আলোচনা করার চেষ্টা করছি, প্রিয় ছড়াকার রাসেল খানের ছড়ার বই 'ইচ্ছে আকাশ ছুঁই' নিয়ে। চমৎকার কিছু ছড়া দিয়ে সাজানো বইটি। বইয়ের ছড়া নিয়ে আলোচনা করার আগে প্রিয় ছড়াকার রাসেল খান সম্বন্ধে একটু বলে নিই।
রাসেল খান আমার নিজ জেলা টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকলা গ্রামে ১ মার্চ, ১৯৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মূলত ছড়া, গল্প, গান এবং ফিচার ধরনের লেখালিখি করেন তিনি। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখছেন।
রাসেল খানের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগেই তার 'মাকে মনে পড়ে' নামক ছড়ার বইটি বইমেলা থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। ওই বইয়ের ছড়া পড়েই মূলত ছড়াকারের ভক্ত হয়ে যাই।
'ইচ্ছে আকাশ ছুঁই' বইটি প্রিয় কবি এবং প্রকাশক মঈন মুরসালিনের নামকরা প্রকাশনী 'প্রতিভা প্রকাশ' থেকে এ বছর বের হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন নিসা মাহ্জাবীন এবং অলংকরণ করেছেন বিখ্যাত কার্টুনিস্ট শেখ সাদী। বইটিতে মোট ৪০টি চমৎকার ছড়া রয়েছে।
রাসেল খানের ছড়া মানেই মা, মাটি, প্রকৃতির তাজা ঘ্রাণ আর হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলা চোখের সামনে দেখতে পাওয়ার উপলক্ষ। ছোট্ট ছোট্ট কোমলমতি শিশুদের মনের মাঝে ঢুকে অনায়াসেই তাদের অব্যক্ত কথাগুলো তুলে আনেন ছন্দে ছন্দে।
যেমন বইটির প্রথম ছড়া 'আমায় ডাকে' এ তিনি লিখেছেন-
'তেপান্তরের বাঁকে বাঁকে
দোয়েল ডাকে পাতার ফাঁকে
কই রে খোকা কই?
লতাপাতায় ফড়িং নাচে
চুপিচুপি ডাকছে কাছে
ক্যামনে ঘরে রই'
কী চমৎকার শিশুসুলভ অভিব্যক্তি! আবার 'মায়ের পরশ' নামক ছড়ায় মাকে নিয়ে লিখেছেন-
'মা মা বলে যতই ডাকি
ভালো লাগে ততো
আর কে আছে দরদমাখা
মা-জননীর মতো'?
সত্যি তো মায়ের মতো দরদি এ ভবে আর কেউ হতে পারে না।
ছড়াকার তার পড়া আর পড়া, ইচ্ছে আকাশ ছুঁই, শখ, বায়না, সুবোধ ছেলে, আঁকাআঁকি, ছবির পড়া, খুকুর পুষি, রাতুল সোনা, প্রভৃতি ছড়ায় শিশুদের মনোজগৎ নিয়ে সুন্দরভাবে খেলা করেছেন। আবার 'দাদুর মাথার টাক' দিয়ে হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন। শিশুদের মনে আনন্দ দেওয়ার সব উপাদান বিদ্যমান এই বইটিতে। ছন্দ, মাত্রা, অন্তমিলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
সবশেষে প্রিয় শিশুসাহিত্যিক রাসেল খানের এই বইটির সাফল্য কামনা করে 'দুষ্টু ছেলে' নামক ছড়ার চমৎকার চারটি লাইন দিয়ে বইটির আলোচনার ইতি টানছি-
'দুষ্টু ছেলে কোথায় খেলিস
কত্ত বেলা যায়,
ঝড় উঠেছে ভয় লেগেছে
মায়ের বুকে আয়'।
য়সুলতান মাহমুদ