প্রতিটি শিশুর জš§গত অধিকার হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা আর নিরাপদ বাসস্থানের অধিকার। যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও প্রত্যাশা নিয়ে বেড়ে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু ঘটে বিপরীত। অভাব অনটন নিঃস্বতার মধ্যে পড়ে শ্রম বিক্রি করতে হয়। পারিবারিক নিঃস্বতার কারণে অসংখ্য শিশু শ্রমের জন্য ঘর ছাড়তে হয়। এদের মধ্যে পিতা-মাতাহীনই বেশি। যাদের বলা হয় পথশিশু। এসব পথশিশু হোটেল, রেস্তোরঁায় বয়, রিকশা-ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ির হেলপার, পাথর কোয়ারি ছাড়াও ইটখেলার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এবং সবাই কিন্তু অভাবের তাড়নায়ই শ্রম বিক্রি করছে। একজন পূণর্ শ্রমিকের সাথে জোগাড়ি হিসেবে ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করেও মজুরি পায় একজন পুরো শ্রমিকের অধের্ক।
শিশুদের কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বাথর্ হাসিল করে এক শ্রেণির স্বাথাের্ন্বষী কতার্ব্যক্তিরা। এরা অল্প পারিশ্রমিক দিয়েই একজন শিশু শ্রমিককে দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করাতে পারেন। বতর্মানে গ্রাম-গঞ্জ ও শহর এলাকার সব বাসাবাড়িতেই শিশু শ্রমিক লক্ষ করা যায়। শহরের একটি চক্র আছে, যারা পুরনো কাগজ, লোহা-লক্কর বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এরা এ কাজে গরিব-অসহায় শিশুদের কাজে লাগায়। তাদের টাকার লোভ দেখিয়ে একটি বস্তা দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। শিশুরা টাকার আশায় রাস্তায়, রাস্তায়, বাসাবাড়ির সামনে ঘুরে পরিত্যক্ত জিনিস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। ফলে অনেক শিশুদের গণপিটুনি খেয়ে নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। বাসাবাড়িতে যেসব শিশু শ্রমিক কাজ করে তাদের বেশিরভাগ সময়ই গৃহকতার্ অথবা গৃহকতীর্র হাতে নিযার্তনের শিকার হতে হয়।
শিশু শ্রমিকরা ইটাভাঙা থেকে শুরু করে অনেক কঠিন পরিশ্রম করলেও তারা তাদের ন্যায্য পাওনা পায় না।
পরিবহনে লক্ষ করা যাবে শিশুরা অনেক কঠিন কাজ করছে। টেম্পো, বাসসহ যাত্রীবাহী অনেক গাড়িতে শিশুরা ডাকুয়া এবং টাকা উঠানোর কাজ পযর্ন্ত করে থাকে। দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা পরিচালিত পাবলিক টয়লেটগুলোতে শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। যত নোংরা আর পরিশ্রমের কাজ শিশুদেরকে দিয়েই করানো হয়। ১ থেকে ১৪ বছর পযর্ন্ত বয়সী ছেলেমেয়েদেরকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রায়ই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিশুশ্রম বন্ধ, আইনের প্রয়োগ, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য, সভা-সেমিনার করে থাকে। কিন্তু শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় সমস্যা সমস্যাই থেকে যায়। ঝুঁকিপূণর্ কাজ করতে গিয়ে বেশিরভাগ শিশুই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কমর্কাÐে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পথশিশু, টোকাই এর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্বশীলতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পথশিশু, টোকাই, অসহায় শিশুদের পুনবার্সন ও তাদের শিক্ষা, কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পথশিশুদের কল্যাণে বড় ধরনের কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। ফলে দেশে সবর্ত্র শিশু শ্রম দিলেও শ্রমের মযার্দা যেমন পাচ্ছে না, তেমনি শিশু শ্রম বন্ধ হচ্ছে না। দেশের সকল নিঃস্ব, নিপীড়িত শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর ও কমের্র হাতে রূপান্তরিত করতে প্রয়োজন শিক্ষা। এদেরকে যেভাবে হউক শিক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থাকল্পে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করে সারাদেশে জোরালোভাবে পযের্বক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করে তাদের সচেতন করার জন্য প্রথমত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ থেকে নোটিশ জারি করতে হবে। এরপরও নিয়োগকারীরা আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা করতে হবে।
ইফতেখার আহমেদ টিপু
ঢাকা