শিমুল ফুল নিয়ে আছে আমাদের অনেক স্মৃতি। তবে সেটা লালটুকটুকে শিমুল ফুল। প্রকৃতির মাঝে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখা মিললো দৃষ্প্রাপ্য হলূদ শিমুলের। মনে পড়ে গেলো ছেলেবেলায় নানাবাড়িতে যে বিশাল কান্ডের সুউচ্চ শিমুল দেখেছি, তেমনটি আর কোথাও দেখিনি। গাছের ডালে ডালে টিয়া পাখির বাসা ছিলো। ছোট বেলার যে শিমুল গাছগুলো এত উচু ছিলো তা এখন আর চোখেই পড়ে না। ফাল্গুন মাসে গাছতলায় অনেক ফুল ছড়িতে থাকতো। সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে গাড়ি বানিয়ে আমরা খেলায় মেতে উঠতাম। শিশুল গাছের নিচে ধুলোমাখা শৈশব কেটেছে আমাদের। তবে মানুষের যান্ত্রিক জীবনে এগুলোর আনন্দ হারাতে বসেছি। তবে এতদিন শুধু লাল রঙের শিমুল দেখলেও এবার সন্ধান মিলল হলুদ শিমুলের। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কারিগর পাড়া মহল্লার একটি বাড়িতে মাঝারি উচ্চতার একটি হলুদ শিমুল আছে। হলুদ শিমুল সাধারণ শিমুলেরই আলাদা রকমফের। ভিন্ন কোন প্রজাতি নয়। গাছের গড়ন, প্রস্ফুটনকাল এবং ফুলের বিন্যাস একই রকম। ব্যতিক্রমী হলো হলুদ রঙ্গের ফুল সংখ্যায় খুবই কম।
বসন্তে যে ক'টি উজ্জ্বল ফুল আমাদের চারপাশ আলোকিত করে রাখে, শিমুল তার মধ্যে অন্যতম। গ্রীষ্ফেম যেমন অনেক দূর থেকে কৃষ্ণচূড়া ফুল চোখে পড়ে, তেমনি বসন্তে গ্রামের সবুজ পটভূমিতে শিমুলের বর্ণিল উচ্ছ্বাস মাতিয়ে রাখে চারপাশ। শিমুল বিরাট আকারের পাতাঝরা বৃক্ষ। শীতের হিমেল হাওয়ার প্রথম ছোঁয়াতেই এ গাছের পাতা ঝরে। তারপর কিছুদিন মৃতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। বসন্তের একটু ছোঁয়া পেলেই রাশি রাশি ফুল ফুটতে শুরু করে। ধীরে ধীরে কাঁচা-সবুজ রঙের দু-এক স্তবক পাতা উঁকি দেয় ডালে ডালে। শিমুলের পাতা গড়নের দিক থেকে দেখতে করতলের মতো। শাখা-প্রশাখার আগায় পাঁচ থেকে সাতটি পাতা একসঙ্গে থাকে। ফুল সাধারণত গাঢ়-লাল রঙের হলেও তাতে কমলা ও হলুদ রঙের মিশ্রণ চোখে পড়ে। ফুল বেশ বড় ও ভারি, পাপড়ি মুক্তভাবে ছড়ানো, ঘনবিন্যস্ত ও দলমন্ডল ঘণ্টাকৃতির। পরাগচক্র বহু কেশরের সমষ্টি এবং পাপড়ির বিপরীতে পাঁচটি গুচ্ছে বিভক্ত। শালিক এবং অন্যান্য পাখি প্রস্ম্ফুটিত শিমুলের সহযোগী। ফুলের পরপরই আসে ফল। ফল লম্বাটে, রুক্ষ, কঠিন, ভঙ্গুর ও বিদারী। শিমুলের পাকা ফল একসময় নিজে নিজেই ফেটে পড়ে। তারপর তুলা ও বীজ বাতাসে ভেসে ভেসে অনেক দূর অবধি ছড়িয়ে পড়ে। শিমুলের কাঠ নরম ও অস্থায়ী। সাধারণত দেশলাই ও বাক্স প্যাকিংয়ের কাজেই বেশি ব্যবহূত হয়। শিমুলের তুলা বালিশ, তোশক ও গদি তৈরিতে কাজে লাগে।
যাযাদি/ এস
Copyright JaiJaiDin ©2021
Design and developed by Orangebd