শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে জমাটবাঁধা ইউরিয়া ক্রয়ে কৃষকের অনীহা

দিনাজপুর প্রতিনিধি
  ০২ অক্টোবর ২০২১, ১৭:১৯

দিনাজপুর বাফার গুদামে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বস্তায় জমাটবেঁধে আছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ডিলারদেরকে নতুন সারের সঙ্গে ২০ শতাংশ জমাট বাঁধা ইউরিয়া ক্রয়ে বাধ্য করছেন গুদাম কর্তৃপক্ষ। ডিলারদের অভিযোগ এই জমাটবাঁধা ইউরিয়া কিনতে কৃষকরা অনীহা প্রকাশ করছেন সঙ্গে বস্তা প্রতি ৪০-৫০ টাকা লোকসানে সার বিক্রি করছেন তারা। দিনাজপুর বিসিআইসি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় বিসিআইসির নিবন্ধনকৃত ডিলার রয়েছেন ১৩৩ জন এবং বিএডিসির নিবন্ধকৃত ডিলার সংখ্যা ১৭১ জন। ডিলাররা সরকার নির্ধারিত ৭০০ টাকা দরে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া ক্রয় করেন এবং ৮০০ টাকা দরে তা বিক্রি করেন।

ডিলাররা বলছেন, এমনিতেই আমন মৌসুমে ইউরিয়ার চাহিদা কম থাকে। তার ওপর সার কিনতে গেলে ২০ শতাংশ জমাটবাঁধা পুরাতন বস্তা নিতে হচ্ছে। যা কৃষকরা কিনতে চায় না। বাধ্য হয়ে বস্তা প্রতি ৪০-৫০ টাকা ছাড়ে বিক্রি করতে হয়। সদর উপজেলার মাকিহার গ্রামের কৃষক আউয়াল হক বলেন, ৪-৫ বছর আগের সার। বস্তার মধ্যে ঢিকা হয়ে গেছে। সেই ঢিকা সার ভাঙলেও একেবারে গুঁড়া হয় না। গুটি গুটি থেকে যায়। জমিতে ছিটানো যায় না। বড় গুটি গাছের গোড়ায় পড়লে যদি তাড়াতাড়ি না গলে যায় সেক্ষেত্রে গাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

একইভাবে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর জাহিদুল ইসলাম জানান, সারের গুণাগুণ ঠিক থাকবে। তবে জমিতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কৃষকের।

তিনি বলেন, ‘যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইউরিয়া গাছের গোড়ায় পড়ে সেক্ষেত্রে গাছ মারাও যেতে পারে।’ বুধবার দিনাজপুর শহরের পুলহাট এলাকায় বাফার গুদাম ঘুরে দেখা যায়, গুদাম ভর্তি কয়েক হাজার ইউরিয়ার বস্তা জমাটবঁধে আছে। ডিলারদের নুতন বস্তার সঙ্গে পুরাতন সারও গাড়িতে সরবরাহ করছেন লেবাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লেবার জানান, পুরান সার নুতন বস্তায় ভরে রিপ্যাকিং করে ডিলারদের সরবরাহ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এ জেলায় ইউরিয়া সারের বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন। বুধবার পর্যন্ত বাফার গুদামে ইউরিয়া সারের মজুদ আছে ৬ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন। জেলা বাফার গুদামের উপ-প্রধান (রাসায়নিক) দ্বিজেন্দ্রনাথ রায় বলেন, বর্তমানে জেলায় ইউরিয়া সারের সংকট নেই। ডিলার পয়েন্টেও সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টনের অধিক সার মজুদ আছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী ডিলারদের সার সরবরাহ করা হয়েছে। ডিলারদের মাঝে পুরাতন জমাটবাঁধা সার সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, গুদামে আদ্রতা শোষণ করে ইউরিয়া জমাটবেঁধে যায়। কিন্তু এতে করে সারের গুণগতমান স্বাভাবিক থাকে। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নতুন সারের সঙ্গে পুরাতন ২০ শতাংশ সার ডিলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে।

জানা যায়, ৬ বছর আগের সার এখনো বাফার গুদামে মজুদ আছে। জেলা ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম জানান, বাফার গুদামের ধারণক্ষমতা ৬ হাজার মেট্রিক টন। কয়েক বছর আগে ২০-২২ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া আমদানি করা হয়। ধারণক্ষমতার অধিক সার আমদানির ফলে বাইরে খোলা জায়গায় সার রাখা হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় সারগুলো পানিতে ভিজে জমাটবাঁধে। সেই সার এখনো বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার জেলা প্রশাসনসহ বিসিআইসিকে ভালো মানের সার সরবরাহ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোনো ফল পাওয়া যায়নি। উল্টো নতুন সারের সঙ্গে ২০ শতাংশ পুরাতন সার ডিলারদেরকে বিক্রির জন্য দেওয়া হচ্ছে। যা কৃষকরা নিতে চায় না।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে