মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়েও সমাবর্তনের মুখ দেখেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  ২৭ মে ২০২৫, ১৭:০৮
প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়েও সমাবর্তনের মুখ দেখেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

স্নাতক সম্পন্ন করার পর কালো গাউন পরে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠা সমাবর্তনের দিনটি শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি বিশেষ স্মৃতির দিন। সমাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে মূল সনদ গ্রহণ করে থাকেন। তবে প্রতিবছর সমাবর্তনের আয়োজনের নিয়ম থাকলেও কোনো সমাবর্তন আয়োজন না করেই দিব্যি এক যুগেরও বেশি সময় পার করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই বেড়ে চলছে আনুষ্ঠানিক এই স্বীকৃতির দিন থেকে বঞ্চিত হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন পর্যন্ত ১৩টি ব্যাচের আবর্তন হয়েছে এবং স্নাতক সম্পন্ন করে বের হয়েছেন ৮টি ব্যাচের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তন অনেকটাই যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য।

জানা যায়, গত বছরে সমাবর্তন আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তৎকালীন উপাচার্য ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ জানালে রাষ্ট্রপতি সেই সমাবর্তনে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে তা বাস্তবায়নে পরবর্তীতে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি৷

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমাবর্তন না হওয়ায় মূল সনদের পরিবর্তে সাময়িক সনদ দিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়েছে তাদের। এছাড়াও মূল সনদ না পাওয়ায় বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার জন্যও অনেককেই পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে৷

এ নিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজেদের হতাশা প্রকাশ করছেন। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং উদ্যোগহীনতার কারণেই এতদিনেও আয়োজন হয়নি সমাবর্তনের।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহাম্মদ খাজা আহমেদ বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছি কয়েক বছর আগে, কিন্তু এখনো সমাবর্তন হয়নি—এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের পরিশ্রম ও স্বপ্ন পূরণের প্রতীক। এই সমাবর্তনের অনুপস্থিতি আমাদের মধ্যে একধরনের অপূর্ণতা তৈরি করেছে। তাছাড়া, মূল সনদ না পাওয়ায় অনেক সময় চাকরি বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয়, যেখানে প্রোভিশনাল সনদ যথেষ্ট নয়।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, অনতিবিলম্বে সমাবর্তন আয়োজনের জন্য একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা ও পরিকল্পনা ঘোষণা করা হোক। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে একটি গৌরবোজ্জ্বল সমাবর্তন আয়োজন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।’

লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিল্লাত হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য স্মৃতিকে স্বযত্নে ধরে রাখতে কাঙ্ক্ষিত একটি মূহুর্ত হলো সমাবর্তন। এটা শুধু সনদপ্রাপ্তির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নয়। বরং কালো গাউন, চারকোণা টুপি গর্ব আর অনুপ্রেরণার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষাজীবনে সমাবর্তনের অভিপ্রায় থেকে পুনরায় মিলিত হোক প্রাণে প্রাণে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে নবনিযুক্ত উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীদের পেশ করা ৮২টি দাবির মধ্যে চলতি বছরে সমাবর্তন আয়োজন করার দাবিও উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য (অন্তর্বর্তীকালীন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, ‘চার বছর পড়াশোনা শেষে সব শিক্ষার্থী সমাবর্তনের আশায় থাকেন। আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে