সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ভৈরবে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত শতাধিক

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৮ মে ২০২৪, ১৬:৫৯
ভৈরবে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত শতাধিক

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জিল্লুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে ও বিদ্যালয়ের পাশে বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।

আজ বুধবার (৮ মে) সকালে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। ৭ মে বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রথম দফায় সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়। দু'দফায় উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আনন্দ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়। ২০/২৫ টি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর লুটপাট করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে রাহুল আমিন, জয়নাল আবেদীন, লিটন মিয়া, শাকিল মিয়া, আকরাম মিয়া, আক্কাস মিয়া, জাফর মিয়া, আকাশ মিয়া, সুজন মিয়া, জাকির মিয়া, রায়হান মিয়া, গোলাম দস্তগীরর, রাশিদ মিয়া, আবুল হোসেন, মোতাহার হোসেন, রুমান মিয়াসহ ৭৮ জন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা, লিটন মিয়া জাকির মিয়া ও আকাশকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে।

গুরুত্বর আহতের মধ্যে সোহরাফ মিয়া, মোবারক হোসেন, কাউসার মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, রাশিদ মিয়া, জিবন মিয়া ও মোরাদ মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া বাকিরা ভৈরবের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আগানগর গ্রামের দক্ষিণ পাড়া এলাকার সরুল্লা বাড়ি ও উত্তর পাড়া এলাকার আফিল উদ্দিন মিয়ার বাড়ি ও ব্যাপারি বাড়ির লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত জিল্লুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের পাশে আনন্দবাজার নামে একটি বাজার রয়েছে। এ বাজারে নিজেদের আধিপত্য নিয়েও দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে। ২২ এপ্রিল জিল্লুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় অতিথি প্যানেলের নাম নিয়ে ঝগড়া বাদে। এসময় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মিমাংসা করেন। এ দিকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ নিয়েও এলাকায় উত্তেজনা ছিল। ৭ মে বিকালে ড্রেজার পাইফ চুরির বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একই সময় আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে শুক্কর মিয়া ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে আক্কাস মিয়ার নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় উত্তর পাড়ার আফিল উদ্দিন মিয়ার বাড়ি ও ব্যাপারি বাড়ির লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম লাঠি, সোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ দুই ঘন্টা চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ। এতে দুই পক্ষের ৫০ জন আহত হয়। আজ আবারো একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল ৭টায় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় মমতাজ চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন উত্তর পাড়া ও মধ্য পাড়ায় ২০/২৫টি বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় উভয় পক্ষের আরো ৫০ জন আহত হয়েছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, দক্ষিণ পাড়া সরুল্লা বাড়ির নেতৃত্ব দেন অত্র ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও শুক্কুল আলীসহ কয়েকজন। উত্তর পাড়া ব্যাপারি বাড়ির নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সুমন ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আক্কাস মিয়াসহ কয়েকজন।

এ বিষয়ে সরুল্লা বাড়ির শুক্কুর মিয়া, বাছির মিয়া জানান, দীর্ঘদিন যাবত দক্ষিণ পাড়ার ব্যাপারি বাড়ি ও অফিল উদ্দিন মিয়ার বাড়ির লোকজনদের সাথে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। গতকাল রাতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ নিয়ে গণসংযোগে গেলে পথিমধ্যে আক্কাস মিয়া তার লোকজন নিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে তারা স্থানীয় একটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায়। আজ তারা সকালে আনন্দ বাজারে আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে। এতে ক্ষুব্দ হয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে ব্যাপারি বাড়ির পক্ষে সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব নেই। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে পূর্ব থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল। গতকাল রাতে এরই রেশ ধরে শুক্কুর মিয়ারসহ সারুল্লা বাড়ির লোকজন মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। আজ আবার সকালে পরিকল্পিত ভাবে তারা এসে আনন্দবাজার দখল করে। বাজারের পাশে আক্কাস মিয়ার বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এদিকে মধ্যপাড়া এলাকায় বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক ডাক্তার সোয়েব রহমান জানান, সকাল আটটা থেকে রোগী আসতে শুরু করে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৪৮ জন আহত রোগীদেরকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এদের মধ্যে ১ জনকে হাতপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ও গুরুত্বর আহত মোরাদ মিয়াসহ ৮% জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ও গতকাল রাতে ৩০ জন আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন । তাদের মধ্যে ৪ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুত্বর আহত ৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দুই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে