শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নজরুল

বিমল ভৌমিক
  ২০ মে ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২০ মে ২০২২, ১০:২০

কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্যকভাবে অনুধাবন করেছিলেন এ দেশের পরাধীনতার প্রধান কারণ হিন্দু- মুসলমানের অনৈক্যতা। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের মূল দুর্বলতম দিক- হিন্দু-মুসলিম বিরোধ। যা নজরুল অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবির 'জবান বন্দি' সম্বর্ধনা সভায় বক্তব্য দিতে তার উপলব্ধি ব্যক্ত করেন, 'কেউ বলে আমাকে যবন, কেউ বলে কাফের, আসলে ও দুটোর কোনটাই নহি; হিন্দু মুসলমানের দলাদলি কে গলাগলি করতে চেয়েছি।' এ উক্তিতেই প্রমাণিত, নজরুল ছিলেন, মনেপ্রাণে এবং জীবনাচারে একজন সম্পূর্ণ অসাম্প্র্রদায়িক। তিনি বিদ্রোহ করেছেন, বিদ্রোহের গান গেয়ে জাতিকে করেছেন সচেতন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন তীব্রভাবে। যা মিথ্যা, কলুষিত, পুরাতন, পচা- সেই সনাতনী চেতনার বিরুদ্ধে ছিল তার প্রতিবাদ। ধর্ম নিয়ে ভন্ডামি ও কুসংস্কারকে তিনি কখনোই প্রশ্রয় দেননি। তিনি জাতিকে সচেতন করতে ইসলাম ধর্ম ও কাহিনী বিষয়ক কবিতা-গান লিখে এক কৌশলগত তাত্ত্বিকতার অবতারণা করেছেন। তার বদ্ধমূল ধারণা ছিল, তৎকালীন ধর্ম প্রচারক মোলস্নারা যে জিগির তুলেছিল- তা ছিল বাংলা এলাকায় আরবি ভাষায় প্রচারিত এক ইসলামী ভ্রান্তদর্শন। যা ইসলামের মূল চেতনা বা প্রাণশক্তিহীন। নজরুল নিজেই এটা অনুধাবন করে বলেছেন, 'গণশক্তি, গণতন্ত্রবাদ, সার্বজনীন ভ্রাতৃতি ও সমানাধিকার প্রচারের ধারে কাছে তো ছিলই না বরং তা ছিল কেতাদুরস্ত পোশাকি মেকি প্রচার। নজরুল শুধু ভাবাবেগ নিয়ে ইসলামী ভাবধারায় কবিতা বা গান লেখেননি, একটি তাত্ত্বিক কৌশল থেকে এসব রচনায় প্রবিষ্ট হয়েছিলেন। মূলত: উদ্দেশ্য মাতৃ ভাষায় সৃজনশীল প্রকাশনায় ধর্ম ও ধর্মের বাণী সাধারণের বোধগম্য ও সহজতর করে তোলার চেষ্টা। বিপস্নবী মানবতার কবি নজরুল ১৯২১ সালে বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হলে বাঙালির চেতনালোকে ঝড় তুলেছিলেন। সে বিদ্রোহ ছিল- অন্যায়, অসত্য, শোষণ-নিপীড়ন, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, কলুষিত নষ্ট সনাতন মিথ্যার বিরুদ্ধে, সর্ব প্রকার কুসংস্কারের বিপক্ষে। তিনি অত্যন্ত সচেতনতাসহ কুশলতার সঙ্গে রচনা করেছেন তার কবিতা ও গানসমূহ। তিনি প্রেম ও দ্রোহের মেলবন্ধনে পাঠক হৃদয় যুদ্ধ করার প্রয়াসী হয়েছেন নিজ জীবনাচরনের প্রেক্ষিতে। অসাধারণ ক্ষমতা অর্জনে ভাষা ও ভাববস্তুর সংমিশ্রণে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেওয়ার পরিসর শক্তিশালী এবং নিরন্তর সংবেদী আবেদনে মথিত করেছেন। তার সর্বকালীন আবেদনের মূলে রয়েছে প্রগাঢ় মানবতাবোধ। সর্বস্তরের মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি, দুঃখীদের অসহায়ত্ত আন্তরিক উপলব্ধিতে শোষিত-নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য প্রবল সহমর্মিতা ও সহদয়তা তার সাম্য চিন্তাচেতনার একটি প্রকৃষ্ট প্রতিফলন। দুর্বল চিত্ত ভীরু মানুষকে নজরুল দিয়েছেন অদম্য সাহস, সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা। তিনি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় খুঁজেছেন মুক্তির পথ, ইতিহাস পর্যালোচনায় পেয়েছেন প্রগতির দীক্ষা। নজরুল যে শুধু ধর্মীয় চেতনাসমৃদ্ধ সাহিত্য ও গান নিছক কাব্যিক ভাবাবেগে লিখেছেন তা কিন্তু নয়, বরং তার মধ্যে নিহিত ছিল একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের তার্তিক কৌশল ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বুঝেছিলেন- একমাত্র সাহিত্য-সংস্কৃতি মাধ্যমেই হিন্দু-মুসলমানের পরস্পর অশ্রদ্ধা দূর করা সম্ভব। তৎকালীন 'নবযুগ' পত্রিকায় নজরুলের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি এতে ব্রাহ্মণ্যবাদী ছুৎমার্গের বিষয় উলেস্নখ করে রেলগাড়িতে হিন্দু-মুসলমানের এক সাম্প্রদায়িক হিংসাত্মক সত্য ঘটনার অবতারণা করে বুঝাতে চেয়েছেন- তবে এ সুবিধা তো ব্রিটিশ শাসকদেরই। নজরুলের 'বিদ্রোহী কবিতার মূল লক্ষ্য সমাজ বদলের উদ্দীপ্ত আহ্বান হলেও তার চেতনা ছিল ইসলাম ধর্মকে বাঙালি সংস্কৃতির আলোকে সহজ ও বোধগম্য করার প্রচেষ্টা। ধর্মীয় কাহিনী অবতারণায় ধর্মকে বাঙালি করণে বিদেশি ও অবোধ্য ভাষার খোলসমুক্ত করে বাংলা ভাষায় উপস্থাপনে সর্বসাধারণের মনে ধর্মের সঠিক মর্মবাণী সংস্থাপন করতে হবে। ১৯১৭ সালের রুশবিপস্নব নজরুলকে সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শ এবং সাম্যবাদে উজ্জীবিত করে। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হন। রাজ নীতিতে সাম্যজ্যবাদ বিরোধী অবস্থানে থেকে আমুল সংস্কারবাদ তথা প্রগতিবাদী চেতনায় সংগঠনিকভাবে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগেসের সদস্য হন। নজরুল ছিলেন মনে প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। তাই তিনি যোগ দিয়েছিলেন ভারতের হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আন্দোলনে। তিনি কবিতা ও গানে সমুন্নত করেছেন বারবার অসাম্প্রদায়িক চেতনার। 'পুতুলের বিয়ে নাটিকায় তার গান 'মোরা একই বৃত্তে দু'টি ফুল হিন্দু-মুসলমান' নজরুলের সক্রিয় ভূমিকায় গড়ে ওঠে শ্রমিক-প্রজা স্বরাজ সম্প্রদায় রাজনৈতিক দল।' এ রাজনৈতিক চেতনায় তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়- 'সাপ্তাহিক লাঙল।' এ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় 'শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ দলের ঘোষণাপত্র। এখানেই উপস্থাপিত হয় ভারতের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার দাবি। সাম্যবাদী চেতনার প্রকাশ তার শ্রমিক শ্রেণির অন্তর ন্যাশনাল সংগীত-'জাগো অনশন বন্দি ওঠরে যত' এবং 'রক্ত পতাকার গান।' লাঙলে প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালের দাঙ্গার সময় লেখা হিন্দু-মুসলমান প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, হিন্দু মুসলমানের বিরোধ নিয়ে আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ তাকে বলেছিলেন, 'দেখ, যে ল্যাজ বাইরের তা কাটা যায়, ভেতরের ল্যাজকে কাটবে কে? এ ল্যাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল নজরুলেরও। মারামারিটা মূলত হিন্দু-মুসলমানের নয়, এটা পন্ডিত ও মোলস্নার অর্থাৎ ধর্ম ব্যবসায়ীদের এ ব্যবসায় ভ্রষ্ট হয়েছে উচ্চ শিক্ষিতরা ? অন্তরালে যে ল্যাজের কারসাজি, সে এক ভিন্ন শক্তি, নাম তার শয়তান। সে হিন্দু-মুসলমানদেও ক্ষেপিয়ে তোলে। গুর্খা সিপাহি হয়ে হিন্দু-মুসলমান উভয়কেই গুলি করে মারে। সমুদ্রপারের লালমুখো বাঁদর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ আসল কারসাজিতো তাদেরই। এ সত্য বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা দেখেও দেখে না। কারণ জনতার ঐক্য তাদের বিপদাশঙ্কা। 'ব্রিটিশ কংক্রেস' এবং লীগের প্ররোচনায় হিন্দু-মুসলমান-'মারোশালা যবনদের' অথবা 'মারো শালা কাফেরদের: ফল-হিন্দু-মুসলমানের লাশ পাশাপাশি পড়ে কাতরায় আলস্নাহ বা ঈশ্বরের নাম তারা নেয় না। তারা কাতরায় বাবা গো, মা গো বলে একই শব্দে। যেভাবে মাকে ডাকে দু'টি ভিন্ন ধর্মের শিশু। একই ভাষায় কেঁদে মায়ের কাছে দুধ চায়। একজন ডুবে যাচ্ছেন, কোন চিন্তা না করেই অন্যজন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে বাঁচালেন। হিন্দু যদি উদ্ধার করে দেখে লোকটা মুসলমান, কিংবা মুসলমান যদি উদ্ধারের পর জানে লোকটা হিন্দু। তার জন্য তাদের অনুশোচনা হয় কি? না আত্মতৃপ্তি একই থাকে, সে একজন মানুষকে বাঁচিয়েছে।' এ ঘটনালোকের চিন্তাচেতনায় তার অসাম্প্রদায়িক সাম্যবাদী, কবিতা- 'গাহি সাম্যের গান- যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান। যেখানে মিশেছে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান' অথবা 'মানুষ' কবিতায়-'গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।' ধর্মীয় ভেদাভেদ নয়, তার অধ্যাত্মিক দর্শন মানুষই তার ধর্মকে তৈরি করে নিয়েছে। ধর্ম মানুষকে তৈরি করেনি। তাই তিনি দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন, "মূর্খরা শোন-মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো। মানুষ সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, স্বীকার্য হলেও ধর্মের মধ্যেও যে, অসাম্প্রদায়িকতা থাকতে পারে, যাকে আমরা সাধারণভাবে জানি, 'লাকুম দিনিকুম ওয়ালদিন।' যার যার ধর্ম তার তার এ দর্শনের সর্বাপেক্ষা বড় প্রবক্তা নজরুল। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি অসাম্প্রদায়িক, এ সত্যও সমভাবে প্রতিষ্ঠিত। নজরুল তার বিখ্যাত ওমর ফারুক' কবিতায় লিখেছেন, 'উমরের সময় মুসলিমদের পবিত্র জেরুজালেম নগরী খ্রিষ্টানদের হাত থেকে মুসলমানদের করতলগত হয়। এ প্রসঙ্গে সন্ধি চুক্তি হয়। কবিতায় উলিস্নখিত সন্ধি পত্র স্বাক্ষর করতে বিকাল হয়ে যায়। আসর নামাজ পড়তে খলিফা উমর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। গির্জার পাদরি বললেন, সন্ধি যেহেতু হয়ে গেছে। ইচ্ছে করলে খলিফা উমর গির্জা প্রাঙ্গণেই নামাজ আদায় করতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, কেন তিনি তা করতে পারেন না। এ কাজ করলে সব মুসলমান প্রজন্মান্তরে মনে করে নেবে, মুসলমানরা ইচ্ছে করলেই গির্জা বা মন্দিরে নামাজ পড়তে পারে। এ বিভ্রান্তি ছড়ান যাবে না। এ কবিতাও তার আসম্প্রদায়িকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি অসাম্প্রদায়িকতা বলতে মানবতাকে বুঝিয়েছেন। ধর্মহীনতাকে কোনোভাবেই নয়। কবিতার মমার্থ যদি মুসলমানরা যথার্থ অনুভব করেন তাহলে বুঝবেন- অমুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ বা ক্ষতিসাধন করা কতটা গর্হিত কাজ। বাংলায় ধর্মীয় অসাম্প্র্রদায়িকতা প্রচারের ক্ষেত্রে এ কবিতা একটি প্রণিধানযোগ্য শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। নজরুল ছিলেন কঠিনভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। যে জাতীয়তাবাদ ধর্ম নিরপেক্ষ ও ভাষাভিত্তিক। তিনি বুঝেছিলেন, সামাজিক বিপস্নব ছাড়া শ্রেণি বিভক্ত বাংলার মানুষের মুক্তি নেই। সাহিত্য জীবনের শুরু থেকেই তিনি হিন্দু- মুসলমানের ঐক্যের প্রতি দৃকপাত করেছেন। তার সাহিত্য, সংগীত ও সৃজনশীল জীবন ব্যাপৃত ছিল মাত্র ২৩ বছর। ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত। এর পরও তিনি ৩৫ বছর বেঁচে ছিলেন। বাকরুদ্ধ ও অসচেতন অবস্থায়। তিনি তার এ জীবনের স্বর্ণসন্ধিক্ষণের অধিকাংশ সৃজনশীলতায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার শতদল। নজরুল তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অসাম্প্রদায়িকতার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সব বাঙালি মুসলমানদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। অত্যন্ত সচেনতার সঙ্গে তা বাস্তবায়নে নিয়েছিলেন বিভিন্ন কৌশল। তিনি অনুধাবন করেছিলেন, ধর্মকে মাতৃভাষার মাধ্যমে চর্চা করতে হবে। ধর্মের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতা, পরমতসহিষ্ণুতাকে সহজতর ভাষায় সাহিত্যালোকে প্রকাশ করতে হবে। সুমলমানদের ধর্মগ্রন্থসমূহ সুললিত বাংলায় তর্জমা করে প্রকাশে সাধারণের বোধগম্য করে তুলতে হবে। বিদেশি শব্দ ও অলঙ্কারের সহজ ও অবাধ মিশ্রণে বাংলাভাষার উৎকর্ষ সাধন ও সমৃদ্ধি আনায়ন প্রয়োজন। নজরুল তার ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত করেছেন অসাম্প্রদায়িকতা মহান। এ সময় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাহিত্যের ধারা বিবর্তনে, তরুণ আধুনিকতার ছদ্ম্যাবরণে, পাশ্চাত্য সাহিত্যের অবক্ষয়ধর্মী প্রতিক্রিয়াশীল রুচির দাসত্বের আবর্তে পতিত হয়েছিলেন। নজরুল ছিলেন ব্যতিক্রম। যথার্থ আধুনিক। কারণ মুক্ত এবং রুচির দাসত্বের ব্যাপারে তিনি ছিলেন আগ্রহহীন। রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য, প্রকৃত স্বাধীনতা মনের মুক্তি ও রুচির দাসতৃ নয়। নজরুল থাকবেন আমাদের জীবনের আনন্দ, নান্দনিক সৌন্দর্যবৃদ্ধি, আমাদের স্বপ্ন ও সংগ্রামের সঙ্গী হয়ে। ব্রিটিশরা তাকে চেনে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে। পাকিস্তানিরা তার কবিতার অবাঞ্ছিত অংশ খুঁজতে ব্যস্ত হয়। আমাদের সমাজ বৈপস্নবিক পরিবর্তনে আসীন হলে, রাষ্ট্র তার বাণী নিয়ে অস্বস্তিতে পড়লেও সমাজ পাবে একজন প্রকৃত কাছের মানুষকে।তার কণ্ঠশক্তি হারানোর বছরাধিককাল পূর্বে ১৯৪১ সালে "যদি আর বাঁশি না বাজে' শিরোনামের অভিভাষণে বলেছিলেন; হিন্দু-মুসলমানে দিন-রাত হানাহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মানুষের জীবনে একদিকে কঠোর দারিদ্র্য, অভাব- অন্যদিকে লোভী অসুরদের যক্ষের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা স্তূপের মতো জমা হয়ে আছে- এই অসাম্য, এই ভেদাভেদ দূর করতেই আমি এসেছিলাম। আমার কাব্যে, সংগীতে, কর্মজীবনে অভেদ সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। অসুন্দরকে ক্ষমা করতে অসুরকে সংহার করতে আপনারা সাক্ষী, আর সাক্ষী আমার পরম সুন্দর।' সাহিত্যে চিরজীবী হয়ে বেঁচে থাকবেন। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে বাংলাভাষা থাকবে ততদিন তিনি অমর জয়রথ রূপে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ভাস্বর হয়ে থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে