শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনে কদর বাড়ছে ভুট্টার

ইমরান ছিদ্দিকি
  ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনে কদর বাড়ছে ভুট্টার

দেশে পোলট্রি শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভুট্টার চাহিদা ও উৎপাদন। একই সঙ্গে বাড়ছে আমদানির পরিমাণও। পোলট্রির পাশাপাশি পশু ও মৎস্য খাদ্যেরও অন্যতম প্রধান উপকরণ ভুট্টা। গবাদি পশুকে ঘাস হিসেবেও খাওয়ানো হয় এর গাছ। আবার মানুষের বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের তালিকায়ও ভুট্টার ব্যবহার অনেক। তৈরি হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত খাবার। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভালো দাম পাওয়ায় ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষক। গত এক দশকে আবাদি জমি বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।

নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে প্রতি বছরই দেশে বাড়ছে ভুট্টার আবাদ, বিপরীতে কমছে আমদানি। ভুট্টা চাষে কম সময়েই সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যান্য খাদ্যশস্যের চেয়ে কম পরিচর্যা ও কম সেচ খরচে ভালো ফলন হয় এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলে ভুট্টা চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বাড়ছে।

গত কয়েক বছরে ধানের দাম কম থাকায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় হাসি ফুটছে কৃষকের মুখেও। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ভুট্টার উৎপাদন ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে ভুট্টায়। জমির উবর্রতা শক্তি, অনুকূল আবহাওয়ায় বাংলাদেশে ভুট্টার আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে। ভুট্টা উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। ভুট্টা উৎপাদনের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের মধ্যে ২য় অবস্থানটি বাংলাদেশের। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে হেক্টরপ্রতি ভুট্টায় গড় উৎপাদন ৫ দশমিক ১২ টন। বাংলাদেশে এই হার ৬ দশমিক ৯৮ টন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রধান দানা ফসল ভুট্টা মেইজ, কর্ণ ও পপকন নামে পরিচিত। দেশে সবজিবিপস্নবের সঙ্গে যোগ হয়েছে ভুট্টাবিপস্নব। বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান দানাশস্য হিসেবে ভুট্টা গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে অবদান রাখছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভুট্টা চাষের বড় সুবিধা হলো রোগবালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম ঘটে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে আর্থিক সচ্ছলতা আসছে কৃষকদের। আবাদ ও উৎপাদনে নেই কোনো ঝুঁকি। ফলনে গমের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। দেশের কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখায় অবদান রাখছে ভুট্টা। কৃষি খাতের জিডিপি গণনায় বিবেচিত ১২৮টি ফসলের মধ্যে আগে প্রধান শস্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হতো গম, পাট, আলু, আউশ, আমন ও বোরো ধানকে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুট্টা। বিভিন্ন পরিসংখ্যান তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত এক দশকে দেশে ভুট্টার আবাদি এলাকা, উৎপাদন ও হেক্টরপ্রতি ফলন উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়েছে।

প্রতি বছর প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। এতে ভুট্টার একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। চাহিদা থাকায় চাষ বাড়ছে। ফলনেও সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশের দানাজাতীয় অন্যতম শস্য ভুট্টার জাত উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণা করে আসছে বাংলাদেশ ভুট্টা ও গম গবেষণা ইনস্টিটিউট। দেশের মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে অভাবনীয় সাফল্যের মূলে শস্যটির উৎপাদন বৃদ্ধিকে নির্দেশ করছেন গবেষকরা।

পরাগী ফসল হওয়ার কারণে ভুট্টার নতুন জাতের বৈশিষ্ট ধরে রাখতে দরকার পর্যাপ্ত জায়গা। আর এ জন্য এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৫০ একর জমি খুবই নগণ্য বলে জানান বিজ্ঞানীরা। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ভুট্টাবীজে ভালো ফলন হলেও কৃষক পর্যায়ে রয়েছে সরবরাহের ঘাটতি। ১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৯টি হাইব্রিড ও ৯টি কম্পোজিট ভুট্টার জাত অবমুক্ত করেছে এই প্রতিষ্ঠান।

মাছ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদন বাড়ায় ভুট্টার চাহিদাও বাড়ছে। প্রাণিখাদ্য তৈরির বড় অংশই ভুট্টা থেকে আসে। এর মধ্যে মুরগির খাদ্য তৈরিতে ৫৫ শতাংশ ভুট্টার দরকার হয়। এ হার গবাদি পশুর খাদ্যে ৩০ শতাংশ এবং মাছের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। এ তিন খাতে বছরে ৪৫ লাখ টন ভুট্টার চাহিদা রয়েছে। এদিকে মানুষের খাওয়ার উপযোগী মিষ্টি ভুট্টার চাহিদাও বাড়ছে। ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শস্যটির ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডবিস্নউএমআরআই)। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অধীন ছিল।

সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে ভুট্টার চাহিদা ৬০-৬৫ লাখ টন। যদিও প্রায় সমপরিমাণ এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের পরিমাণ ৬৪ লাখ ২২ হাজার টন। যদিও এক দশক আগে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাত্র ৩ লাখ ৭ হাজার হেক্টর জমিতে খাদ্যশস্যটি চাষ করে ২১ লাখ ২৩ হাজার টন উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছিল। সে হিসাবে এক দশকে আবাদি জমি বেড়েছে দ্বিগুণ আর উৎপাদন হয়েছে প্রায় তিন গুণেরও বেশি ভুট্টা। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে ভালো ফলন হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে ৫৬ লাখ ২৯ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ৪১ লাখ ১৬ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে ৪০ লাখ ১৫ হাজার টন ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে গমের আমদানি কমে যাওয়া এবং ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহারের কারণে খাদ্যশস্যটির চাহিদা বেড়েছে। তবে দেশে চাহিদার সমপরিমাণ উৎপাদন হলেও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩২ টন ভুট্টা আমদানি করতে হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে অবশ্য ২১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টন ভুট্টা আমদানি হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে ভুট্টা আনতে হয়েছে ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৬ টন। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৩২ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি করতে হয়েছে ১২ লাখ ৪৪ হাজার ২১১ টন ভুট্টা।

এদিকে ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য করা কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট পস্ন্যান সিআইপি১-এর চেয়ে সিআইপি৩ অর্থাৎ ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভুট্টার আবাদের হার অনেক বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চফলনশীল, লাভজনক ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে গমের স্থান দখল করছে ভুট্টা। 'ন্যাশনাল ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি পলিসি পস্ন্যান অব অ্যাকশন অ্যান্ড বাংলাদেশ থার্ড কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট পস্ন্যান মনিটরিং রিপোর্ট-২০২৩' শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ভুট্টার আবাদি জমি বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ। একই সময়ে গমের আবাদ কমেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। আবার ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভুট্টার আবাদি জমি বৃদ্ধি পেলেও গমের জমি কমেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হারে।

পোলট্রি, ডেইরি ও মৎস্য খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোলট্রি খাদ্য তৈরিতে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ ভুট্টার ব্যবহার হয়। পশুখাদ্যে ভুট্টার ব্যবহার প্রায় ১২ শতাংশ। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ঘাসের পরিবর্তে গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টার সাইলেজ। দৈনিক দানাদার খাদ্যের চাহিদা প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারে এ গোখাদ্য। আবার মৎস্য খাদ্যেও প্রায় ১০-১৫ শতাংশ ভুট্টার ব্যবহার হয়।

সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক দশকে (২০০৯-১৯) বাংলাদেশে জীবনমান উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ভুট্টা, পাট, মাংস ও দুধ উৎপাদন। এর পরই রয়েছে কন্দাল ফসল, উদ্যান ফসল, ডাল ও তেল শস্য উৎপাদন এবং মৎস্য চাষ। তবে কৃষকের জীবনমানে সবচেয়ে কম প্রভাব ফেলছে ধান উৎপাদন। কৃষকের দরিদ্রতা কমিয়ে আনতেও বড় ভূমিকা রাখছে ভুট্টার চাষাবাদ।

ভুট্টা উৎপাদন করে বাজারমূল্য ভালো পাওয়া যায় বলে জানান নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষক আবুল কালাম বলেন, 'প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা উৎপাদনে সব ধরনের খরচ বিবেচনায় নিলে প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। উৎপাদনশীলতা ভালো থাকায় ৪০ মণের মতো ভুট্টা পাওয়া যায় প্রতি বিঘায়। গত বছর এক মণ ভুট্টা ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি। অর্থাৎ ৪০ মণ ভুট্টা ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য ফসলে ভুট্টার মতো এত লাভ হয় না। তাছাড়া এখন ভুট্টার চাহিদা বেশি। বহুমুখী ব্যবহারের কারণে ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে।

ভুট্টা উৎপাদনের অর্ধেকই হয় রংপুর বিভাগে। উৎপাদনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ। জেলা হিসেবে দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটে ভুট্টার উৎপাদন বেশি। বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় ভুট্টা চাষ করে প্রায় এক লাখ কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিশেষ করে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের কৃষকরা সবেচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন ভুট্টা চাষে। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হচ্ছে লালমনিরহাটে। এটি এই জেলার ব্র্যান্ডিং ফসলে পরিণত হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের প্রায় এক লাখ কৃষক ভুট্টা উৎপাদনে জড়িত। এর মাধ্যমে তারা আশানুরূপ লাভবান হচ্ছেন বলে জানান। ভুট্টা চাষ তাদের স্বাবলম্বী করেছে। কৃষক আবু সামাদ জানিয়েছেন, গত বছর তারা প্রতি মণ ভুট্টা ১২০০-১৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। এতে অনেক লাভ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫-৪৫ মণ ভুট্টা উৎপন্ন হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর সিন্দুর্ণার কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, গত বছর ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। উৎপাদন পেয়েছিলাম ২৫০ মণ। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ভুট্টা বিক্রি করেছি ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ বছর ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।

জানা যায়, ভুট্টার বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ১০-১২ ভাগ। ভুট্টার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে উত্তম। শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধপানকারী মায়ের জন্য ভুট্টার তেল উত্তম। তাছাড়া ভুট্টাতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং সালফার এসব গৌণ খনিজ উপাদান বেশ ভালোই রয়েছে। চাষে শীর্ষ চুয়াডাঙ্গা জেলা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বহুমুখী ব্যবহার ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা এখন এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। চাষিরা অর্থকরী এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবার রেকর্ড পরিমাণে চাষাবাদ হয়েছে। তথ্যানুযায়ী দেশের সবগুলোর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা আবাদ হয় এ জেলায়।

মাছ বা অন্য প্রাণীজ খাদ্যের পাশাপাশি ভুট্টা খাবারের টেবিলেও জায়গা করে নিচ্ছে। বহুবিধ ব্যবহার বাড়ছে দানাদার এ শস্যের। সম্প্রতি বছরগুলোতে দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনও বেড়েছে। ভুট্টার কোনো অংশই ফেলে দিতে হয় না। উপরের পাতা গো-খাদ্য, ডালপালা জ্বালানি, মাড়াই করে ভুসি পোলট্রি খাবার ও আটা-ময়দা তৈরি হয়। ভুট্টা থেকে শিশু খাদ্য, গুস্নকোজ, বার্লি ও তেল হয়। ভুট্টার আটা-ময়দায় বিস্কুট ও পাউরুটি হয় সুস্বাদু। কাঁচা ভুট্টা পুড়িয়ে খাওয়া যায়। তৈরি হয় খই। ভুট্টার পপকর্ণ শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। মানুষের জন্য নানারকমের খাবার তৈরি করা যায় ভুট্টা থেকে। রুটি, আটা বা গোল আলুর সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, পুরি, ভুট্টার প্যানকেক, ভুট্টার বিস্কুট, ভুট্টা খিচুড়ি, ভুট্টা-চাল খিচুরি, ভুট্টা পোলাও, সবুজ ভুট্টার দানা, সিদ্ধ বা পুড়িয়ে অনেকভাবেই ভুট্টাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। বাংলাদেশে মূলত হাঁস-মুরগির ও গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার দানা ব্যবহার করা হয় বেশি। মৎস্য খাদ্যেরও একটি অন্যতম উপকরণ হলো ভুট্টা দানার গুঁড়া। চিকিৎসকদের মতে, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। ভুট্টা শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ভুট্টায় বিদ্যমান ভিটামিন-এ এবং সি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভুট্টা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। এটি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ভুট্টাতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে