শেষ ওভারে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের দরকার ছিল ৮ রান। হাতে ছিল ৪ উইকেট। লক্ষ্যটা আফগানদের জন্য মামুলিই ছিল। কিন্তু সেই মামুলি লক্ষ্যকেই অসম্ভব করে তোলেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তার করা ওই শেষ ওভারে আফগানরা নিতে পারে মাত্র ৪ রান, যার দুটি আবার লেগবাই থেকে। স্নায়ুক্ষয়ী এক লড়াইয়ে জাদুকরী বোলিংয়ে আফগানদের আটকে রাখলেন এই বঁাহাতি, বঁাচা-মরার লড়াইয়ে বাংলাদেশকে এনে দিলেন ৩ রানের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়। টাইগারদের তারকা পেসার এখন ভাসছেন প্রশংসাবাণে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা তো বলেই দিলেনÑ সামনেও দেখা যাবে মুস্তাফিজের এমন ম্যাজিক।
শুধু মাশরাফি নন, ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও মেতেছেন মুস্তাফিজ বন্দনায়। পরে ‘কাটার মাস্টার’কে বাংলায় প্রশংসা বাতার্ পাঠিয়েছে তার আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ফেসবুকে বাংলায় তারা লিখেছেÑ খুব ভালো, মুস্তাফিজুর রহমান! মুস্তাফিজকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্দনার স্রোত বইছে। তাতেই যোগ দিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাদের ফেসবুক পাতায় মুস্তাফিজের একটি ছবি পোস্ট করে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছে, ‘বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে গিয়ে মুস্তাফিজ শেষ ওভারে ৮ রান ডিফেন্ড করেছেন, আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে টিকিয়ে রেখেছেন তিনি।’
ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইসপিএন ক্রিকইনফো টানটান উত্তেজনার এই ম্যাচের শেষ মুহূতর্ নিয়ে টুইটারে লিখেছে, ‘শেষ বলে চার রান দরকার ছিল, শেনওয়ারি ব্যাট ঘুরাল এবং তার হাত ফসকে গেল ব্যাট! মুস্তাফিজ করে দেখিয়েছে, বাংলাদেশের হয়ে। আরেকটি উত্তেজনায় ভরা ম্যাচ হয়ে গেল, যেখানে ফের আফগানিস্তানকেই হারতে হলো।’ মুস্তাফিজের প্রশংসা করে মাশরাফি বলেছেন, ‘জাদুকরের মতো বল করেছে মুস্তাফিজ। আসলে সে একজন ম্যাজিশিয়ান। আশা করি, বোলিংয়ে এমন জাদুর প্রদশর্নী সামনে আরও দেখাবে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব মুস্তাফিজকেই দিচ্ছেন মাশরাফি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমার কাজ তো ছিল মুস্তাফিজকে স্রেফ বলা, আসল কাজ সেই করেছে। এই অবস্থার মধ্যেও যেভাবে বোলিং করেছে, ওকে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতেই হবে।’ টাইগার অধিনায়ক আরও বলেছেন, ‘এ ধরনের অনেক ম্যাচ আছে যেগুলোর শেষদিকে ৮-৯ রান দরকার থাকলেও আমরা জিততে পারিনি। এ ম্যাচে আমরাই ৮ রানে প্রতিপক্ষকে আটকে দিলাম। সে শেষপযর্ন্ত ম্যাচ ছেড়ে দেয়নি। শেষ ওভারে তার জাদুকরী বোলিংয়েই জয় এসেছে।’
কঠিন বিপদের সময় দলকে উদ্ধারে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূণর্ অবদান রাখেন মাহমুদউল্লাহ। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ১২৮ রানের রেকডর্ জুটি গড়ার পথে ৭৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। বল হাতেও সময়মতো উইকেট এনে দিয়েছেন। ফিল্ডিংয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়া অসাধারণ একটি ক্যাচও নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। তবে তার চোখে ম্যাচের নায়ক মুস্তাফিজ। কিন্তু তেমনটা ভাবছেন না এ অলরাউন্ডার। উল্টো জয়ের কৃতিত্ব মুস্তাফিজুর রহমানকে দিলেন এ ডানহাতি।
ব্যাটিংয়ে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ঘুরে দঁাড়ায় ইমরুল আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। অনেকেই তাদের ১২৮ রানের জুটিটাকে ম্যাচের টানির্ং পয়েন্ট মনে করছেন। মাহমুদউল্লাহ নিজে অবশ্য তেমনটা মনে করছেন না। তার মতে, মুস্তাফিজের জাদুকরী বোলিংটাই ম্যাচের টানির্ং পয়েন্ট, ‘টানির্ং পয়েন্ট মুস্তাফিজের বোলিংকেই বলব। আমাদের জুটি হয়তো গুরুত্বপূণর্ ছিল, কিন্তু ৬ বলে ৮ রান আটকানো সহজ নয়। মুস্তাফিজ যেভাবে বোলিং করেছে, সেটা ছিল অসাধারণ।’
প্রচÐ গরমে পায়ে ক্র্যাম্প করায় রোববার ঠিকমতো বোলিং করতে পারছিলেন না মুস্তাফিজ। তারপরও এ বাঁহাতি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন যতটা সম্ভব। সতীথের্র এমন প্রচেষ্টায় সবার মতো মুগ্ধ মাহমুদউল্লাহও, ‘আফগানিস্তান ভালো ক্রিকেট খেলেছে, আমরাও খেলেছি। আমরা শেষ পযর্ন্ত স্নায়ু ধরে রাখতে পেরেছি, মুস্তাফিজের অসাধারণ শেষ ওভারের জন্য। আমরা বার বার ওকে এজন্যই কৃতিত্ব দিচ্ছি যে ও ক্র্যাম্প করছিল, স্ট্রেচিং করছিল। আমার মনে হয়, ও পুরো রানআপে বল করছিল না। শটর্ করে নিয়েছিল একটু। এজন্য ওকে কৃতিত্ব দিচ্ছি এত বেশি।’