সময় অনেকবার পরিদর্শন করেন। তারই তত্বাবধানে একজন উপ সহকারী প্রকৌশলী নিয়মিত তদারকিতে ছিলেন। মসজিদ নির্মানে এ যাবত প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ইটের তেমন কোন কাজ হয়নি। পাথরের ঢালাই ও কাঁচ দিয়েই কাজ শেষ করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা আরো জানান, মসজিদের সামনের পুকুর পাড়ে একটি পাকা ঘাটলা নির্মান কাজ এখনো বাকী রয়েছে। সেটি হলে মুসল্লীদের অযু ও গোসলের সুবিধা হবে। মসজিদের দুই পাশে রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান।

তারা আরো জানান, মসজিদ নির্মানের আগে গ্রামীন এ সড়কটি কাঁচা ছিল। মসজিদের কাজ শেষ হওয়ার পর সড়কটিও পাকা করন করা হয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠান নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েল জানান, এই মসজিদের নির্মান শৈলী অনেক দূষ্ঠিনন্দন। অনেকেই এটি দেখতে যায়, নামাজ পড়েন। তিনি নিজেও উদ্বোধনের সময় এবং পরেও গেছেন। এলাকায় এ ধরনের আর কোন দৃষ্টি নন্দন মসজিদ নাই। এ মসজিদ নির্মাতা ও দান অনুদানকারীসহ সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

মসজিদের চারপাশে আরো কিছু অসমাপ্ত কাজ রয়েছে। তাহা স্থানীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের সহযোগিতা কামনা করেন। তারা আরো সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করার জন্য দাবি রাখেন।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে