সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রধান শিক্ষক-কমিটির দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীশূন্য বিদ্যালয়

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ০৮ মে ২০২৪, ১৫:৪৬
ছবি: যায়যায়দিন

প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সাথে দ্বন্দ্বে গত ১৫ দিন যাবত শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে সুরীরচালা আব্দুল হামিদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষার্থী না থাকায় পাঠবিহীন স্কুলের সময় কাটিয়ে চলে যান। বিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদ সভা করলে নিজের চাকরি রক্ষায় বিভিন্ন মিথ্যা ওজুহাতে মামলা দেন ওই প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন ।

এলাকাবাসী সমস্বরে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান, অচিরেই প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করে নতুন প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ওই বিদ্যালয়কে রক্ষা করার। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিস্তারিত একটি লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পাঠিয়েছেন এলাকাবাসী ও নির্বাচিত বিদ্যালয় পরিচালক কমিটি। বিদ্যালয়টি উপজেলার কাকরাজান ইউনিয়নের সুরীরচালা গ্রামে।

সোমবার (৬মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন ও শিক্ষক মন্ডলী অফিসে বসে আছেন। দু একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পড়াচ্ছেন কিন্ত কোন কোন শ্রেণিকক্ষে একজন বা দুইজন আবার কোন কোন শ্রেণীকক্ষ ফাঁকা । দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব শ্রেণি মিলিয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে মাত্র ১৩ জন । অনেক সময় ক্লাস না নিয়েই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির এ দৃশ্য নতুন নয়। বর্তমানে যিনি প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শিক্ষার্থী হারাতে থাকে এই বিদ্যালয় । এরমধ্যে সব ক্লাস মিলিয়ে প্রতিদিন উপস্থিতি তিন-চার জনের বেশি হয় না। এতে ক্লাস নেওয়ার পরিবেশ না থাকায় চার শিক্ষক ঘুরেফিরে সময় কাটান।

এমন পরিস্থিতির জন্য অশোভন আচরণ ও অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের কথা বলছেন স্থানীয়রা।

(নাম প্রকাশের ইচ্ছুক নয়) বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে পুরো বিদ্যালয় ফাকা। প্রধান শিক্ষকের আচরণ শোভনীয় নয়।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন বলেন , বিদ্যালয়ের কোন বিষয়ে কোন সাংবাদিককে কিছু বলবো না। বিদ্যালয়ের কোন ছবি তুলতেও দেবো না পত্রিকায় লিখে যা পারেন করেন।

নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি সাইদ মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজের স্ত্রীকে বিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই গাছ কেটে টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমি নির্বাচিত কমিটির সভাপতি হলেও আমাদের অজান্তেই উপজেলায় এডহক কমিটির জন্য লিখিত আবেদন দিয়েছে। আমরা গ্রামবাসী এই প্রধান শিক্ষকের বিচার চাই। বিদ্যালয় থেকে অপসারণ চাই।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য ইন্দ্র চন্দ্র বর্মন বলেন, এই প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিগ্রস্ত। বিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা করেন না। একটি মামলা বাজ লোক। আমাদের নির্বাচিত কমিটিকে মানেন না তিনি। এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার জেরে কমিটির লোকজনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলটি শিক্ষার্থীশূন্য।

স্কুলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও প্রতিদিন ১০/১২জনের বেশি উপস্থিত থাকে না। স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ করা না হলে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেন না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত কমিটি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন সাংবাদিকদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা ঠিক হয়নি ওই প্রধান শিক্ষকের।

স্কুল কমিটির নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা উপজেলা একাডেমিক অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন মিল্টন বলেন, গত ৪ এপ্রিল স্কুলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির রেষারেষির কারণে ৮ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটির ক্ষমতা হস্তান্তর স্থগিত করা হয়।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো.হারুন অর রশিদ বলেন, স্কুল কমিটির সদস্যবৃন্দ ও প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিনের দ্বন্দ্ব নিরসনে আমরা কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিগ্রস্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, শিক্ষার্থী-সংকটসহ অনেক অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সুরীরচালা আব্দুল হামিদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন হয়। ৮ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর স্থগিত করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক, নির্বাচিত কমিটি ও এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এই নিউজ লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে