রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্বের ৫২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে মৎস্য খাত। আমরা জানি, চারটি মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে দেশের শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, অর্থনীতি, গবেষণা ও প্রকৌশলসহ সব খাতকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর করা। কৃষির উপসেক্টর মৎস্য খাতকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, বেকারত্ব দূরীকরণ, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অল্প পুঁজিতে অধিক লভ্যাংশ অর্জনসহ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হবে।
ইমরান ছিদ্দিকি
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষ জীবিকার জন্য পূর্ণকালীন এবং খন্ডকালীন ভিত্তিতে মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রমের ওপর নিভর্রশীল। গত চার দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৬ গুন বেড়েছে। ১৯৮৩-৮৪ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৭ দশমিক ৫৪ লাখ টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৯ লাখ টন- যা ২০০৫-০৬ সালের মোট উৎপাদনের ২৩ দশমিক ২৯ লাখ টন থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ একটি অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ সময়ের মধ্যে অ্যাকুয়াকালচারের উৎপাদনও প্রায় ২২ গুণ বেড়েছে। অ্যাকুয়াকালচারে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ৫৭ শতাংশ অবদান রাখে অ্যাকুয়াকালচার। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও স্বীকৃত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়। বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম; সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টসিয়া উৎপাদনে অষ্টম এবং ফিনফিস উৎপাদনে ১১তম স্থানে রয়েছে। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ ও এশিয়ায় তৃতীয়।

এর মধ্যে বাংলাদেশের ইলিশ ও বাগদা চিংড়ি জিআই পণ্য হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে- যা আমাদের জন্য গর্বের। মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বিশ্বের ৫২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৯ হাজার ৮৮১ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণে মৎস্য সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, আমাদের খাদ্যের প্রাণিজ আমিষের ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে মৎস্য খাত। আমরা জানি, চারটি মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে দেশের শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, অর্থনীতি, গবেষণা ও প্রকৌশলসহ সব খাতকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর করা। কৃষির উপসেক্টর মৎস্য খাতকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, বেকারত্ব দূরীকরণ, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অল্প পুঁজিতে অধিক লভ্যাংশ অর্জনসহ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য সেক্টরের সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক।

ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্মার্ট টেকনোলজির ব্যবহার করে কয়েক বছরে ইলিশের উৎপাদন গাণিতিক হারে বেড়েছে। ইলিশ ব্যবস্থাপনা বলতে মূলত প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ ও জাটকা এবং মা ইলিশের চলাচলের পথ সচল রাখা, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা। আমরা যদি প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে পরিপূর্ণ ডিম ছাড়তে দেওয়া ও জাটকা ধরা বন্ধ করতে পারি তবে ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে বিভিন্ন গবেষণায় তা উঠে এসেছে।

দেশে রয়েছে ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সুবিশাল সমুদ্রসম্পদ- যেখানে রয়েছে অপার সম্ভাবনা ও আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার সম্পদ। বঙ্গোপসাগরে রয়েছে মৎস্য ভান্ডার- যার খুব অল্প পরিমাণ আমরা আহরণ করতে পারি; কারণ গভীর সমুদ্রের সব স্তর থেকে মাছ আহরণ করার মতো ট্রলার আমাদের নেই। আমাদের এই সুবিশাল সমুদ্র তথা বস্নু-ইকোনমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সমুদ্রে মাছ চাষ বা মেরিকালচার করা জরুরি- যা আমাদের দেশের মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে বিশ্বে মাছ উৎপাদনে প্রথম বা ২য় স্থান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এ বিষয়ে মৎস্য বিজ্ঞানী আরিফ রহমান বলেন, বর্তমানে দারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও রাশিয়াসহ বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মাছ রপ্তানি হচ্ছে। দেশে ৪৭.৫৯ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়। ২০৪১ সালে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ লাখ টন। মাছ থেকে চিপস, কেকসহ অন্যান্য মৎস্যজাত পণ্য তৈরি করলে ভোক্তা বাড়বে। মাছের বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে কাজ করলে সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে কৃষিঋণ, প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ সরকার নানা রকম সহায়তা দিচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে মানুষের মাছ খাওয়া বেড়েছে ১২২ শতাংশ। বিশ্বের সাতটি দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অর্ধেকের বেশি আসে মাছ থেকে। বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের ৫৮ শতাংশ আসে মাছ থেকে। আর বিশ্বে গড়ে প্রাণিজ আমিষের ২০ শতাংশ আসে কেবল মাছ থেকে। এদিকে গত ১০ বছরে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ প্রায় শতভাগ বেড়েছে। ২০১০ সালের সর্বশেষ খানা জরিপে উঠে এসেছে- বছরে বাংলাদেশে একেকজন মানুষ প্রায় ১২ কেজি মাছ খায়। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার ভাষ্যমতে, কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে আমিষের সবচেয়ে সুলভ উৎস হয়ে উঠতে যাচ্ছে মাছ। বিশেষ করে অ্যাকুয়াকালচারে ব্যাপক অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় মাছের উৎপাদন ও জোগান চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লেও মাছের ওপর এর প্রভাব সামান্য থাকবে। বরং চাষের মাছ এখনকার চেয়েও সুলভে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সূত্রমতে, দেশের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত রুই, কাতলা, কৈ, তেলাপিয়া, কালিবাউশ ও সরপুঁটির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। দেশের পুকুরে যত মাছ চাষ হচ্ছে, তার অর্ধেকের বেশি এসব জাতের। তারা দেশের বিলুপ্তপ্রায় ২৪ প্রজাতির মাছের চাষ পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন। সে তালিকায় টেংরা, পাবদা ও মলার মতো পুষ্টিকর মাছ রয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ পুকুর থেকে আসছে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে উৎপাদন প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে। মাছ চাষ ও ব্যবসায় বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত আছে।

\হদেশের জলাশয়ে প্রায় ৮ শত প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের ঐতিহ্যের অংশ মিঠাপানির এসব সুস্বাদু মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা পরিচালনা করে এ যাবত ২৪টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টটিউট বর্তমানে কাকিলা, কাজলী, বাতাসি, রানী, ঢেলা ইত্যাদি আরও ১০ প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে। এসব মাছও অদূর ভবিষ্যতে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। অপরদিকে দেশে প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক। লাইভ জিন ব্যাংকে ইতোমধ্যে ৮৫ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে।

ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে; বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদনদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ উৎপাদন। বিলুপ্ত ৬৪ প্রজাতির মাছ উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া মিলছে। ইতোমধ্যে ১৯ প্রজাতির মাছ উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি বিলুপ্ত ৪৫ প্রজাতির মাছ উৎপাদনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ চলছে। বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে ৬টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছে।

গত কয়েক দশকে দেশে চাষ করা মাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। শিং, মাগুর, পাবদার মতো আরও বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছিল। গবেষণার মাধ্যমে এই জাতের মাছ এখন চাষ হচ্ছে। চাষ করা মাছ থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয়। সাগরে মাছ ধরার নতুন নতুন সরঞ্জাম কেনা হলে মাছ উৎপাদন বেড়ে যাবে। ওই সব যন্ত্রের মাধ্যমে কোন এলাকায় বেশি মাছ আছে তা নিশ্চিত হওয়া গেলে সাগর থেকে মৎস্য আহরণ আরও বেড়ে যাবে। তাতে সার্বিকভাবে মৎস্য উৎপাদন আরও বাড়বে।

মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আমরা মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, এটা গোটা জাতির জন্য অনেক বড় অর্জন। বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য চাষ নিবিড়করণ, পোনা অবমুক্তি কার্যক্রম ও বিল নার্সারি স্থাপন, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন ও সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব চিংড়ি ও মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ, মাছের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন, প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, প্রজননক্ষম মাছের কৌলিতাত্তিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি দেশে বিপুল পরিমাণ পাঙাশ, তেলাপিয়া ও রুইজাতীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীনের উদ্ভাবিত মাছের জাত এখন বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন শিক্ষিত তরুণরা চাকরির দিকে না ঝুঁকে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো মাছ ও কৃষিকাজে সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে