শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ফাল্গুন মাসের কৃষি

ফাল্গুন মাসের দ্বিতীয়পক্ষ থেকে গম পাকা শুরু হয়। গমের শীষের শক্ত দানা দাঁত দিয়ে কাটলে যদি কট কট শব্দ হয়, বুঝতে হবে গম কাটার সময় হয়েছে। সংগ্রহ করা বীজ ভালো করে শুকানোর পর ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময় জমিতে ভুট্টার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ গাছের মোচার রঙ ধারণ করলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে।
কৃষিবিদ আব্দুল আজিজ
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ফাল্গুন মাসের কৃষি

ফাল্গুন মাস (ফেব্রম্নয়ারি-মার্চ) কৃষির জন্য সব সময়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপেই কৃষিতে শতভাগ সফলতা মিলবে। এ সময় মাঠের বোরো ধানের চারা রোপণের বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩/৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখুন। রোগ ও পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করুন এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে (আলোর ফাঁদ পেতে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করে) ধানক্ষেত বালাইমুক্ত রাখুন।

এ সময় ধানক্ষেতে উফরা, বস্নাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগ দেখা দেয়। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫ জি বা কিউরেটার ৫ জি প্রয়োগ করতে হবে। বস্নাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে এবং হেক্টরপ্রতি ৪০০ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি/বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতাফড়িং দমন করতে হবে।

ফাল্গুন মাসের দ্বিতীয়পক্ষ থেকে গম পাকা শুরু হয়। গমের শীষের শক্ত দানা দাঁত দিয়ে কাটলে যদি কট কট শব্দ হয়, বুঝতে হবে গম কাটার সময় হয়েছে। রোদেলা দিন দেখে রিপার/রিপার বাইন্ডারের মাধ্যমে কম খরচে স্বল্পসময়ে গম সংগ্রহ করা যায়। বীজ ফসল কাটার পর রোদে শুকিয়ে খুব তাড়াতাড়ি মাড়াই করতে। সংগ্রহ করা বীজ ভালো করে শুকানোর পর ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।

এ সময় জমিতে ভুট্রার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ গাছের মোচা ড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতার রঙ কিছুটা হলদে হলে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। ভুট্টা (খরিপ) খরিপ মৌসুমে ভুট্টাচাষ করতে চাইলে এ মাসে বীজবপন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নিন। অধিক ফলনের জন্য উচ্চফলনশীল আধুনিক জাত চাষ করা ভালো। ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫।

ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। সারিতে পাটের বীজবপন করলে আন্তঃপরিচর্যা সহজ হবে। ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে। ফাল্গুন মাসে রোপণ উপযোগী পাটের ভালো জাতগুলো হলো- সিসি-৪৫, বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ (বিজেসি-৩৯০), তোষা পাট (ও ৯৮৯৭, ৩-৭২)। স্থানীয় বীজ ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাতগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়িভাবে ৫/৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ১৭ থেকে ২০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭-১০ সেন্টিমিটার রাখা ভালো। ভালো ফলনের জন্য শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেওয়ার সময় ৪০০ গ্রাম জিপসাম ও ২০ গ্রাম দস্তাসার দিতে হবে। চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয়বারের মতো শতাংশপ্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

এ মাসে বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাটা, কলমি শাক, পুঁইশাক, করলা, ঢঁ্যাড়স, বেগুন, পটল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন।

আমের মুকুলে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমনে গাছে মুকুল আসার পর। কিন্তু ফুল ফোটার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে প্রোপিকোনাজল অথবা মেনকোজেব গ্রম্নপের ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের আকার মোটরদানার মতো হলে গাছে দ্বিতীয়বার স্প্রে করা দরকার।

কাঁঠালের ফল পঁচা বা মুচি ঝরা সমস্যা এখন দেখা দিতে পারে। এ রোগের হাত থেকে মুচি বাঁচাতে হলে কাঁঠাল গাছ এবং নিচের জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল ভেজা বস্তা জড়িয়ে তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে। মুচি ধরার আগে ও পরে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার রোদে মিশ্রণ বা ডায়থেন এম ৪৫ অথবা রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া ফলিকুর নামক ছত্রাকনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ফুল আসার পর থেকে ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

বাডিং পদ্ধতিতে বরই গাছের কলম করতে পারেন। এজন্য প্রথমে বরই গাছ ছাঁটাই করতে হবে এবং পরে উন্নত বরই গাছের মুকুল ছাঁটাই করে দেশি জাতের গাছে সংযোজন করতে হবে। কলা, পেঁপে বাগানে পরিচর্যা বা যত্নে প্রয়োজনীয় কাজগুলো দেরি না করে এখনই সম্পন্ন করে ফেলুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে