শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
নারী নিযার্তনের মামলা

কতটা সত্য কতটা মিথ্যা?

নতুনধারা
  ০৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশে নারী নিযার্তনের প্রচুর মিথ্যা মামলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের মতে, নারী নিযার্তনের মামলার আশি শতাংশরই কোনো প্রমাণ

মেলেনা। পুলিশের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদশর্ক সহেলী ফেরদৌস বলেন, নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনের মামলায় জামিন পাওয়া সহজ নয় বলে অনেকে এর অপব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, ‘যারা বানোয়াট মামলা দেন তাদের জন্য নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে একটা বড় সুবিধা হল যে এই আইনে জামিন পেতে বেগ পেতে হয়। আগে আইনটি জামিন অযোগ্য ছিল। এখন কিছু ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া যায়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পযর্ন্ত অনেক ক্ষেত্রে আসামিকে জেলে থাকতে হয় না হয় অনেকে পালিয়ে থাকে। জামিন কঠিন হওয়ায় অনেকে এটি অপব্যবহার করেন। খুব দ্রæততম সময় এই মামলায় হয়রানি করার একটা সুযোগ রয়েছে।’

তিনি আরো বলছেন, ‘এই আইনে মামলা খুব দ্রæত নিষ্পত্তি হয়Ñ ৯০ দিনের মধ্যে। এ জন্য মামলার সংখ্যা বেড়ে যায়। মামলা করার পর প্রতিপক্ষ যে একটা চাপে থাকে, হেনস্তা হয় সে কারণে যাদের সঙ্গে বিবাদ তারা হয়তো আপোষ করে ফেলে।’

সহেলী ফেরদৌস বলছেন, বাংলাদেশে জমিজমা সংক্রান্ত মামলাই সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে। তবে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবেও অনেক সময় নারী নিযার্তনের মামলা জুড়ে দেয়া হচ্ছে, বলছিলেন পুলিশের এই কমর্কতার্।

বাংলাদেশে পুলিশের দেয়া হিসেবে ২০১৭ সালে দেশব্যাপী ১৫ হাজারের কিছু বেশি নারী নিযার্তনের মামলা হয়েছে। যারমধ্যে প্রায় চার হাজার মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্তে ঘটনার কোনো প্রমাণ পায়নি বলে মামলা বিচার পযর্ন্ত গড়ায়নি। অথবা ঘটনা মিটমাট হয়ে গেছে বলে মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে প্রচুর মামলা রয়েছে যাতে পরিবারের একজন দোষী হলেও পুরো পরিবারকে জড়ানো হয়েছে।

পুলিশের হিসেবে ২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে আট হাজার নারী নিযার্তনের মামলার রায় হয়েছে। মাত্র পাঁচশ সাতাশটি মামলায় অভিযুক্তর সাজা হয়েছে। আর বাদবাকি সবগুলোতে অভিযুক্ত খালাস পেয়েছেন। কিন্তু তার অথর্ কি এত বিপুল পরিমাণে নারী নিযার্তনের মামলার সবগুলোই মিথ্যা মামলা?

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকদের একজন নীনা গোস্বামী বলছেন, বিচার চলাকালীন সময় নানা সংস্থার কাযর্ক্রম, বিচার ব্যবস্থার দীঘর্সূত্রিতা ও অন্যান্য দুবর্লতার কারণে মামলার অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলছেন তার অথর্ এই নয় যে মামলাগুলোই মিথ্যে। তিনি বলছেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। নারীরা সহজে মামলাটা করতেই চায়না। সেই মামলা বিভিন্ন পারিপাশ্বির্ক কারণে যদি প্রমাণিত না হয় তার মানে এর অথর্ এই না যে এটি মিথ্যা মামলা।’ তিনি বলে, ‘অনেক সময় সাক্ষী অভাব থাকতে পারে, তদন্তে ত্রæটি থাকতে পারে, হয়ত ঠিকমতো আলামত সংগ্রহ হল না এসব ত্রæটি বিচ্যুতির দায় তো নারীর না। নিযাির্তত নারীর জন্য ধীরে ধীরে কিন্তু বিচার পাওয়ার জায়গাটুকু সংকুচিত হয়ে যায়। মামলা ফাইল হওয়ার পর বিচার পাওয়া পযর্ন্ত যেতে একটা দীঘর্সূত্রতা আমাদের দেশে আছেই।’

কিন্তু বিচারকদের সভায়ও নানা সময় নারী নিযার্তন স¤পকির্ত অসংখ্য মামলা নি®পত্তি না হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে এগুলোর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আর স¤প্রতি বাংলাদেশে যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা নিয়ে জাতীয় সংসদে নতুন একটি আইনের খসড়া উত্থাপন করা হয়েছে। যা কিছুদিন আগে মন্ত্রীসভায় অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে এমন মিথ্যে মামলা করল পাঁচ বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে মানবাধিকার কমীর্ নীনা গোস্বামী এই আইনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘এমন আইন হলে আগে যাও কিছু নারী মামলা করে সাহসিকতার পরিচয় দিতেন এখন তারা আর তাও করতে চাইবেন না। কারণ বিচার চাইতে হলে নারীকেই কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।’

বিবিসি বাংলা অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে