সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃত্রিম খাদ্যের দিকে ছুটছে মৌমাছি

জাবি প্রতিনিধি
  ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৯

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের একটি চায়ের দোকান। ফুটপাতের আর দশটা দোকানের মতোই। তবে একটি ক্ষেত্রে দোকানটি ভিন্ন, যা পথচলতি অনেকেরই নজর কাড়ে। সেখানে অনেক মৌমাছির আনাগোনা। চিনি রাখার পাত্রে বসে আছে অনেক মৌমাছি। দুধের কৌটা-চায়ের কাপসহ অন্যান্য জায়গায়ও বেশ কিছু মৌমাছি ওড়াউড়ি করছে।

দোকানি জাকারিয়া নিশান চা বানানোর সময় কখনো মৌমাছিগুলোকে একটু সরিয়ে, কখনো–বা একটু ফাঁক পেলে সেখান থেকেই চিনি নিচ্ছিলেন। চিনি নেওয়ার সময় প্রায়ই চামচের সঙ্গে মৌমাছিও এসে পড়ছিল, উড়েও আসছিল দু-একটা চায়ের কাপে। এতে বিরক্ত না হয়ে বরং যত্নসহকারে মৌমাছি সরিয়ে দিয়ে পুরো চা বানানোর প্রক্রিয়া শেষ করছিলেন দোকানদার।

দোকানি জাকারিয়া নিশানের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। ঢাকার কাপ্তানবাজারে থাকেন তিনি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে বছর তিনেক ধরে দোকান করছেন। তিনি জানান, শুরু থেকেই তাঁর দোকানে মৌমাছি আসে। প্রতিদিন সকালে দোকান খুললে মৌমাছির দল আসে, সন্ধ্যায় চলে যায়। এই মৌমাছি কখনো কাউকে কামড় দেয় না, তবে আঘাত করলে দেয়।

জাকারিয়ার ভালোবাসা ও যত্নে তাঁর দোকানে মৌমাছির দল নিরাপদ বোধ করে, এ কথা হয়তো বলা যায়। কেননা, তাঁর দোকানের পাশে আরও কয়েকটি দোকান রয়েছে। সে দোকানের চিনির পাত্রে মৌমাছির অবশ্য তেমন ভিড় দেখা গেল না।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আরেক পাশের ফটকের সামনে চায়ের দোকানের চিনির পাত্রেও মৌমাছির দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকানসহ মিষ্টির দোকানেও মৌমাছির দেখা পাওয়া যায়।

  • ঢাকায় সাড়ে ৮ ভাগেরও কম সবুজ এলাকা ।
  • প্রকৃতিতে খাদ্যসংকট।
  • কৃত্রিম খাদ্যের দিকে ছুটছে মৌমাছি।

চায়ের দোকানে মৌমাছি কেন?

চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরে ২০ ভাগ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন, সেখানে আছে সাড়ে ৮ ভাগের কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় পর্যাপ্ত গাছপালা ও ফুল না থাকায় খাদ্যসংকটে থাকে মৌমাছি। প্রকৃতিতে খাদ্যসংকট থাকায় মৌমাছি চায়ের দোকানে থাকা চিনির মতো কৃত্রিম খাদ্যের দিকে ছুটছে।

প্রকৃতিতে মৌমাছির খাদ্যের সংকট আছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকা শহরে বেশি গাছপালা নেই। গাছে যখন ফুল থাকে, তখন মৌমাছি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। যখন ফুল না থাকে, তখন মৌমাছি চিনি, গুঁড়, মিষ্টির মতো কৃত্রিম উৎসের দিকে যায়।

দেশে বেশ কিছু প্রজাতির মৌমাছি আছে। কিছু প্রজাতির মৌমাছি ছোট ছোট দল বেঁধে থাকে। মধু দেয় না, নিজেরা যা জোগাড় করে, তা নিজেরাই খায়। এদের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতির মৌমাছির চিনির মতো কৃত্রিম জিনিসে আসার প্রবণতা আছে। তবে প্রকৃতিতে পর্যাপ্ত খাবার থাকলে সাধারণত কৃত্রিম খাদ্যের দিকে মৌমাছি ঝোঁকে না বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে