শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনদফা দাবি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার বিচার ও উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান করে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা 'সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান এক হও এক হও, 'ফরিদের পদত্যাগ, করতে হবে করতে হব' এক দফা এক দাবি, উপাচার্যে পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের উপর হামলা কেনো, সুষ্ঠু বিচার চাই', হল আমরা ছাড়বো না' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
মিছিলের অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ১২ টায় মুক্তমঞ্চে একটি সাধারণ সভায় মিলিত হয় । এসময় এক দফা এক দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি আজ সোমবার সকাল ১০ টায় ঘোষণা করবেন বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী।
উপাচার্যে পদত্যাগের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, উপাচার্য যতক্ষণ পদত্যাগ না করছে সেই পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করে যাবে। আমাদের একটাই দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্ধার করার জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এছাড়া ছুড়া গুলিতে পুলিশের নিজেদের মধ্যে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে পুরো ক্যাম্পাস থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় আইআইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। এসময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিকাল সাড়ে ৫ টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা শুরু হয়। এতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, ককটেল, ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ । এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে পুলিশ গিয়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নিয়ে যান। পুলিশের লাঠিচার্জে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও পুলিশের নিজেদের গুলিতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।
এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে এসে আশ্রয় নেন উপাচার্য।
এরূপ পরিস্থিতিতে শাবিপ্রবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে প্রশাসন। রোববার রাতে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা শেষ এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেন। সেই সাথে আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টার পূর্বেই আবাসিক শিক্ষার্থীদেরকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল প্রভোস্টের অসদাচরণের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে আন্দোলনে নামেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। সেদিন রাত ৩টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন আজ পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে।
যাযাদি/ এমডি