এরই মধ্যে বাণিজ্যকভাবে রাঙ্গামাটি নানিয়ারচরে ড্রাগনের চাষ করে লাভবান হয়েছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। পাহাড়ি জমিতে পাকা পিলারের পরিবর্তে ভিন্ন পদ্ধতিতে গাছের ওপরের অংশ কেটে ১৫০ টি ড্রাগন চারা লাগিয়েছে। ১৮ মাসের ব্যবধানে দুটি মৌসুমে বাগান থেকে ড্রাগন তুলতে দেখা গেছে। নিলু চাকমা(ছন্দনাম)ফল বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় লাখ টাকা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে, কিছু ফল পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন।
নানিয়ারচর কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বল্প সময় ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় নানিয়ারচরে অনেক কৃষক জুম চাষ ত্যাগ করে ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষ করে এরই মধ্যে বিপ্লব সৃষ্টি হবে। খাগড়াছড়ি -রাঙ্গামাটি সড়কের ১৩ মাইল এলাকায় পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালু জমিতে এ ফলের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম দফায় ২০২০সালের মাঝামাঝিতে পাহাড়ি জমিতে ১৫০ ড্রাগন চারা লাগান নিলু চাকমা। সফলও হন। ছয় মাস পর বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন বিক্রি করে আয় করেন এক লাখ টাকা।ড্রাগন চাষ লাভজনক হওয়ায় ২০০০টি ড্রাগন ফলের চারা লাগাবেন ভাবছেন তিনি।
বর্তমানে বাগানে কয়েক শত ড্রাগন গাছে ফল এসেছে। এরই মধ্যে ফল বিক্রি করে লাখ টাকার মতো পেয়েছি। বাগানে আরও অনেক ফল রয়েছে। ছয় মাস পর্যন্ত ১৮ থেকে ২১ দিন পরপর বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করা যাবে। বাগানে লাল, সাদা, গোলাপি ও পিংক এ চার রঙের ড্রাগন উৎপন্ন হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, এক সময় এ অঞ্চলের মানুষ ড্রাগন কী তা জানত না। ফলটি সম্পর্কে ধারণা ছিল না অনেকের। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় ড্রাগনের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আগামীতে এ ফলের চাহিদা আরও বাড়বে। আমার বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন কিনে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম নিয়ে যাচ্ছে।
বগাছড়ির চাষি শামসুল আলম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ড্রাগন চারা সংগ্রহ করে নানিয়ারচর এলাকার আশেপাশের পাহাড়ি গ্রামের অনেকেই ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন,আমি নিজে ৪০০ ড্রাগন লাগিয়েছি,প্রায় লাখ খানেক টাকা আয় হয়েছে।
কৃষিবিদদের মতে, ড্রাগন এক ধরনের ক্যাকটাস গাছের ফল। এ ফলের অন্য নাম ‘পিটাইয়া’। চীনে এ ফলের নাম হুয়ো লং গুয়ো, ভিয়েতনামে থানহ লং। ফলটির জন্ম মধ্য আমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়ায় ফলটির উৎপাদন শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। বর্তমানে ভিয়েতনামে ফলটি তুলনামূলক বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়া তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়ায়ও এর চাষ হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন চাষ শুরু হয়।
নানিয়ারচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানাগেছে, ড্রাগন চাষ বেশ সাড়া পড়েছে নানিয়ারচরে। পাহাড়ে ড্রাগন চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলক কম হয়। এছাড়া সেচ কম লাগায় চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়ি কৃষক। ফলটি বিদেশি হলেও পার্বত্যাঞ্চলের জলবায়ু ও মাটি দুটোই ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। ড্রাগন একটি লাভজনক ফল। কম পরিশ্রমে ছোট্ট জায়গার মধ্যেও এর চাষ করা সম্ভব।
যাযাদি/ এসএইচ