ব্যাপক অনিয়ম আর লোকাল অর্ডার ও জনবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লোকাল অর্ডারে বেশ কয়েকজন ডাক্তার কর্মচারী নিজেদের সুবিধামতো হাসপাতালে অবস্থান করে বেতন ভাতা উত্তোলন করছে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়নকৃত ডাক্তার, টেকনিশিয়ান কর্মচারী অন্যত্র থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাতীবান্ধা উপজেলার সাধারণ মানুষ।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাতীবান্ধা হাসপাতালটি সরকারী বিধি মোতাবেক অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৬৯টি থাকার কথা থাকলেও বিদ্যমান পদসংখ্যা রয়েছে ৯৯টি এবং শুন্য পদসংখ্যা ৭০টি।
এছাড়াও বিদ্যমান ৯৯টি জনবল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধিনে বেতন ভাতা উত্তোলণ করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লোকাল অর্ডারে নিজের সুবিধাজনক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন ডাঃ মোছাঃ শাহানা আফরীন জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) বর্তমানে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, লালমনিরহাট সদরে, ডাঃ মোঃ সুজন মন্ডল মেডিকেল অফিসার (হোমিও/ইউঃ/আয়ুঃ) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পীরগঞ্জ, রংপুরে আছেন, মোঃ মকবুল হোসেন এসএসিএমও আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠগ্রাম, মোঃ মমিনুল আজিম চৌধারী মেডিকেল টেকনোজিষ্ট (ডেন্টাল) আছেন ঢাকায়, মোঃ গোলাম ফারুক আছেন সদর উপজেলা লালমনিরহাট, নিখিল চন্দ্র রায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, বর্তমানে ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল, লালমনিরহাটে আছেন। তারা সবাই বেতন-ভাতা উত্তোলণসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন হাতীবান্ধা হাসপাতাল থেকে।
শিশুর জন্য চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সিংগীমারী এলাকার মনিরা আক্তার এবং মাসুদা আক্তার বলেন, বহিঃবিভাগে আমরা সহ অনেক মহিলা তার শিশু সন্তানের চিকিৎসা নিতে এসে শিশু বিশেষজ্ঞ শাহানা আফরিনের দেখা না পাওয়ায় জরুরি বিভাগের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হচ্ছে। শুনেছি ডা.শাহানা আফরিনের প্রতিদিন বহিঃবিভাগে বসার কথা থাকলেও তিনি বাহিরে থাকায় সপ্তাহে নাকি একদিন আসেন। এতে করে হাসপাতালে আসা শিশুদের চিকিৎসা তেমন ভালো পাওয়া যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি থেকে শুরু করে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, ইসিজি, অপারেশন থিয়েটারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাব, আবার যারা আছে তাদের দক্ষতার অভাবে এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জরুরী বিভাগ, অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা প্রদান, আউট ডোর, অ্যাম্বুলেন্স সেবায় নেই পর্যাপ্ত লোকবল। এক প্রকার নাজুক অবস্থা হাসপাতালের।
তিস্তা বেষ্টিত হাতীবান্ধা উপজেলার ১২ ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়ছেন বিশাল এই জনগোষ্ঠী। ফলে দ্রুত জনবল নিয়োগ এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা লোকাল অর্ডারে বিভিন্ন জায়গায় আছেন তাদের লোকাল অর্ডার বাতিল করে সকল সংকট নিরসনের দাবি উপজেলা বাসীর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, আমি নতুন এসেছি। অনেক সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করছি, লোকাল অর্ডারের কারণে স্বাস্থ্য সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লোকাল অর্ডার বাতিলের চিঠি দিয়েছি।
যাযাদি/ এসএম