আমেজ ফিরিয়ে দিতে পারে সচেতনতা
শারমিন জাহান, শিক্ষার্থী, ক্রিমিনোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ আক্রমণের পর থেকেই মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ দুই উৎসব ঈদুল আজহা এবং ঈদু উল ফিতরে যেন বাধা পড়ে গেল।
দুই বছর হতে চলল আমরা আমাদের সেই ব্যস্তময় পরিচিত জগৎ থেকে ছিটকে পড়ে আছি। আগে ঈদ আসবে, ছুটি দেবে, বাড়ি যাবÑ এর মধ্যে যে কি পরিমাণ আনন্দ তা এই কটা বছরে ভুলতেই বসেছি প্রায়।
এই কয়েকটা বছর ধরে অলস সময় পালিত হচ্ছে। ছুটি আর ছুটি, তাই আর আগের মতো ঈদের সেই আমেজটা নেই, ফিকে হয়ে গেছে ঈদের সেই সাজসাজ রব। ঈদে নতুন কাপড়, ঘুরতে যাওয়া, ঈদের নামাজ সব আজ সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। তবুও ঈদের আগ মেহেদী পরানোর ধুম। ঈদের দিন মাংস কাটা আর সবাইকে হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে ঈদ আনন্দ। কেনাকাটা, নতুন পোশাক আর ঘোরাঘুরির পরিবর্তে হয়তো কোরবানির পশুর সঙ্গে সেলফি, হাতে মেহেদি আর মাংসের নতুন নতুন রেসিপি নিয়ে ঈদ কাটাতে হবে। তবে করোনা মহামারির কথা চিন্তা করে আমাদের এখনো সচেতন থাকতে হবে। আমাদের সচেতনতাই পারবে পরবর্তী ঈদের আমেজ ফিরিয়ে দিতে।
আমাদের এই ঈদে বর্জন করতে হবে সাময়িক আনন্দ, গ্রহণ করে নিতে হবে করোনা দূরীকরণের শপথ। এই ঈদ যেন শেষ ঈদ হয় করোনার প্রকোপের হাত থেকে এই বিশ্বাসের সঙ্গে
আমাদের গতবারের ঈদের মতো এবারের ঈদ পালনে
রাখতে হবে সীমাবদ্ধতা।
দুঃসময়ের ঈদে দুঃখীদের পাশে দাঁড়ান
মেহেদী হাসান, শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ঈদ নিতান্তই একটি আবেগপ্রবণ শব্দ। ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই উল্লাস, ঈদ মানেই মোলাকাত, ঈদ মানেই সুখ ভাগাভাগি। এমন অসংখ্য বিশেষণ লুকিয়ে আছে শব্দটির অন্তরালে। তবে অদৃশ্য মরণঘাতী করোনা মহামারির কারণে গেল দুই বছর ধরে ঈদের আনন্দ-উল্লাস উপভোগ করতে পারেনি বিশ্ববাসী। করোনাভাইরাসের চলমান ভয়াল থাবায় বিশ্বে আবার চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। আর পবিত্র ঈদুল আজহায় যেসব মুসলিম পরিবারের উপর কোরবানি ফরজ তারা তাদের সাধ্যমতো কোরবানি করে থাকে। তবে এবারের ঈদে শাটডাউন থাকার ফলে দিনমজুররা ঠিকঠাকমতো কাজ করতে পারেনি? তাদের পাশে দাঁড়ানোও বিত্তবানদের একটি দায়িত্ব। বিত্তশালীরা যদি এমন দুঃসময়ে দুঃখীদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে সবাই মিলে এবারের ঈদুল আজহা আনন্দে কাটানো যাবে?
মুসলিমদের আত্মত্যাগের উৎসব
তামান্না সুলতানা, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়মুসলিমদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম ঈদুল আজহা। এই উৎসবের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আত্মত্যাগ, সেবাদান এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আমরা প্রতিবছর ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি। কোরবানি করা এবং কোরবানির মাংস বণ্টন করার মধ্যেও থাকে অসীম তৃপ্তি। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমরা সবাই গতবারের মতো এবছরেও ঘরবন্দি। এবারের ঈদও যেহেতু গতবারের মতো পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে তাই আমাদের সবার উচিত পরিবার-পরিজনদের এই মহামারি থেকে সুরক্ষিত রাখতে সব স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলতে সাহায্য করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আমরা বাড়ির বাইরে যাবো না। অসহায় এবং দুস্থ প্রতিবেশীদের সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো এবং তাদের সুরক্ষিত রাখতে সচেষ্ট থাকব। করোনাময় এই ঈদ হোক সবার জন্য সুখময় শান্তিতে থাকুক সবাই এই দোয়া। সবাইকে ঈদ মোবারক।
ত্যাগের মহিমায় হোক আনন্দ
মুশফিকুর রহমান ইমন, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ত্যাগের মধ্যেই যে প্রকৃত সুখ নিহিত থাকে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি ঈদুল আজহা। এই উৎসবকে ত্যাগের উৎসবও বলা হয়। কারণ ঈদুল আজহা এলে মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মহান আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করে? আর এই পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজের ভিতরের অহংকারকে ত্যাগ করে নিজেকে মহান আল্লাহর দরবারে স্থাপন করে। তাছাড়া এই ঈদের কোরবানিকৃত পশুর কিছু অংশ আত্মীয়স্বজন এবং গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয় যার ফলে দরিদ্রদের প্রতি ধনীরা দায়িত্ব পালনের একটি সুযোগ পায় এবং একই সঙ্গে আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবেই সব ভেদাভেদ ভুলে মিলিত হই ঐক্যের বন্ধনে, উপভোগ্য হয়ে ওঠে ঈদ আনন্দ।
আবারও অন্যরকম ধর্মীয় উৎসব
ইকবাল হাসান, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ঈদ শব্দটা শুনলেই মনের ভিতরে অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করে। বিশেষত বাংলা একাডেমি প্রণীত নতুন বানান ‘ইদ’-এর চেয়ে ছোট্টবেলা থেকে ব্যবহার করে আসা ‘ঈদ’ শব্দটার মধ্যে। সময়ের স্রোতে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে, কমে গেছে ঈদের আনন্দও। চারদিকে মহামারি, মানুষের হাহাকার আর আতঙ্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দি থাকা একঘেয়ে জীবনে আসা এই ঈদটাও বাসার মধ্যেই কাটাতে হবে। সামাজিক দূরত্বের কারণে এবার আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া হবে না। পরিবার আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করব ভাবছি। কয়েকজন বন্ধু মিলে ঈদে সংকটাপন্নদের যতটা সম্ভব সহায়তা করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এটাই হয়তো এবারের ঈদের আনন্দ কিছুটা বাড়িয়ে দেবে। আশা করি একদিন চারপাশ ভাইরাসমুক্ত হবে, মানুষের মধ্যে দূরত্ব আর বৈষম্য দূর হবে। সেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি পর্যন্ত সবাই ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, অসহায়দের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর দিন কাটান।
প্রতিদিনই হোক ত্যাগের
মাহমুদা টুম্পা, শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়াকরোনা মহামারির অনিশ্চিত আশঙ্কার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবারেও পালিত হবে ঈদুল আজহা। ঈদের দিন শুরু হয় ঈদের নামাজের জন্য গোসল করে নতুন কাপড় পরিধান করা। ঈদুল আজহা মূলত ত্যাগের উৎসব। অকুণ্ঠ ইমান আর ত্যাগের মহিমায় আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করে থাকেন। তিন ভাগের এক ভাগ মাংস গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। শুধু এই দিনে ত্যাগের মনোভাব থাকলে চলবে না।
বরং সারা বছরই আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রত্যাশায় নিজ সম্পদ অন্য মানুষের কল্যাণে ত্যাগ করতে হবে।
করোনাকালে যারা অসুখী ও দরিদ্র তাদের জীবনে সুখের প্রলেপ দেওয়া এবং দারিদ্র্যের কষাঘাত দূর করা সামর্থ্যবান মুসলমানদের বড় দায়িত্ব। তাই মনের পশুত্ব কোরবানি করে আত্মত্যাগের মাধ্যমে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হোক ঈদুল আজহার অঙ্গীকার।