কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে এখন স্বপ্ন জয়ের আশা শাম্মি আক্তান নামের এক কিশোরীর। সে উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের রতনপুর এলাকার শাহিনুর রহমান শাহিন ও জান্নাতুল ফেরদৌসী দম্পতির মেয়ে এবং রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবার অভাবের সংসারে কোনোমতে চলতো তাদের সংসার।
অভাবের সংসারে ঠিকমতো দুইবেলা খাবার জুটতো না তাদের। এর মধ্যে মেয়ে ও এক ছেলের লেখাপড়া করা ছিলো দুঃস্বহ ব্যাপার। সবমিলে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতেন তারা। সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে চরম হতাশায় দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটে বাবা-মায়ের। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে মেয়ে শাম্মি আক্তার। এ নিয়েও চরম দুঃশ্চিন্তা বাবা মায়ের।
অভাব অনটনের মাঝেই তার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে না পারায় ৯ম শ্রেণিতে থাকতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তার বাবা-মা। কিন্তু বিয়েতে কোনোমতেই রাজি হয়নি এই কিশোরী। তার কোমলমনের ইচ্ছা সে লেখাপড়া করে বড় কিছু হবে। মেয়ে হয়েও ধরবে সংসারের হাল। অবশেষে ভেঙ্গে যায় বিয়ে। পরে প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির আওতায় চাইল্ড নট ব্রাইড প্রকল্প চালু হলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয় বিষয় ও গৃহপালিত গরু, ছাগল ও হাঁস মুরগী পালনসহ সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নেয় শাম্মি ও তার মা।
৪ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ভাতা হিসেবে পায় ১৭ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ছাগল, হাঁস, মুরগী পালন শুরু করেন এবং একটি সেলাইমেশিন কিনে বাড়িতেই শুরু করেন কাপর কাটার কাজ। পরে এই ছাগল ও হাঁস, মুরগী থেকেই হয়েছে ছোট একটি পারিবারিক খামার। যেখানে হাঁস, মুরগীর ডমি বিক্রি করে আয়ের পাশাপাশি মিটছে পারিবাড়িক পুষ্টি চাহিদাও। এভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে থাকে শাম্মি আক্তারের পরিবার। অপরদিকে সেলাইমেশিন চালিয়ে বেশ আয় রোজহগার করতে থাকেন শাম্মির মা জান্নাতুল ফেরদৌসী। এভাবে অভাবের সংসারে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে সচ্ছলতা ফিরে আসে তাদের। এদিকে শাম্মি আক্তার সিএনবি প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বার্যবিয়ে নিয়ে কাজ করতে থাকেন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ভাতার টাকা দিয়ে চালায় নিজের লেখাপড়া। অপরদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তার বাবা শাহিনুর রহমান একটি ধান কাটার মেশিন পেয়ে তারও শুরু হয় স্থায়ী আয়ের উৎস। এখন তাদের পরিবারে অভাবের রেশ কেটে আঁধারে ফুটেছে আলোর ঝিলিক। শাম্মি আক্তার জানায়, আমরা এক সময় অনেক গরিব ছিলাম। দারিদ্রতার কারণে আমার লেখাপড়া হতো না। এখন আমরা বেশ সাবলম্বী। আমরা দুইভাইবোন এখন লেখাপড়া করছি।
মহিদেব যুব সমাজকল্যাণ সমিতির ইয়ুথলিড টেকনিক্যাল অফিসার ইলিয়াস আলী বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের অসচ্ছল নারী ও কিশোরীদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে অর্থ সহায়তার মাধ্যমে সাবলম্বী হতে পরামর্শসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্টের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এখন এসব পরিবারের সবাই সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। এটাই আমাদের সার্থকতা।
যাযাদি/ এম