শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রায়পুরের মেঘনার চরে জমি ফিরে পেলেন শতাধিক ভূমি মালিক

১২শ’ একর জমিতে ধান চাষ শুরু
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
  ২৮ মে ২০২৫, ১৯:০০
রায়পুরের মেঘনার চরে জমি ফিরে পেলেন শতাধিক ভূমি মালিক
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনার চরে জমি ফিরে পাওয়ায় দোয়ার আয়োজন করেন প্রকৃত ভূমি মালিকরা: ছবি যায়যায়দিন

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ৯ মাস লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা দুর্গম চরের জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। মেঘনার ভাঙনের শিকার ভিটামাটি হারানো হাজারও মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিল দুর্গম চরাঞ্চলে। অবশেষে ৯ মাস পর শতাধিক জমির মালিক তাদের ১২শ’ একর আবাদি জমি ফিরে পান। এরপর তারা আজ বুধবার (২৮ মে) থেকে ওই সব জমিতে ধান চাষ শুরু করেছেন।

এ উপলক্ষে আজ সকালে উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউপির মেঘনার চরের বায়রাঘাট এলাকায় কানিবগারচর জামে মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়। এ সময় রায়পুরের চরআবাবিল ইউপির হায়দরগন্জের প্রখ্যাত আলেম মুফতি স্যাইয়েদ তাহের জাবেরি আল মাদানির নেতৃত্বে দোয়া অনুষ্ঠানে শাহিদা বেগম, সেলিম গাজি, অদুদ খান, আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, মোঃ আবদুল কুদ্দুস, সুমন হাওলাদার, মোস্তফা বেপারি, মোহাম্মদ আলী মোল্লা, জাকির হোসেন হাওলাদার, মো. লিটন ও কামালসহ শতাধিক জমির মালিক উপস্থিত ছিলেন।

1

কৃষক লিটন হোসেন ও আনোয়ার হোসেন জানান, উত্তর ও দক্ষিন চরবংশী ইউপির মেঘনার চরের প্রায় ৬ হাজার সরকারি খাস জমি গত ১৭ বছর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ'লীগ নেতা আলতাফ মাস্টারসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর দখলে ছিল। এরপর গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সেই জমি দখলে নেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা।প্রকৃত মালিকরা এসব জমি উদ্ধার করার অনেক চেষ্টা করলেও দেওয়া হয়নি।

তারা আরও জানান, গত বছরের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রায়পুরের মেঘনার চর, মাছঘাট ও বাজার দখলকে কেন্দ্র করে তিন দফায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শামিম গাজিসহ তার অনুসারী এবং উত্তর চরবংশী ইউপির বিএনপির সহসভাপতি ফারুক গাজীসহ তার অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দলীয় কার্যালয়, মাছের আড়ত, বসতঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। একইসঙ্গে দুটি মোটর সাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ২২ ডিসেম্বর রায়পুরের সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়ার নির্দেশে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দু সংবাদ সম্মেলন করে উত্তর চরবংশী ইউপির বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের সকল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

গত ৭ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক কবিরাজ ও উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব শামীম গাজী গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ সাইজ উদ্দিন নামে এক বিএনপি কর্মী প্রাণ হারান। তার ৭দিন পর আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জসিম উদ্দিন ব্যাপারী ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনার তিনদিন পর নিহত সাইজ উদ্দিনের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে বিএনপি নেতা ফারুক কবিররাজকে প্রধান করে ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও ১৮৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

উল্লেখ্য, রায়পুরের উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউপির মেঘনার চরাঞ্চলের এসব জমিতে ভূমিহীনদের সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা থাকলেও পুনর্বাসনের নামে একশ্রেণির অসাধু ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই ভূমি চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে। এই জমি উদ্ধারে জমির মালিকরা বিক্ষোভ, সভা-সবাবেশ, থানা, সেনা ক্যাম্প, ইউএনও, সহকারি কমিশনার ভূমি ওআদালতে আবেদন ও মামলা করেছিল।

দক্ষিন চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজি ও উত্তর চরআবাবিল ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর দুলাল হাওলাদার বলেন, ‘আগে দখলে ছিল আ’লীগের কয়েক নেতার। ৫ আগস্টের পর গত ৯ মাস ধরে চর বিএনপি নেতাদের দখলে। এখন কিছু অংশ জমি প্রকৃত জমির মালিকরা দখলে নিয়ে চাষ শুরু করেছেন।’

উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, মেঘনার বুকে জেগে ওঠা সরকারি খাস জমি এতোদিন আ’লীগ নেতাদের দখলে ছিল। বর্তমানে এসব চরে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ একর সরকারি খাস সম্পত্তি দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা।

রায়পুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন জানান, চরাঞ্চলের কয়েকশ’ একর সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আমার সম্পত্তি এতদিন আমার দখলেই ছিল। সরকার পতনের পর উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউপির বিএনপির নেতারা চরগুলো দখলে নিয়ে যায়।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম মিঠু ও সদস্য সচিব শফিকুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, মেঘনার নদীর পাড়ে জেগে ওঠা হাজার হাজার একর চরের জমি যাদের দলিল আছে, তারাই ভোগ দখল করবেন। বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের কোন নেতাকর্মী অন্যায়ভাবে জড়িত থাকলেই দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আধিপত্ত্ব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় ওই ইউনিয়নের বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের সকল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার জানান, শুধুই রায়পুরের মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চর নয়, চারটি উপজেলার আওতাধীন চরগুলো প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে চরগুলোতে পরিদর্শনে যাব। চরাঞ্চলে সরকারের যে খাস সম্পত্তি কোন ব্যাক্তি অনুমতি ছাড়া ভোগ দখল করতে পারবেন না। করলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে