শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এবার পাঁচবিবির কামারপাড়ায় নেই চিরচেনা সেই টুং টাং শব্দ

দুশ্চিন্তা ও অলস সময় কাটছে কামারদের
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
  ২৮ মে ২০২৫, ১৬:৫৮
এবার পাঁচবিবির কামারপাড়ায় নেই চিরচেনা সেই টুং টাং শব্দ
ছবি: যায়যায়দিন

আর মাত্র কয়েক দিন পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আর তাই পশু কোরবানীর জন্য ছুরি, বটি ও দা তৈরি করতে কামারদের কাছে ক্রেতাদের ভিড় করার মত দৃশ্য এবার চোখে পড়ছে না। কয়লায় লোহা পুড়িয়ে তাতে হাতুড়ি পিটিয়ে ক্রেতাদের চাহিদামত পণ্য সরবরাহ করতে প্রতিবছর ব্যস্ত সময় পার করলেও এবারে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ভাটা পড়েছে কামারপাড়ায়।

গতবারের চেয়ে তুলুনায় এবার কাজকর্ম, বেচাকেনা খুবই কম হওয়ায় চিন্তিত কামার ও ব্যবসায়ীরা। তবে তারা আশা করছেন, কোরবানীর ঈদ আসতে আরও কয়েক দিন বাকি রয়েছে। এই কয়েক দিনে ব্যবসা ভালো হবে।

1

আজ বুধবার (২৮ মে) পাঁচবিবি বাজার ও ফিচকাঘাট বাজার ঘুরে কামার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

কামারের নিকট দা ও চাকু ধার দিতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানীর ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। যার কারণে পশু কোরবানী দিতে ছুরি, বটি, দা ধার করতে কামারের কাছে এসেছি। বাড়িতেই পশু কোরবানীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে। যার কারণে সেগুলোই ধার করে নিতে আসা। এছাড়া এবার এসব জিনিসের দাম একটু বেশি। যার কারণে দু’একটি জিনিসের প্রয়োজন হলেও তা না কিনে পুরানোগুলোই ধার করিয়ে নিচ্ছি। আমার মতো অনেকেই একই কাজ করছে তারাও তাদের পুরানো জিনিসপত্রগুলি ধার করিয়ে নিচ্ছেন।’

উপজেলার ফিচকাঘাট বাজারের কামার সন্তোষ কর্মকার বলেন, গতবছরের তুলনায় এবারে কাজকর্ম খুবই কম। লোহার দাম বেশি হওয়ায় মানুষ নতুন জিনিসপত্র কম কিনছেন। তারা পুরানো জিনিসপত্র যেগুলো রয়েছে সেগুলো ধার করে নিতে আসছেন। এছাড়া আগে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও হোটেলগুলোতে মানুষ খড়ি পুড়িয়ে রান্না করতেন। যার কারনে কম দামে কয়লা কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন মানুষ গ্যাসে রান্না করায় সেই কয়লা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ‘এদিকে মৌসুম শুরু হওয়ায় কয়লার চাহিদা বাড়ায় কয়লার দাম বেড়েছে। গতবছর যে কয়লা প্রতিডালি ৫০-৬০ টাকা কিনেছিলাম। এবার সেই কয়লা দাম বাড়িয়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা করে নিচ্ছে। যার কারনে ছুরি দা বটি হাসুয়া ধার দেওয়ার মজুরি একটু বেশি নিচ্ছি। তবে বেশি মজুরি চাইলে অনেকে তর্ক করেন। বছর জুড়ে অলস সময় বসে থাকলেও এই কোরবানীর ঈদের সময় বাড়তি কাজের চাপ থাকে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। এবার কাজের তেমন চাপ নেই। নতুন জিনিসপত্র তৈরি কম করছে। পুরানোগুলিই ধার করে নিতে আসছে।’

সন্তোষ কর্মকার বলেন, ‘বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না। আবার অন্যে কোন কাজকর্মও ঠিকমত করতে পারিনি। সারাদিনে যে আয় হয় তা দিয়ে আমি, স্ত্রী ও নাতিকে নিয়ে কোনো রকম চলে যায়। তবে এখন যে আয় হয় সেই আয় দিয়ে দুবেলা ভাতেই জোটে না। আমার একমাত্র মেয়ে সাগরিকা কর্মকার মারা যাওয়ার পর এতিম নাতিকে স্কুলে পাঠাতে পারি না। বর্তমানে আমার নাতির লেখাপড়া বন্ধ আছে। মাঝে মাঝে কাজ বেশি থাকলে নাতি কাজের সহযোগিতা করে থাকে।’ বুধবার দুপুরে পাঁচবিবি বাজারে লোহার তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা রাসেল মন্ডল জানান, ‘সামনে কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এখন পর্যন্ত একটি ছুরি, দা,বটিও বিক্রি করতে পারিনি। কারণ মানুষ এখন ধান কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত। শুক্রবার এখানকার হাটবার আছে। আশা করছি ওই দিন বেচাকেনা ভালো হবে। গতবছরের তুলনায় এবারে লোহার দাম একটু বেশি। সেই সঙ্গে কয়লার দামও বেশি হওয়ায় কামারকে মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। এর ফলে ছুরি দা বটির দাম একটু বেশি। তাই মানুষ এবার পুরানো জিনিসপত্রই বেশি ব্যবহার করছে।

তিনি আরও বলেন, হাঁড় কাটা দা চারশ’ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। আর মাংস কাটার বড় দা ২শ’ ও ছোট দা ১৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরু জবাই করা ছুরি ১৫০ থেকে ৪শ’ টাকা পিচ বিক্রি করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে