শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

 ২ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না সারিয়াকান্দিতে গ্রাম পুলিশ সদস্যরা

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৪
 ২ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না সারিয়াকান্দিতে গ্রাম পুলিশ সদস্যরা
ছবি: যায়যায়দিন

সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১১৮ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য প্রায় ১১ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অংশের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, যা তাঁদের বেতনের অর্ধেক। নিয়মিত কাজ করে বেতন-ভাতা না পেয়ে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়া দুই বছর ধরে হাজিরা ভাতাও বন্ধ রয়েছে।বেতনের দাবিতে দলবেঁধে তারা ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে স্ত্রী-সন্তান এবং স্বজনদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

গ্রাম পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে মোট ১১৮ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য। যার মধ্যে দফাদার হলো ১১২ জন আর মহল্লাদার হলো ১০৬ জন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী দফাদারেরা প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা ও মহল্লাদাররা ৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। মোট বেতনের অর্ধেক ইউপি থেকে দেওয়া হয় আর বাকী অর্ধেক দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু ১১ মাস ধরে ইউপি অংশের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে আছে।

এ ছাড়া দুই বছর ধরে ১২টি ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্যরা প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা পাচ্ছে না।ইউনিয়ন গুলোতে প্রতি মাসে চার দিন হাজিরার নিয়ম রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা ধরা রয়েছে। কিন্তু গত ২৬ মাস ধরে এই হাজিরা ভাতার কোনো টাকাই তারা পাননি।

গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলা চত্বরে দেখা হয় অর্ধশত গ্রাম পুলিশের সাথে। তারা জানান, বেতনের দাবিতে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলতে এসেছেন। উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ অরুন কুমারের স্ত্রী বুলবুলি রাণি জানান, স্বামীর স্বল্প আয়ের জন্য তার সংসার না চলায় তিনি গ্রাম পুলিশে যোগ দিয়েছেন। প্রতিদিন তিনি ইউনিয়ন পরিষদের তার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু গত ২৬ মাস ধরে তিনি প্রতি মাসের হাজিরা ভাতা পাচ্ছেন না।

অথচ তিনি দুর্গম চরাঞ্চল থেকে এসে অনেক টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে থানায় নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের বেতনও তিনি গত ১২ মাস ধরে পাচ্ছেন না। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে তার পরিবারের সদস্যদের জীবন কোনমতে টিকে আছে। টাকার অভাবে তার ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। কথাগুলো বলতে বলতে কাদতে থাকেন তিনি।

কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আফজাল হোসেন বলেন, পরিষদে দলিল খরচের ১ শতাংশ টাকা থেকে আমাদের বেতন ভাতা দেয়া কথা, কিছু দিয়েছে। বাকিগুলো কবে পাবো জানি না। আর হাজিরা ভাতার বিষয়টি আমাদের জন্য আরও কষ্টকর। কারণ আমাদের সপ্তাহে একদিন থানায় আসা-যাওয়া করতে একশ টাকার মতো খরচ হয়। সেই টাকা ২৬ মাস ধরে পাচ্ছি না। এই টাকা নিয়মিত পেলে আমাদের কষ্ট কিছুটা কমতো।

উপজেলা গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, গ্রাম পুলিশের সদস্যরা উপজেলা পরিষদ, ইউপিসহ গ্রাম-মহল্লায় দিন-রাত কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, কিন্তু বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তাতে করে আমাদের অনেকে ধার দেনা করে চলছেন। পরিবারের ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে ভর্তি করানো বা লেখাপড়া শেখানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। বেতন বকেয়ার থাকার কারণে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

এবিষয়ে কর্নিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দিপন বলেন, আমার ইউনিয়ন নদী পরিবেষ্টিত কেউ ঠিক মতো ট্যাক্স দিতে চাইনা। পরিষদের দলিলও খুবি বেশি হয়না যে ১% দিয়ে তাদের বেতন ভাতার টাকা পরিশোধ করবো। অন্য কোন বরাদ্দ নেই যে কোন ভাবে বেতন দিতে পারি সেখান থেকে। এইসব কারনে তারাও ঠিক ঠাক মতো কাজ করতে চাইনা। তারা আসলে খুব কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, গ্রাম পুলিশদের পরিষদের অংশের বেতন কিছু পরিশোধ করা হয়েছে। পরিষদের আয় থেকে তাদের এই বেতন দেয়া হয়। কিন্তু ৪০ বছর ধরে এই ইউনিয়নের কেউ ট্যাক্স দেন না। আয় না হওয়ায় তাদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও কিছু কিছু করে বেতন দেয়া হচ্ছে।আরও কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বললে তারা প্রায় সবাই একই কথা বলে এই প্রতিবেদকে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহারিয়ার রহমান বলেন, গ্রাম পুলিশদের সরকারি অংশের বেতন চালু রয়েছে। আর বাকি অংশ ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে দেয়া হয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদকে চাপ দিচ্ছি, বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য। তিন মাসের ভাতা দেয়াও হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিচ্ছি বেতন-ভাতার বিষয়ে। আর হাজিরা ভাতাও বকেয়া আছে। এটার জন্য সরকারি বরাদ্দ পেলে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে