শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শীতকালীন সবজির চমকপ্রদ উপকারিতা

ঋতুর ধারাবাহিকতায় শীত কড়া নাড়ছে দরজায়। বাজারে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মোটরশুঁটি, ব্রকলি, শালগম, মুলা, পালংশাক, পেঁয়াজকলি, লাউ চলে এসেছে। এসব সবজি যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর পুষ্টিও বেশি। তাই শীতে পুষ্টিমান বাড়াতে প্রচুর শাকসবজি গ্রহণ করুন। শীতের সময় বাজারে বেশি দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, লাউ, ব্রোকলি, মোটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি। পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন। অস্থিক্ষয় রোধেও শরীরে রক্তকণিকা বা পস্নাটিলেট গঠনে শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই এর ঘাটতি পূরণে খেতে হবে বেশি বেশি শীতকালীন শাকসবজি। শীতকালীন শাকসবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই- যা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে আনে এবং চুলপড়া রোধ করে। শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রায় সবারই পছন্দের। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটমিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ও পানি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার রয়েছে।
ইমরান ছিদ্দিকি
  ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ছয় ঋতু দেশ বাংলাদেশ। শীতকাল মানেই এক অন্য অনুভূতি। বছরের প্রায় সব সময় কম বেশি শাকসবজি হয়ে থাকে। তবে ষড়ঋতুর আবর্তে বাংলাদেশে শীতকালই শাকসবজির জন্য উপযুক্ত সময়। বাহারি শাকসবজিতে সমৃদ্ধ শীতকাল মাছে-ভাতে বাঙালি পরিচয়টিকে যেন আরও পাকাপাকি করে তোলে একটি পরিপূর্ণ আহারের মাধ্যমে। শীতকালে এসব মৌসুমি শাকসবজি বা ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ সম্ভব। খাদ্যের উপাদানের মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেলসের অন্যতম উৎস হলো শাকসবজি।

ঋতুর ধারাবাহিকতায় শীত কড়া নাড়ছে দরজায়। বাজারে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মোটরশুঁটি, ব্রকলি, শালগম, মুলা, পালংশাক, পেঁয়াজকলি, লাউ চলে এসেছে। এসব সবজি যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর পুষ্টিও বেশি। তাই শীতে পুষ্টিমান বাড়াতে প্রচুর শাকসবজি গ্রহণ করুন। শীতের সময় বাজারে বেশি দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, লাউ, ব্রোকলি, মোটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি। পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন। অস্থিক্ষয় রোধেও শরীরে রক্তকণিকা বা পস্নাটিলেট গঠনে শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই এর ঘাটতি পূরণে খেতে হবে বেশি বেশি শীতকালীন শাকসবজি। শীতকালীন শাকসবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই- যা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে আনে এবং চুলপড়া রোধ করে। শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রায় সবারই পছন্দের। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটমিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ও পানি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার রয়েছে।

ফুলকপিতে এমন কিছু উপাদান আছে- যা কিডনির পাথর গলায় ও ক্যান্সার নিরাময়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। ফুলকপিতে কোনো চর্বির মাত্রা নেই। ফুলকপি তাই কোলেস্টরোলমুক্ত- যা কিনা শরীরের বৃদ্ধি ও বর্ধনে বিশেষ উপযোগী। পাশাপাশি বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন-সি ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে এবং ওজন কমাতে বাঁধাকপির জুড়ি নেই। তাছাড়া বাঁধাকপি আলসার প্রতিরোধে সক্ষম। পুষ্টিগুণে লালশাক ও পালংশাক অন্য শাকগুলোর তুলনায় একটু এগিয়ে। প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে রয়েছে প্রায় ৩৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম; অন্যান্য পুষ্টিগুণও অন্য শাকের তুলনায় লালশাকে বেশি। আর পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, আয়রন ও ফলিক এসিড- যা আমাদের দেহের জন্য জরুরি। পালংশাক আমাদের শরীরে আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ছাড়াও হৃদরোগ এবং কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শীতকালীন সবজি মোটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি- প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ১২৫ কিলোক্যালরি। উদ্ভিজ আমিষের বড় ভান্ডার হলো শিম। শিমে আমিষ ছাড়াও স্নেহ ও ফাইবারজাতীয় খাবার অংশ থাকে। শিমের আঁশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। রক্তে কোলেস্টরোলের মাত্রা কমায়- যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলী ও পিস্নহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূর করে এবং পুষ্টি প্রদান করে থাকে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে উন্নত দেশের লোকজন টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্য, পালংশাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকে। ক্যালরিতে ভরপুর টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি- যা মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া ভিটামিন-সির অভাবজনিত স্কার্ভি ও চর্মরোগ প্রতিরোধে টমেটো বেশ কার্যকরী। টমেটোতে বিদ্যমান অন্য এক উপাদান হলো লাইকোপেন- যা ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট- যা কিনা প্রকৃতির আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে।

গাজর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চোখ ও দাঁতের সুরক্ষায়, লিভার সুস্থ রাখতে ও ক্যানসার প্রাতরোধক হিসেবে খেতে পারেন শীতকালীন সবজি গাজর। এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন-বি-৬, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, ফাইবার, ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। গাজরে বিদ্যমান বিটাক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং গাজরে প্রয়োজনীয় ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। বেশি বেশি গাজর খেলে পেট ভরবে কিন্তু বেশি ক্যালরি যোগ হবে না। তাই শরীরের ওজন কমাতে ও সুস্থ ত্বক পেতে বেশি বেশি গাজর খান।

ব্রোকলি আমাদের দেশের শীতকালীন নতুন একটি সবজি- যা দেখতে অনেকটা সবুজ ফুলকপির মতো। ব্রোকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। এ সবজিটি চোখের রোগ ও অস্থিবিকৃতিসহ প্রভৃতি উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মনকাড়া সতেজ সব সবজি। যদিও দামটা এখনো বেশি। শীতের সবজি পুষ্টিগুনে ভরপুর। শরীরের সুরক্ষায় দরকারি। তাই পরিমিত পরিমাণ শাকসবজি খান। যারা এগুলো একটু বেশি খান তারা অনেক ভালো থাকেন, সতেজ থাকেন। শরীরের প্রয়োজনীয় যত ভিটামিন ও মিনারেলস্‌ প্রায় সবই সবজিতে আছে। তাই শীতের সবজি খেয়ে শরীরটা ফিট রাখা সম্ভব।

ধনিয়াপাতা এখন সারা বছর পাওয়া গেলেও মূলত এটি শীতকালীন সবজি। ধনিয়াপাতা সরাসরি সালাদ হিসেবে এবং রান্না করে উভয়ভাবে খাওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে ও ফলিক এসিড রয়েছে- যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। ধনিয়াপাতার ভিটামিনগুলো আমাদের ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে এবং মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। মোটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি- প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ১২৫ কিলোক্যালরি।

মুলার পাতায় ভিটামিন-এ এর পরিমাণ বেশি। প্রচুর বিটা ক্যারোটিন, আয়রন ও ভিটামিন সি আছে। মুলা বিভিন্ন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ওজন হ্রাস করে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে। লেটুস পাতা এটি খুব উপকারী সবজি। এই সবজি আঁশযুক্ত বিধায় হজমে সহায়তা করে। আয়রন গর্ভবতীদের জন্য খুব প্রয়োজন। লেটুসে প্রচুর আয়রন রয়েছে। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, পটাসিয়াম আছে লেটুস পাতায়। লেটুস পাতার সোডিয়াম, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩ শরীরের অঙ্গে পানি জমে যাওয়া রোধ করে। ভিটামিন এ-তে আছে প্রচুর- যা বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। চোখের জন্য অনেক উপকারী। রক্তের সুস্থতার জন্য পটাসিয়াম প্রয়োজন। লেটুস পাতায় যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম লেটুস পাতায় ১৫ ক্যালরি, ২৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৯৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ২.৯ গ্রাম কর্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এ, বি, সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আছে।

পুষ্টি বিশেষজ্ঞ সায়লা রহমান বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালের শাকসবজি এবং ফলের স্বাদ ও পুষ্টি বেশি থাকে। প্রায় সব শাকসবজিতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান- যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং ত্বকের সজিবতা ধরে রাখে। এ ছাড়া প্রায় সব শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে- যা দেহের পানির ঘাটতি পূরণে সক্ষম। শাকসবজির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে। শাকসবজির আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালির ক্যানসারসহ বিভিন্ন ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। শীতকালীন শাকসবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই- যা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং চুলপড়া রোধ করে।

শীতেকালে চাষকৃত সবজিগুলোর কদর বেশি। সবজির পুষ্টি গুণও অধিক। শীতের প্রতিটি সবজিতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়া প্রায় সব শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পানি- যা দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমাদের ত্বকের সজিবতা ধরে রাখে, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক ও শরীরকে সুস্থ রাখে। শাকসবজির আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালির ক্যানসারসহ বিভিন্ন ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য এসব শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে