শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর 'মাইগ্রেন'

নতুনধারা
  ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

শিশুদের মাথাব্যথার একটি বেদনাদায়ক ব্যাপার হচ্ছে অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষক ব্যথার সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিতে চান না। ছোটদের আবার কিসের মাথা ব্যথা, পড়ালেখা না করার ফন্দি, এক ধরনের দুষ্টামি। এসব ভেবে তারা শিশুকে দমিয়ে রাখতে চান। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যার মাথা আছে, তার ব্যথাও থাকতে পারে। শিশুদেরও তাই মাথাব্যথা হতেই পারে।

মাথাব্যথার কিছু প্রাথমিক কারণের মধ্যে অন্যতম হলো 'মাইগ্রেন'। মাইগ্রেনের লক্ষণ বোঝানোর সময় আমরা 'অরা' (অটজঅ) নামে একটি শব্দ ব্যবহার করি। এর বাংলা বোঝানো একটু কঠিন। তীব্র ব্যথার সময় রোগী হয়তো একটি 'ঘোরে'র (দৃষ্টি কিংবা অনুভূতির ঘোর) মধ্যে থাকে। অথবা মনে হয় তাকে ঘিরে এক অব্যক্ত 'আভা' ছেয়ে আছে। এই 'আভা' বা, 'ঘোর'ই হচ্ছে 'অরা'।

'অরা'বিহীন মাথাব্যথাও হতে পারে এবং এটিই সংখ্যায় বেশি। মাথার একদিক (শিশুদের উভয়দিকও হতে পারে) জুড়ে সূক্ষ্ণ কম্পমান বা ঝাঁকুনি দিয়ে ব্যথা শুরু হয়ে ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা (অনেক শিশুদের ১-২ ঘণ্টাও থাকে) পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অনেক সময় বমিভাব বা বমি, আলো এবং শব্দ অসহ্য লাগতে পারে। হাঁটা চলা, দৌড়, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে ব্যথা বাড়তে পারে।

দৃষ্টি'র 'অরা' হলে মনে হয় যেন চারদিকে নানা রঙের আলোর ঝলকানি হচ্ছে। ব্যথা চলে গেলে ঝলকানিও উধাও হয়ে যায়। এ ছাড়া আঁকাবাঁকা লাইন, উজ্জ্বল বিন্দু এসব 'অরা'ও হতে পারে।

অনুভূতির 'অরা' হলে শিশু ভাবে তার শরীরে যেন পতঙ্গ হেঁটে চলছে। পরে একধরনের ঝিমঝিম ভাব আর অসারতা পেয়ে বসে। আরেক ধরনের 'অরা'তে রোগীর কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়, অথচ সে কিন্তু সব শুনছে। লৌকিকভাবে এটাকে অনেকে বলে 'বোবায় ধরা'। মাইগ্রেন ব্যথার একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি বারবার ফিরে আসতে পারে। উপরোলিস্নখিত লক্ষণগুলো ছাড়াও অনেকের মাথা ঘুরানো, কথা জড়িয়ে যাওয়া, হাঁটতে গিয়ে হেলে পড়া, পেটে ব্যথা, অবশ অনুভূতি এসব নিয়েও মাইগ্রেন প্রকাশ পেতে পারে।

চিকিৎসক রোগের ইতিহাস, শারীরিক লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হন এটি মাইগ্রেন কিনা। অনেক সময় মাথায় আঘাত, মস্তিষ্কের অন্য কোনো সমস্যা, প্রদাহ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চোখ বা সাইনাসের সমস্যার জন্যও মাথাব্যথা হতে পারে, যেগুলো আসলে মাইগ্রেন নয়। কিছু ক্ষেত্রে মাথার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগতে পারে।

তীব্র মাথাব্যথা কমানোর জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে একেক রোগীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিবেচনায় ওষুধ ভিন্ন হতে পারে। একজন যেই ওষুধে উপকার পেয়েছেন, সেই ওষুধ আরেকজনের জন্য অকার্যকর হতে পারে। চিকিৎসকের দক্ষতা এ ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করে। তবে শিশুদের জন্য কিছু নিয়ম এখানে জানাচ্ছি, যেটা উপকারে লাগতে পারে।

১। স্কুলে থাকাকালীন আপনার সন্তান কি মাথাব্যথা বা অন্য সমস্যা হলে শিক্ষককে জানাতে লজ্জা বা ভয় পায়? শিক্ষক কি সমস্যার গুরুত্ব দিতে অপারগ? তাহলে অবশ্যই এই ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলুন।

২। বাচ্চার এই ব্যথাকে 'দুষ্টামি', 'বাজে অভ্যাস' বলে উড়িয়ে দেবেন না।

৩। কোনো বেলার খাবার বাদ পড়া, পানিশূন্যতা, কম বা বিঘ্নিত ঘুম এই ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

৪। প্রচুর পানি পান করা, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন, নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া খুবই জরুরি।

৫। পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। যাদের পড়ালেখার চাপ বেশি তাদের ঘুমের স্বার্থে ফেসবুক, গেমস, মোবাইল, ইন্টারনেট, টেলিভিশন এসবের পেছনে সময় কাটানো বাদ দিতে হবে।

৬। ক্যাফেইন মাইগ্রেন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই কফি, কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে। ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল চর্বি, চকলেট, দুধজাতীয় খাবার পরিহার করতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে।

৭। ইদানীং ধূমপান এবং মদ্যপানের হার অতিরিক্ত বেড়ে যাচ্ছে। শুধু মাইগ্রেনের জন্য নয়, এই দুটি জিনিস চিরতরে বাদ দিতে হবে।

মাথাব্যথা অনেক সময় বড় কোনো সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক এবং সংবেদনশীল হতে হবে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে, বিশেষ করে জাতীয় স্নায়ুরোগ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগরে শিশুদের মাথাব্যথার চমৎকার চিকিৎসা হয়। তাই এই সমস্যা থাকলে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করুন।

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63168 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1