সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে এলাম রাবার বাগান ও বানরের রাজ্যে

আবু রায়হান
  ১৩ মে ২০২৩, ০০:০০

দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন কেন্দের ভিতর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানায় অবস্থানরত রাবার বাগান অন্যতম। ১৯৮৬ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার অন্তর্গত পীরগাছা গ্রামে তিন হাজার একর জায়গাজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার রাবার গাছের মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। চারদিক এমনভাবে চারা লাগানো হয়েছে মনে হয় যেন স্কেল দিয়ে মেপে সমান্তরালভাবে রোপণ করা হয়েছে। সারি সারি সুউচ্চ রাবার গাছগুলোর অপরূপ সৌন্দর্যে মন জুড়িয়ে যায়। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সজ্জিত হয় এই রাবার বাগান। বর্ষা মৌসুমে যেন নতুন যৌবন ফিরে পায়। রাবার বাগানের মাঝখান দিয়ে সুবিশাল রাস্তা চলে গেছে রাবার অফিসের দিকে। সুন্দর রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি রাবার অফিস। জোৎস্না রাতের চাঁদের আলোয় রঙিন টিনের ছাউনি এবং রাবার গাছের পাতাগুলো ঝলমল ঝলমল করে। বর্ষকালে বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া পাতা এবং পাতা থেকে টপটপ করে ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্যটা দারুণ লাগে। সবমিলিয়ে রাবার বাগান ভ্রমণ দর্শকের মন ও প্রাণ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে শীতল করে দেয়।

\হরাবার বাগান কিছুটা অতিক্রম করার পর দেখা মেলে সুবিশাল গজারি বাগান। এই গজারি বাগানে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ-পালা, ফুল-ফল এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এই গজারি বনের উলেস্নখযোগ্য প্রাণী হচ্ছে বানর। এখানে শত শত বানর সুন্দর মনোরম পরিবেশে নিরাপত্তার সফঙ্গ বসবাস করে। এখানে বানরগুলোর নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তাকর্মী বাহিনী নিযুক্ত করা হয়েছে। বানরগুলোর খাবার ও পানীয়ের জন্য আলাদা পানির হাউস স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় বানর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে এই রাবার ও গজারি বনে। গজারি বনে গড়ে উঠেছে শত শত দোকানপাট। মানুষ দোকান থেকে নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বানরগুলোর জন্যও খাবার ক্রয় করে। কলা, রুটি ও কটকটি বানরের প্রিয় খাবার। পর্যটকরা বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে নিজ হাতে বানরকে খাওয়ায়। বানরগুলো খুব ভদ্র। ভদ্রভাবে মানুষের হাত থেকে খাবার নিয়ে ভক্ষণ করে। বানরগুলো খাবার নেওয়ার সময় কারও কারও মাথায়, কারও কারও কাঁধের উপর উঠে বসে তবে কাউকে কামড়ানো, খামচানো কোনো ক্ষতি করে না। তাই প্রতি বছরের মতো এই বছরেও ঘুরতে গেছিলাম রাবার বাগানের সৌন্দর্য ও বানর দেখতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি আসছি ঈদের ছুটি কাটাতে। পরিবারের সবাই আনন্দে ঈদ কাটাচ্ছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছে। কাকাতো ভাই নাজমুল, মাসুম এবং ছোট বোন শারমিন, লিমা, জান্নাত, মীম সবাই ফটোশুট করার জন্য ঘুরতে গেছে আমাকে রেখে। যাওয়ার পর আমাকে জানিয়েছে। আমাকে রেখে যাওয়ার কারণে আমি একটু রাগ করলাম।

আমার রাগ ভাঙানোর জন্য ওরা বলল রাগ করিস না। তোকে নিয়ে আমরা আরও সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাবো। আমি বললাম রাবার বাগান যাওয়া যায়। ওরা বলল ঠিক আছে তাই যাবো। ছোট বোন শারমিন বলল যাবো ঠিক তবে গাড়ি ভাড়া সব তোকে দিতে হবে। আমি বললাম গাড়ি ভাড়া সব আমি দেবো? গাড়ি ভাড়া যদি আমাকেই দিতে হয় তাহলে তোদের সঙ্গে যাবো কেন? একাই যাবো একা গেলে খরচও কম হবে আমার। শারমিন বলল ভাই তুই এত কৃপণ কেন? এতে আমার রাগ আরও বেড়ে গেল। অবশেষে বললাম ঠিক আছে গাড়ি ভাড়ার খরচ আমার আর খাওয়া, দাওয়ার খরচ তোদের। যেই কথা সেই কাজ। পরের দিন সকালে গাড়ি ভাড়া করলাম। সকালের নাশতা করার পর সবাই রওনা হলাম টাঙ্গাইলের মধুপুরের রাবার বাগান এবং গজারি বনের বানর দেখার উদ্দেশে। আস্তে আস্তে যাত্রা শুরু হলো। যাত্রা থামল গারোবাজার। গারোবাজার থেকে ফুফাতো ভাই সুজনকে গাড়িতে উঠালাম। সুজন ছিল আমাদের ভ্রমণের প্রধান উদ্যোগগ্রহণকারী। যাই হোক সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অবশেষে রাবার বাগান গিয়ে পৌঁছালাম। পৌঁছানোর পর হালকা খাবার গ্রহণ করলাম এবং বানরের জন্য কিছু খাবার কিনলাম। সবাই মিলে চারদিক ঘোরাঘুরি করলাম বানরকে খাবার প্রদান করলাম এবং বানরের সঙ্গে সেলফি তুললাম। আমার জীবনের উলেস্নখযোগ্য ভ্রমণের ভিতর রাবার বাগান ভ্রমণ। এবং বানরের সঙ্গে সেলফি তোলার আনন্দটা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে