ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বোপাজির্ত স্বাধীনতা চত্বরে’ উন্মুক্ত আকাশের নিচে যে শিশুটি রাতযাপন করে, তার নাম আল-আমিন। বয়স ১১ না পেরুলেও পরিবারের প্রতিদিন রোজগারের একটি অংশ আসে তারই হাত ধরে। যে কারণে সকাল-সন্ধ্যা গোলাপ নিয়ে টিএসসির এদিক-সেদিক ছোটে সে। হাতে থাকা ছোট বালতিটা এগিয়ে দিয়ে একটি ফুল কেনার আকুতি জানায় আড্ডারত শিক্ষাথীের্দর।
ভৈরবের বাসিন্দা হলেও ভিটাবাড়ি হারিয়ে মা মাজেদা বেগম আর ছোট ভাই রাব্বীকে নিয়ে ঠঁাই নেয় ঢাবি এলাকায়। দুই ভাই মিলে ভোরে শাহবাগ থেকে ফুল কেনে। এরপর সকাল থেকে রাত প্রায় ৯টা পযর্ন্ত তা বিক্রির ওপর ঘোরে এই পথশিশুর জীবনের চাকা।
নিজের প্রাত্যহিক লড়াই-সংগ্রামের বণর্না দিয়ে বাবা হারানো আল-আমিন বলে, কোনোদিন বেশি বিক্রি হয়, আবার কমও। সবোর্চ্চ ৭০০ টাকা পযর্ন্ত বিক্রি করেছে। তার ছোট ভাইও ২০০ টাকার মতো পায়। ফুল বিক্রির সব টাকা মায়ের হাতে তুলে দেয়। মা অসুস্থ, তাই কোনো কাজ করতে পারে না বলেও জানায় এই বয়সেই ‘জীবন সংগ্রামে’ নামা আল-আমিন।
তবে এত সংগ্রামের মধ্যেও সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে পথশিশুদের নিয়ে বিদ্যালয় ‘মজার স্কুলে’ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ‘পড়তে ভালো লাগে। ভাইয়ারা সুন্দর করে ক্লাস নেন। আমি যতদিন পারি, পড়ব’, বলে আল-আমিন।
শুধু আল-আমিন নয়, টিএসসি এলাকায় ইয়াছমিন, স্বণার্, মারিয়া, ভাবনা, শিলা, রাজীব, বৈশাখীসহ অনেক পথশিশুর দেখা মেলে। যে বয়সে তাদের স্বপ্ন দেখার কথা, দুরন্তপনায় বেলা গড়ানোর কথা, সেই বয়সে বঁাচার জন্য তাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। এসব শিশু কেউ বাবা হারিয়েছে, কেউ হারিয়েছে মা। তবে জিসান নামে যে শিশুটি রয়েছে, সে মা-বাবা দুইজনকেই হারিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে ‘স্ট্রিট ল্যাম্প’ নামের একটি সংগঠন। এসব ছিন্নমূল শিশুদের জন্য নিজেদের কাযর্ক্রম সম্পকের্ জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, এসব শিশুরা প্রচুর পরিশ্রম করে, দিনরাত কষ্ট করে। তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা বিভিন্ন মৌসুমে তাদের সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেন। শীতের সময় জ্যাকেট, কম্বল দেন। সংগঠনের সদস্যরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর্। যে কারণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এসব শিশুদের জীবন ‘সহজ’ করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন হাবিবুর রহমান।