শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

শুভ জন্মদিন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩৪
শুভ জন্মদিন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
শুভ জন্মদিন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধারে তিনি একজন বেতার, মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার, আবৃত্তিকার, পরিচালক, লেখক ও সংগঠক। রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বিটিভির মহাপরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপত্র পান। তার দুই মাস পর ১৯ এপ্রিল তিনি বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড তুলে দিয়ে গ্রেডিং সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা করেন।

দেশের খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক এই ব্যক্তিত্ব আজ স্পর্শ করলেন জীবনের চুয়াত্তরতম বসন্তে। ১৯৫০ সালের এই দিনে (২৩ সেপ্টেম্বর) বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাতে মুঠোফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেই উল্টো যায়যায়দিন পরিবারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি জানি প্রতি বছরের মতো এবারও আমার বিশেষ দিন উপলক্ষে যায়যায়দিন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কুশল বিনিময় করবে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। প্রতি জন্মদিনের তারিখটি মনে রেখে আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য এই পত্রিকার কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ এবারের জন্মদিনটাও কি আগের মতো সাদামাটাভাবেই পালন করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রথিতযশা তারকা বলেন, ‘ঠিকই ধরেছেন, আসলে জন্মদিন নিয়ে এখন আর আমার নিজের কোনো বিশেষ পরিকল্পনা থাকে না। কেক কাটি পরিবারকে নিয়ে। আর আমার সহকর্মী, ভক্ত-অনুরাগীদের কাছ থেকে দিনভর জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা পাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খুদে বার্তা আসে। এসব বিষয় খুব ভালো লাগে। এই বয়সে এসে এটাই জন্মদিনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এবং তৃপ্তি বলে মনে হয়।’

তার শিক্ষাজীবন শুরু গোপালগঞ্জের এসএম মডেল স্কুলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করে ১৯৮৫ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। সেটা আর ছাড়তে পারেননি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত কলাম লিখছেন এখনও।

নন্দিত এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশির দশকের শুরুতে সকাল সন্ধ্যা নামক টিভি সিরিয়ালে ‘শাহেদ’ চরিত্রে অভিনয় করে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা পান। টেলিভিশন তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিলেও মঞ্চই ছিল তার অভিনয়ের মূল পীঠস্থান। ঢাকা থিয়েটারের দর্শকপ্রিয় ‘কীর্তনখোলা’, ‘পাচ্য’, ‘বনপাংশুল’, ‘শকুন্তলা’ ও ‘বাসন’সহ অনেক নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

১৯৮৪ সালে খ্যাতিমান নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় ‘আগামী’ নামের স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয়। এরপর ‘একাত্তরের যিশু’, ‘মহামিলন’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘আধিয়ার’, ‘আমার আছে জল’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘গেরিলা’, ‘মৃত্তিকা মায়া’ ও ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ইত্যাদি সিনেমায় দর্শক উপভোগ করেছেন তার অসাধারণ অভিনয়শৈলী। বর্তমানে টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও কাজ করতে দেখা যাচ্ছে তাকে।

তার অভিনয় জীবনের এক বিশেষ অধ্যায় হলো ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটক। প্রয়াত সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে থেকে নাটকটি নির্মাণ ও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নাটকটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও মুখোশ উন্মোচন করা হয়। নাটকটি লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে একাধিকবার মঞ্চস্থ করা হয়।

সাংবাদিকতার ছাত্র ছিলেন পিযূষ বন্দোপাধ্যায়। নব্বইয়ের দশকে দৈনিক লালসবুজ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন তিনি। মৌলিক সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, ছড়া এবং সম্পাদনাসহ ১৬টি প্রকাশিত গ্রন্থও রয়েছে তার।

তার সাংগঠনিক দক্ষতার কথা না বলেই নয়। পিয়ংইয়ং ও উত্তর কোরিয়ায় বিশ্বছাত্র-যুব সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবেও যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে ১৭৫টি দেশের ২৫ লাখ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অংশ নিয়েছেন নিউ ইয়র্কে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে। এ ছাড়া একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফোবানা সম্মেলন, বার্লিনে আন্তর্জাতিক লোকউৎসব, কলকাতায় আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব এবং কায়রোতে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রকালীন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা এক সময় সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।

এই সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই সরকার তাকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও দিয়েছিল। এর বাইরে ষাটের দশকের শেষের দিকে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি সাহচর্যে আসেন। নাট্যজন ও ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে শেখ কামালের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি।

১৯৮৫ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ যুব ঐক্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং যুবসংগ্রাম পরিষদের নেতা হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখেন। বাংলাদেশের সব যুব সংগঠন নিয়ে যুবসংগ্রাম পরিষদ গঠনে তার অনন্য ভ‚মিকা ছিল। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে তুলেছেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামের একটি অনবদ্য অরাজনৈতিক সংগঠন। তার এই দীর্ঘ চলার পথে নানা বাধাও এসেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির কোপানলে পড়েছেন বহুবার। নানা সময়ে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক ও ঢাকায় একাধিকবার তার জীবননাশের চেষ্টাও করা হয়। তবুও থেমে নেই তার এই পথচলা।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে