শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উগ্র ধর্মান্ধতা

অবশেষে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভু্যদয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা এলো, ইংরেজরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলো। কিন্তু ওই যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, মানুষে মানুষে বিভাজন তার কী হলো? ভারত বিভাগ তো আমরা মেনেই নিয়েছি এবং তা জোড়া লাগানোর কোনো প্রস্তাব আদৌ আমরা মানতে রাজিও নই। কিন্তু আমরা মনেপ্রাণে কামনা করি, দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করি, যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উগ্র ধর্মান্ধতা প্রভৃতি প্রতিরোধের জন্য এবং সাম্প্রাদায়িকতার সমাধি রচনার জন্য সেদিন দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল সেই আকাঙ্ক্ষার, সেই প্রতিশ্রম্নতির পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই।
রণেশ মৈত্র
  ১০ জুন ২০১৯, ০০:০০

ভবিষ্যতের খবর তো জানি না- ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা নই বলে তা বলতেও পারব না। বর্তমানটা তো দেখছি ভালোভাবেই তার বিভীষিকা মনকে অনেকাংশেই উদ্বেগাকুল করে তুলছে যে কোনো দেশপ্রেমিক বাঙালির। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না- একটি মৌলবাদী উত্থান-সাম্প্রদায়িকতার বিষদাঁত আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। না, এগুলো প্রত্যাশিত ছিল না আদৌ-অন্তত আমাদের শত সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুক্তিযুদ্ধের মতো সশস্ত্র লড়াইয়ে সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনকারী এই স্বাধীন মাতৃভূমিতে। জোর করে অন্তর দিয়ে বলতে পারছি কই 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি-সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি"? তবুও দেহের সমগ্র শক্তি উজাড় করে দিয়ে এবং মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে, সব আন্তরিকতার পরশ বুলিয়ে অতীতের মতোই দৃঢ়তার সঙ্গেই বলছি, 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গদপি গরীয়সী' অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চাইতেও পবিত্র। কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায়, তবুও কেন তা হলে আমাদের মাতৃভূমির এমন এক বিপর্যস্ত চেহারা আজ আমাদের দেখতে হচ্ছে স-করুণ দৃষ্টিতে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পরেও কেন প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে আমাদের গৌরবমন্ডিত দেশটি ক্রমশ্চয়ই পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন গন্তব্যের দিকে? তাহলে কি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে আমরা সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি- নাকি তখন আমরা বা আমাদের পূর্বসূরিরা এমন কোনো কিছু করেছিলেন যার পরিণতিতে আজকের এমন একটি বর্তমান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে? সেই কবে মৃতু্যবরণ করেছিলেন তৎকালীন বিশ্বজয়ী নেতা, ভারতবর্ষেও স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অগ্রদূত মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী। তিনি ছিলেন 'মাহাত্মা গান্ধী' হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিত-আর দেশের অভ্যন্তরেও 'বাপুজী' বা 'গান্ধীজী' হিসেবে। না, তার কোনো স্বাভাবিক মৃতু্য ঘটেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছিল প্রকাশ্য দিবালোকে-পিস্তলের গুলিতে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে-কাপুরুষের মতো অতর্কিতে। গান্ধীজীকে হত্যা করেছিল নাথুরাম গডসে নামক একজন উগ্র মৌলবাদী সংগঠন, হিন্দু মহাসভায় লেলিয়ে দেয়া কর্মী। বাংলাদেশের বিরাজমান প্রেক্ষাপটে মহাত্মা গান্ধীর এই নির্মম হত্যালীলা এবং তার কারণাদিসহ একদিকে গান্ধীজীকে নতুন করে ভাবা-অন্যদিকে মৌলবাদীদের নিষ্ঠুর পশুত্বকে ঠিকমতো উপলব্ধি করা বাংলাদেশসহ গোটা উপমহাদেশের জন্যই নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা অর্জন করেছে। সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিকে মেনে নিয়ে ব্রিটিশ শাসনবিরোধী, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট 'মুসলমানদের স্বাধীন আবাসভূমি' হিসেবে পাকিস্তান নামক অন্য একটি স্বাধীন সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের উদ্ভবকে মেনে নিয়েছিল। অখন্ড ভারতবর্ষ ওই দিন বিভক্ত হলো, দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভু্যদয় ঘটলো দুটি পৃথক জাতীয় পতাকা দুদেশে উত্তোলন হলো। পাকিস্তান নামক নবীন রাষ্ট্রটি ছিল মুসলিম লীগের দাবি। তা পূরণ হলো- বিনা লড়াইয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সামান্যতম বিরোধিতা না করে। ইংরেজরাও চেয়েছিল এ ধরনের বিভক্ত ভারতবর্ষই যাতে দুটি দেশের সম্পর্ক কদাপি মধুর বা সৎ প্রতিবেশী সুলভ না হয় যাতে তাদের মধ্যে সদা সর্বদা বিরোধ লেগেই থাকে- যুদ্ধ প্রস্তুতি এবং সাম্প্রদায়িক হানাহানি নিয়ে। যাতে রাষ্ট্র দুটি ব্যস্ত থাকে এবং তার ফলে তারা যেন সদা-সর্বদা বিদেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে তাদের উন্নয়নের জন্য তাদের সামরিক সাজ-সরঞ্জামের জন্য এবং সর্বোপরি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। এই উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ভারতবর্ষকে খন্ডিত করে বিবদমান রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে এবং পরে তাদের মধ্যে নানাবিধ ঝগড়া-বিবাদ বাঁধিয়ে রেখে ইংরেজরা তাদের প্রভুত্ব এবং প্রভাব উভয় রাষ্ট্রের উপরই বজায় রাখতে সক্ষম হবে ভেবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মুসলিম লীগের ধর্মান্ত্রিত রাজনীতি এবং কংগ্রেসের মধ্যকার কট্টর হিন্দুত্ববাদী অংশের নেতৃত্বের মাধ্যমে ভারতবর্ষের নানাস্থানে যেমন উত্তর ভারত, বিহার, পাঞ্জাব ও বাংলায় চলিস্নশের দশকে দফায় দফায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে লাখ লাখ হিন্দু-মুসলমান নর-নারী-শিশু হত্যা, উভয় সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী একে অন্যের দ্বারা ধর্ষণ, লুটপাট, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির মাধ্যমে এমন একটি ভয়াবহ পরিবেশ রচনা করা হলো যার ফলে একনিষ্ঠ অসাম্প্রদায়িক নেতা মহাত্ম গান্ধীসহ কংগ্রেসের আরও অনেক অসাম্প্রদায়িক নেতা এবং পরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিও মনে করেছিলেন যে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে হলেও, ধর্মের ভিত্তিতে হলেও, ভারত বিভাগ এবং দুটি পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টি করা তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নেয়া ছাড়া এই ক্রমবর্ধমান দাঙ্গা, প্রাণহানি ও সাম্প্রদায়িকের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার আর কোনো বিকল্প নেই। এমনকি, তারা এও ধরে নিয়েছিলেন, দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই একদিকে যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, তেমনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ বা শেষতক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিই বা কেন শান্তিকামী-কল্যাণকামী তৎকালীন কোটি কোটি মানুষও সম্ভবত এমনটিই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সীমান্ত গান্ধী আবদুল গফফার খান, কিষাণ চন্দরসহ বহু রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী তখন এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করে বলেছিলেন সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত অবাস্তব ও আত্মঘাতী। অবশেষে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভু্যদয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা এলো, ইংরেজরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলো। কিন্তু ওই যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, মানুষে মানুষে বিভাজন তার কী হলো? ভারত বিভাগ তো আমরা মেনেই নিয়েছি এবং তা জোড়া লাগানোর কোনো প্রস্তাব আদৌ আমরা মানতে রাজিও নই। কিন্তু আমরা মনেপ্রাণে কামনা করি, দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করি, যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উগ্র ধর্মান্ধতা প্রভৃতি প্রতিরোধের জন্য এবং সাম্প্রাদায়িকতার সমাধি রচনার জন্য সেদিন দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল সেই আকাঙ্ক্ষার, সেই প্রতিশ্রম্নতির পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। এখন ফিরে আসি মহাত্মা গান্ধী প্রসঙ্গে- লক্ষ্য করা যায় প্রয়োজন, তিনি অভিহিত হলেন ভারতের 'ঋধঃযবৎ ড়ভ :যব ঘধঃরড়হ' হিসেবে, কংগ্রেসে এবং গোটা ভারতবর্ষসহ বিশ্বের একজন নন্দিত নেতা হিসেবে, সেই মহাত্মা গান্ধী নিহত হলেন ভারতবর্ষের মাটিতে প্রকাশ্য দিবালোকে এবং ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের (১৫ আগস্ট ১৯৪৭) মাত্র 'ছ' মাসেরও কম সময়ের মধ্যে। গভীরভাবে ধর্ম বিশ্বাসী, এবং সকল ধর্মবিশ্বাস, ধর্ম ও ধর্ম বিশ্বাসীদের প্রতি অসাধারণ শ্রদ্ধাশীল, বর্ণবাদ, গোষ্ঠীবাদ এবং এমনকি ভোগবাদবিরোধী এই জননেতা প্রাণ হারালেন একজন 'হিন্দুর' হাতেই। ওই হিন্দু, যার নাম নামুরাম গজস, কিন্তু ব্যক্তি গান্ধীজীকে আদৌ অশ্রদ্ধা করত না, বরং ছিল তার প্রতি গভীরভাবেই শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু সে ও তার দল হিন্দু মহাসভা ছিল অসাম্প্রদায়িক আদর্শের এবং হিন্দু-মুসলমানের সৌহার্দ্যের-সম্প্রীতির, ঘোরতর বিরোধী এবং সে কারণেই গান্ধীজী ছিলেন হিন্দু মহাসভা রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আরএসএস) প্রভৃতি নামক উগ্র হিন্দু মৌলবাদী দলের আদর্শিক শত্রম্ন। তাই তারা তাকে হটিয়ে দিল এই পৃথিবী থেকে। প্রমাণিত হলো যে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর সঙ্গে আপসেে মাধ্যমে যেমন সাম্প্রদায়িকতার আসন ঘটানো যায় না- তেমনি যায় না সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করতে। বরং এমন আপস আত্মঘাতী পরিণতিই ডেকে আনে নির্মম সত্য হলো- তার প্রথম শিকারই হলেন মহাত্মা গান্ধী, যাকে নিয়ে আজও সভ্য দুনিয়ার উধৎধ অহংকারের সীমা-পরিসীমা নেই। শুধু তাই নয় এহেন আদর্শ বিসর্জনতুল্য আপসের মাধ্যমে ওই উগ্র মৌলবাদী শক্তিগুলো সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করল হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘসহ (আরএসএস) আরও আরও হিংস্র মৌলবাদী দলের বিস্তার লাভ হলো এবং বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এসে তারা অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও দখল করেছিল। আজও তারা ভারতের মাটিতে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং যথেষ্ট প্রভাব ও বিত্তশালী একটি দল। সর্বাপেক্ষা পরিতাপের বিষয়, মহাত্মা গান্ধীর জন্ম যে প্রদেশে সেই গুজরাটে অপ্রতিহতভাবে রাজত্ব করে চলেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং দাঙ্গার প্রশ্রয় দানকারী নেতা নরেন্দ্র মোদিও নেতৃত্বাধীন এক প্রাদেশিক সরকার। তবে কি গান্ধীজী জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই? না তা আদৌ সত্য নয়। মাহাত্মা সব মহল কর্তৃক সেভাবে নন্দিত কিন্তু তিনি মন্ত্রিত্ব বা কোনো রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা গ্রহণ করেননি। ছিলেন সাধারণ একজন। কোনো সম্পত্তি তার ছিল না, বিত্তও না, জলুস না কিন্তু বিশ্বজনীন মানবতার পূজারী হিসেবে, অজেয় একজন মানবতাবাদী হিসেবে, তিনি বিশ্বব্যাপী ঈর্ষণীয় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। লুই ফিসারের প্রখ্যাত বই গধযধঃসধ এধহফযর-ঐরং খরভব ধহফ ঞরবং-এ ঐ প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক লিখেছেন, 'ণবঃ সবহ রিঃয মড়াবৎহসবহঃং ধহফ ধৎসরবং নবযরহফ :যবস ঢ়ধরফ যবৎনধমব :ড় :যব ষরঃঃষব নৎড়হি সধহ ড়ভ ংবাবহঃু ষরমযঃ. ঞযব ওহফরধহ ধঁঃযড়ৎরঃরবং ৎবপবরাবফ ৩,৪৪১ সধংংধমবং ড়ভ ংুসঢ়ধঃযু, ধষষ ঁহংড়ষরধঃবফ, ভৎড়স ভড়ৎবরমহ পড়ঁহঃৎরবং.' গধযধঃসধ এধহফযর ধিং :যব ংঢ়ড়শবংসধহ ভড়ৎ :যব পড়হংপরবহপব ড়ভ ধষষ সধহশরহফ. চড়ঢ়ব ঢ়রড়ঁং, :যব উধষধর খধহধ ড়ভ ঞরনবঃ, ঞযব অৎপযনরংযড়ঢ় ড়ভ ঈধহঃবৎনঁৎু, :যব পযরবভ জড়ননু ড়ভ খড়ঁফবৎ, ঈযরধহম কধরংযবশ. ঞযব ঢ়ৎবংরফবহঃ ড়ভ ঋৎধহপব, রহফববফ :যব ঢ়ড়ষরঃরপধষ যবধফং ড়ভ ধষষ ঁহরসঢ়ড়ৎঃধহঃ পড়ঁহঃৎরবং ধহফ সড়ংঃ সড়ৎব ড়হবং ঢ়ঁনষরপরঃু বীঢ়ৎবংংবফ :যবরৎ মৎড়ঁঢ় ড়ভ এধহফর্যথং ঢ়ধংংরহম. (বঙ্গানুবাদ: তবুও সরকার অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এবং তাদের পিছনে সমবেত বাহিনীরা ৭৮ বছর বয়স্ক এই ক্ষীণকায় পীতাঙ্গ ব্যক্তির মৃতু্যতে তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। ভারত সরকার পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই ৩,৪৪১টি স্বতঃস্ফূর্ত শোককামী পেয়েছিলেন। পোপ, তিব্বতের দালাই লামা, ক্যাস্টাববেরির আর্চবিলপ, লন্ডনের চিফ রাফী, চীনের চিয়াংকাইসেক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রেরই প্রধানরা এবং পৃথিবীর প্রায় সব ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর প্রধানরাও গান্ধীজীর মৃতু্যতে শোকবাণী পাঠিয়েছিলেন। আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন- 'ওহ ড়ঁৎ :রসব ড়ভ ঁঃঃবৎ সড়ৎধষ ফবপধফবহপব, যব ধিং :যব ড়হষু ংঃধঃবং সধহ ড়ভ ংষধরহফ ভড়ৎ ধ যরমযবৎ যঁসধহ ৎবষধঃরড়হংযরঢ় রহ :যব ঢ়ড়ষরঃরপধষ ংঢ়শবৎব.' অর্থাৎ 'আমাদের এই নৈতিক অবক্ষয়ের চরম লগ্নে, তিনিই (গান্ধী) দাঁড়িয়েছিলেন রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নত এক মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে।' তার মৃতু্যতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গভীর শোক প্রকাশ করে। সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতিনিধি আঁদ্রে প্রোমিকো নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, 'এধহফযর ধিং ড়হব ড়ভ :যব ড়ঁঃংঃধহফরহম ঢ়ড়ষরঃরপধষ ষবধফবৎং ড়ভ ওহফরধ যিবৎব হধসব ধৎব ধষধিুং যব ঢ়রহশবফ ধৎঃয :যব ংঃৎধমমষবং ড়ভ :যব ওহফরধ ঢ়বড়ঢ়ষব ভড়ৎ :যবরৎ হধঃরড়হধষ ষরনবৎধঃরড়হ' অর্থাৎ 'গান্ধীজী ছিলেন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিশিষ্ট একজন- যার নাম চিরকাল ভারতের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। জাতিসংঘ তার মৃতু্যতে তার পতাকা অর্ধনমিত করে। লুই ফিসারে লিখেছেন, 'ঐঁসধহরঃু ষড়বিৎ রঃং ভষধু' অর্থাৎ 'মানবতা তার পতাকা অর্ধনিমিত করেছিল।' গোটা ভারতবর্ষ সেদিন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল। সারাটি দেশজুড়ে অসংখ্য বিশাল বিশাল শোক সমাবেশ, সকল মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদুয়ারসহ সব প্রার্থনালয়ে স্বতঃস্ফূর্ত প্রার্থনা সভা, দেশজুড়ে গান্ধীজীর অতি প্রিয় রামধুন গীত, 'ঈশ্বর আলস্নাহ্‌ তেরে নাম, সবকো সুমতি দে ভগবান' গীত হয়েছিল। বহু বাড়িতে লাখো-কোটি মানুষ উপবাস থেকেছে, রোজা পালন করেছে ইত্যাদি। আমার চোখের সামনে সেই দিনের পাবনার চেহারাটি মনে আছে। বেতার যোগে (তখন তো টেলিভিশন আসেনি) সঙ্গে (সন্ধ্যার পর) সব দোকান-পাট স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়, পরদিন পাবনা শহরের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষিত হয়, পূর্ণ হরতাল পালন করা হয় এবং হাজার হাজার মানুষের এক বিশাল শোক মিছিল সারা পাবনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পরিভ্রমণ করে। পাকিস্তানি শহর পাবনায় কেন, বাংলাদেশের পাবনাতেও এত বড় এবং স্বতঃস্ফূর্ত শোক সমাবেশ আজতক আমি আর দেখিনি। পরে যেদিন গান্ধীজীর মৃতু্যতে নাগরিক শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় পাবনা টাউন হল ময়দানে তাও ছিল এক অনন্য সাধারণ শোক সমাবেশ। নির্মিত বিশেষ উঁচু মঞ্চে স্থাপিত গান্ধীজীর ছবি, দলমত নির্বিশেষে প্রতিনিধিত্বশীল সব স্তরের মানুষের পুষ্পার্ঘ্য প্রদান, গীতা, কোরআন, বাইবেলসহ সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, নেতাদের ভাষণ, শিল্পীদের পরিবেশিত রামধুন গীতি ও শোক সংগীত এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য সবাইকে কাঁদিয়ে ছেড়েছিল। যা হোক গান্ধীজী তবে কেন এত মহান? সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের এবং তার প্রণেতা অপশক্তিগুলোর সঙ্গে সমঝোতা সত্ত্বেও? কারণগুলো হলো অহিংসা আন্দোলনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান অর্থাৎ ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাহসী বিরোধিতাকারী, একই ধর্মের বিশ্বাসীদের মধ্যে নানা গ্রম্নপ ও সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার যেমন- ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্য, নারী, পুরুষ এবং এসব প্রশ্নের তিনি আপসহীন আন্দোলন সূচনাই শুধু করেননি-জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর আশ্রয় না নিয়ে খালি পায় হেঁটে ছুটে গেছেন সব দাঙ্গা-বিধ্বস্ত এলাকায়, ঘুরেছেন ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি, ঐক্যবদ্ধ করেছেন ওইসব এলাকার সব ধর্ম বিশ্বাসী মানুষকে দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন জাতীয় নেতৃত্বকেও এবং বিলম্বে ঘটলে বহুবার তিনি আমৃতু্য অনশন শুরু করে দাঙ্গাপীড়িত মানুষের (সে হিন্দুই হোক, মুসলিমই হোক, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টানই হোক) পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে কোটি কোটি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ গোটা মানবজাতির বিশ্বস্ততম নেতায় পরিণত হয়েছেন- তাদের মনের মণিকোঠায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন এবং তার এই অবস্থান আজও অম্স্নান। আমি তার আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী গৌরবময় আন্দোলনের কথায় স্থানাভাবে আর গেলাম না। এই নিবন্ধের মাধ্যমে গান্ধীজীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশের বাস্তবতায় তাকে নতুন করে ভাবতে, তার আপসহীনতার ক্ষেত্রগুলো থেকে ইতিবাচক শিক্ষা এবং যেখানে তিনি সমঝোতা করেছিলেন আজও যে তার যে করুণ পরিণতি ঘটেছিল এবং গোটা ভারতবর্ষ এবং আমাদের এই উপমহাদেশটিজুড়ে এখনো রক্তক্ষয়, দেশত্যাগ প্রভৃতি ঘটছে তা থেকেও শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ দেশে সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদবিরোধী লড়াইতে সব গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির আপসহীন সংগ্রাম শুরুর প্রয়োজনীয়তার প্রতি সংশ্লিষ্ট মহলগুলো তথা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মহলগুলোর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। বিশেষ করে আজ স্বাধীন বাংলাদেশেও যখন সাম্প্রদায়িকতা নতুন করে বিষাক্ত ফণা তুলেছে। তার প্রিয় রামধুন গীত 'ঈশ্বর আলস্নাহ্‌ তেরে নাম, সবকো সুমতি দে ভগবান', আজও প্রেরণা জোগাক সব কল্যাণকামী মানুষের মনে-আমাদের উপমহাদেশটিতে। রণেশ মৈত্র: একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে