হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারে ফের বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে ৩ দফায় প্রায় ২০ টাকা বেড়ে সোমবার তা ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। মূলত বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ হ্রাসে দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। পেঁয়াজ চাষিরা জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষেত থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলা শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ কৃষকের হাতে আর পেঁয়াজ থাকবে না। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ নির্ভর করবে ব্যবসায়ী ও আড়তের ওপর। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত প্রধান পেঁয়াজ ‘হালি পেঁয়াজ’ বাজারে আসবে মার্চের শুরুতে। ফলে ফেব্রুয়ারিজুড়েই পেঁয়াজের বাজারে ভোক্তার ব্যয় বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সোমবার রাজধানীর আড়তে পাইকারিতে প্রতি মণ পেঁয়াজে প্রায় ৪শ’ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩২শ’ টাকা দরে। আড়তদার জানান, স্থানীয় মোকামগুলোতে সরবরাহ শেষের দিকে তাই গত সপ্তাহের থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। সারাদেশে স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেই সেখানকার মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে বিভিন্ন হাটে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৭৫-৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও আগাম পেঁয়াজের উৎপাদন শেষ হয়ে আসার কারণে গত তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কৃষক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাসখানেকের মধ্যেই দেশি পেঁয়াজের প্রধান জাত হালি কাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে। তখন দাম আবার কমে আসবে। কিন্তু এর মধ্যবর্তী সময়ে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে হু হু করে দাম বাড়তে পারে।
যদিও মুড়িকাটা পেঁয়াজে অন্তত তিন মাসের চাহিদা পূরণ করতে পারবে বলে জানিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু জানুয়ারির পরই বাজারে এর সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ যে পরিমাণ মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন হয়েছে তাতে মার্চ পর্যন্ত কোনো সরবরাহ সংকট হওয়ার কথা নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকের পেঁয়াজ উত্তলোন শেষ হওয়ার পর অন্তত এক মাস বাজারে সরবরাহ সংকট থাকার কথা নয়। কিন্তু মজুতকারীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়তি মুনাফা আদায় করতে চায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে দেশে বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদার রয়েছে। এর বিপরীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে প্রায় আট লাখ টন। সে হিসেবে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাজারে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়।
এদিকে দেশের বাজারে বছরে প্রায় ৩২ থেকে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। যার মধ্যে ২৫ লাখ টন চাহিদা পূরণ করা হয় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে। মূলত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের সংকট থাকায় আমাদানির মাধ্যমে বাকি ৬ থেকে ৭ লাখ টন চাহিদা পূরণ করা হয়। যার প্রায় শতভাগই আসে ভারত থেকে।কিন্তু এবার দেশে পেঁয়াজ সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে আগামী মার্চে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে। দেখা গেছে সে সময় দেশে উৎপাদিত প্রধান পেঁয়াজ ‘হালি পেঁয়াজের’ সরবরাহ আসতে শুরু করবে। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সরাসরি কৃষকের হাতেই এই পেঁয়াজ থাকে। ফলে সে সময় পেঁয়াজ আমদানি করা হলে কৃষকের পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
যাযাদি/ এস