জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের পূর্বঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ তবে জুলাই হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও নূন্যতম সংস্কারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তফসিল ঘোষণার তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করলে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে জাকসুর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা৷
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নির্ধারিত সময়ে জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল শেষে রেজিস্ট্রার ভবনের সম্মুখে করা অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সিদ্ধান্তের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিকেলে জাকসুর আগে 'সংস্কার কমিশন' গঠন, জুলাইয়ে আন্দোলনরতদের উপর হামলাকারীদের বিচারসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শাখা ছাত্রদল। এ ঘটনার পর নির্ধারিত সময়ের (১ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে পালটা বিক্ষোভ-মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। 'জাকসুর পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বটতলা থেকে মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি শহীদ মিনার, অমর একুশে হয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে পরিবহন চত্বর হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা তফসিল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানালেও পরবর্তীতে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে তফসিল ঘোষণার সময়সীমা বেঁধে দেয়৷ এর ব্যতিক্রম হলে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধের আল্টিমেটাম দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেন৷
ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার এবং ১৫ ই জুলাই শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং আইন শৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর যারা জড়িত তাদের বিচার দাবিতে আমরা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম। সেই দাবির আপডেট জানতে আজকে আমাদের এই বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি। আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে ৪৮ ব্যাচের নৃবিজ্ঞানবিভাগের শিক্ষার্থী মেহের আফরোজ শাওঁলি বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা চাইনি আবার ছাত্রলীগের মতো কেও ছড়ি ঘুরাক। ত্রাশের রাজনীতি চলুক। কারা জাকসু বানচাল করতে চায় তাদের আমরা চিনি। প্রশাসনের সাহস কিভাবে হয় অছাত্রদের প্রশাসন বিল্ডিংয়ের সামনে আন্দোলন করতে দেয়। ভিসি আমাদের ভয় দেখায় জাকসু দিতে গিয়ে লাশ পড়লে তখন কি হবে। ভিসিকে বলতে চাই এসব নাটক কম করো পিও। আজকের মধ্যেই জাকসুর তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
এদিকে ১৪-১৭ জুলাই সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা, নির্দিষ্ট সময় পার হলেও অবশিষ্ট থাকা হলগুলোর শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় ও নূন্যতম সংস্কারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তফসিল ঘোষণার তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত পরিবেশ পরিষদের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান এবং পরিবেশ পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম স্বাক্ষরিত এক বার্তায় শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত 'পরিবেশ পরিষদের' সভায় গৃহীত এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানানো হয়৷
বার্তায় আরও বলা হয়, সে লক্ষ্যে পরিবেশ পরিষদের পরামর্শক্রমে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লেখিত সংস্কার কমিটি আগামী ৪ কর্মদিবসের মধ্যে সংস্কার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা থাকলেও উল্লেখিত কারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুবিধার্থে তফসিল ঘোষণার তারিখ পুণ:নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান হয়। জাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্রের সংস্কার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশ নিয়ে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন যৌক্তিক সময়ে অনুষ্ঠানের জন্য বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে ১১ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা, ২১ জানুয়ারি পরিবেশ পরিষদ ও ২৪ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়৷ এছাড়া রোডম্যাপ অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল।
যাযাদি/ এসএম