রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক 

১০ হাজার টন চিনি কিনবে সরকার

ডাল-চিনি কেনাসহ ১৩ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৪৩৪ কোটি টাকা
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪২
১০ হাজার টন চিনি কিনবে সরকার

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ভর্তুকি দামে বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিভাবে ৮ হাজার টন মসুর ডাল, রাজধানীর আজিমপুরে একটি বহুতল মসজিদ নির্মাণসহ ১৪টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৪৩৪ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫ টাকা।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।

তিনি বলেন, টিসিবির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য ভারতের চেন্নাই ভিত্তিক অ্যাগ্রিগো ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে দরপ্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে। টিইসি কর্তৃক তা পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ৭৬ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের প্রত্যাশামূলক অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০০.৮০ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সরকারের মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ক্রয় হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে বিক্রির জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এই চিনি সরবরাহ করবে। প্রতি কেজি চিনি ১৬০ টাকা হিসাবে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা।

সভায় ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ (জোন-এ) এর আওতায় ‘১টি ৬-তলাবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণের’ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যৌথভাবে মেসার্স কনটেম্পোরারি এবং সামস ইঞ্জিনিয়ারিং। এতে ব্যয় হবে ১২ কোটি ৩৪ লাখ ২ হাজার ৩৬১ টাকা।

সচিব জানান, মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পের ডিজাইন, মানুফ্যাচারিং, সাপ্লাই অ্যান্ড ইন্সটলাশন অব কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইমেন্ট, টারমিনাল অপারেশন সিস্টেম অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম (প্যাকেজ-২এ)-কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাপানের মিৎসুই ইক্যুইপমেন্টস অ্যান্ড মেশিনারি এবং টেক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৭৯৯ কোটি ৪৯ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৪ টাকা। জাইকার অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

তিনি জানান, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর ড্রেজিং (প্যাকেজ-৩, লট-৪) এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের ড্রেজিং করা হবে। মীর আখতার হোসেন লিমিটেড এবং কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার ৯০০ টাকা।

একই প্রকল্পের প্যাকেজ-৩, লট-৫ এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এবং ওরিয়েন্ড টেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৮৭ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

এছাড়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর ড্রেজিং প্রকল্পের প্যাকেজ-৪, লট-৫ এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেড এবং অ্যাকুয়া মেরিন ড্রেজিং লিমিটেড যৌথভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯০ টাকা।

সচিব জানান, সভায় ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্পের (প্যাকেজ-১) পূর্ত কাজের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল চুক্তিমূল্য ছিল ৩ হাজার ৬ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫২ টাকা। এখন নতুন করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৯৫১ কোটি ৮৮ লাখ ১ হাজার ৪৭৭ টাকা। ফলে সংশোধিত চুক্তিমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫৭ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার ১২৯ টাকা।

সভায় ‘গোপালগঞ্জ জেলায় ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র’ নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৪৫৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা।

এছাড়া ‘হাওড় এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং- সিডবিøউ-৬-এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৩২৮ কোটি টাকা।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্তিসভা কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ‘ডেভেলপমেন্ট অব কন্ট্রিনার টার্মিনাল-১ অব পেয়ার পার্ট আন্ডার পিপিপি মডেল’ শীর্ষক প্রকল্পটি পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইভ স্কিল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ শীর্ষক প্রকল্পটি পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে