সকাল বেলা অফিস যাওয়ার সময় মোতালেব সাহেব মুডে থাকেন। ব্যায়াম, গোসল, নাস্তা সেরে সু্যট-টাই পরে যখন গাড়িতে বসেন একা। নিজেকে আজন্ম প্রেমিক মনে হয়ে তার। মোবাইলে গুড মর্নিং লিখাটা তিনটা হার্ট ইমোর সঙ্গে ভেসে আছে। নাবিলার সঙ্গে কথা ও প্রেম করার মোক্ষম সময় এটা। এ সময় তিনি ভুলে যান তার বয়স, সংসার, স্ত্রী, সন্তান ও সমাজ!
- শুভ সকাল প্রিয়া।
- বের হয়েছো?
- হঁ্যা।
- তোমার দজ্জাল বউটা পাশে নেই তো!
- আরে নাহ! জীবনে একটাই ভুল করেছিলাম।
- কখন দেখা হচ্ছে?
- লাঞ্চে। বনানীর সেই রেস্তোরাঁয়।
- দাঁড়াও ফারুখের ফোন।
- হুম।
১০ মিনিট পর কল ব্যাক করে নাবিলা।
এই ১০ মিনিট ধরে হাই এডুকেটেড বউয়ের দোষগুলো খুঁজতে থাকে নারীবাদী মোতালেব। শিক্ষিত আধুনিক মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও ছলে বলে ঘরে আটকাতে পেরে,
ফেসবুকে বউয়ের একাকিত্বের সুযোগে যে ছেলেটা বউয়ের মনের কথাগুলো শুনতো তাকে তাড়াতে পেরে সে খুব খুশি। মন আবার কী? মন তো তার। সারাদিন চাকরি করে সংসারের দায়িত্ব পালন করে একটা করপোরেট গার্লফ্রেন্ড না থাকলে কী চলে!
- কী ভাবছো?
- কিছু না।
তাহলে দুপুর ২টায় দেখা হচ্ছে।
লাঞ্চের পরে নাবিলা গদগদ হয়ে জিজ্ঞাসা করে-
- আমার জন্য কক্সবাজার থেকে কী আনলে? সবই তো বউয়ের আর বাচ্চাদের জন্যই আনলে।
- তোমার জন্য আনব না, তা হতে পারে? কক্সবাজার যেয়ে তো বউয়ের থেকে তোমার সঙ্গে কথা বলেছি বেশি। বউকে ফোন দেয়ার কথা মনেই ছিল না।
এবার মোতালেব তার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বার করে দিলেন। নাবিলা প্যাকেট খুলে চিৎকার করে ওঠেন।
- কই কিছুই নেই তো এতে?
- অরিজিনাল পার্লের রিং ছিল। বউয়ের ইনস্ট্রাকসন অনুযায়ী পার্লের দোকানে গিয়ে সবার জন্য কিনলাম। তোমার জন্য কিনলাম এই রিং!
দুইজন মিলে ব্যাগ হাতড়াতে থাকল, টেবিলের ওপর নিচে খুঁজলো। নাহ নেই! নাবিলা বিরক্ত হয়ে উঠে গেল। অপমানে মোতালেব ঘামছেন। প্রেসার হাই হলো নাকি?
নাবিলা এতসব তোয়াক্কা না করেই বেরিয়ে গেল। মোতালেব খুব দুর্বল বোধ করতে লাগলেন। অস্ফুটে তিনি স্ত্রীকে ডাকলেন। অন্ধকার লাগছে সবকিছু। মোবাইলে রিং দিতে চেষ্টা করলেন। মোবাইল যাতে বউ বাচ্চারা ধরতে না পারে সেজন্য লক করে রাখতেন। গোসল টয়লেট সব সময় সঙ্গে রাখা বন্ধুটির লক নাম্বার ভুলে গেলেন তিনি। ওয়েটার দৌড়ে এসে ধরতেই তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
মিসেস মোতালেব রাতে আলমারি খুলেতে গিয়ে স্বামীর ব্যাগটা পড়ে যায়। ব্যাগ উঠিয়ে রাখতে গিয়ে একটা প্যাকেট কুড়িয়ে পান। প্যাকেটটা রাখতে গিয়ে কী মনে করে খুলে দেখেন একটা বড় পার্লের আংটি। মোবাইল নিয়ে তার গোপনীয়তা, সেটাই বলে দেয় স্বামীর ওপেন সিক্রেট। আজ তা নির্ভুল প্রমাণিত! এরকম অনেক ঘটনার সাক্ষী স্ত্রী।
মোতালেব তার বান্ধবীর জন্য কেনা হারিয়ে যাওয়া আংটির অপমানে আজ মুহ্যমান। স্ত্রীকে যে জিজ্ঞাসা করবেন সেই সাহস তার নেই। টলমল পায়ে বাসায় ফিরলেন মোতালেব। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। তার স্ত্রী ভদ্রলোক স্বামীর পাশে বসে সুস্থতার জন্য সেবা করতে থাকলেন। স্বামীর মোবাইলে ম্যাসেজ আসছে অনবরত টিং টিং শব্দে। এসব তাকে আর স্পর্শ করে না। যে হারিয়ে যায় তাকে খোঁজাখুঁজি করা যায়, যে নিজেই উড়াল দেয় তাকে ধরে কী লাভ? একটাই তো জীবন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে একদিন। ইদানীং বাবা মাকে খুব মনে পড়ে। কপালে একটা স্পর্শ অনুভব করেন তিনি। মায়ার স্পর্শ! তার কন্যার ছোঁয়া। নিমিষেই জীবন শক্তি খুঁজে পান তিনি। মনে হয় তারপরেও জীবন সুন্দর!