শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অদ্ভুত ফল ও তিন বন্ধু

নাজমুল হুদা নাহিন
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অপার মায়ায় ঘেরা গ্রাম, তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। নদীর একপাশে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। আর অপর পাশে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি গ্রামটির নাম হলো আদিলপুর। এখানে হাজার তিনেক মানুষের বসবাস। সবাই মিলেমিশে থাকে এখানে। বন্যা হলে গ্রামটি ছেড়ে চলে যেতে হয় লোকদের। কারণ বন্যায় একদম গলা পর্যন্ত পানি ওঠে সেখানে। বছরের পর বছর এখানেই তারা বাস করে আসছে বিধায়, বন্যা তাদের গ্রাম ছাড়া করতে পারে না।

এখানেই গড়ে ওঠে তিন বন্ধুর ভালোবাসার গল্প। তিনজনের গায়ের আকার আকৃতিতে কোনো মিল নেই, আবার তিনজনের মন মানসিকতার মধ্যেও রয়েছে বিশাল ফারাক। তারা হলো রবি, নিধু ও শিভা। শিভা সবার থেকে বয়সে বড় হলেও জ্ঞান বুদ্ধি ও অহংকারে সবার ওপরে ছিল নিধু। দেখে মনে হতো তাদের তিনজনের দেহ মনে হয় একটি, তারা সবসময় মিলেমিশে থাকত তাদের মাঝে কখনো ঝগড়া পর্যন্ত দেখা যায়নি। নিধুর কথামতোই চলাফেরা খেলাধুলা চলতো তাদের।

হঠাৎ একদিন নিধু, রবি ও শিভাকে ডেকে বলল তারা নদীর ওই পাড়ে যাবে আর দেখবে ঘন জঙ্গলের মাঝে কি এমন আছে যার কারণে গ্রামের কেউ তাদের সেখানে যেতে দেয় না। এ কথা শোনার পর রবি ও শিভা প্রথমেই না করে দিল। রবি সবার থেকে বয়সে কিছুটা ছোট তার ভিতু স্বভাবের কারণে কেউ কেউ ভিতু বলেও ডাকে। এতে অবশ্য রবি কখনো রাগ করে না। যদিও তারা ক্ষ্যাপানোর জন্যই বলত। নিধু তো ছাড়ার পাত্র নয় সে যেহেতু একবার মন স্থির করে ফেলেছে। সে সেখানে গিয়েই ছাড়বে।

তো সে যেভাবেই হোক শিভা ও রবিকে রাজি করাল, এবং এই বলে আশ্বস্ত করল যে গ্রামের কাউকে তারা জানাবে না। কাউকে না জানানোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল শিভা ও রবি। এর আগে কখনোই কেউ সেই গহীন অরণ্যে গেছে কিনা সন্দেহ। তারা চিন্তা করল সকালের দিকে যেহেতু নদীর আশপাশে কেউ থাকে না, তারা সেই সময়ে নৌকা নিয়ে চলে যাবে অপর পাশে। তারপর সন্ধ্যা নামার আগেই তারা গ্রামে ফিরবে তা হলে তো কেউ আর জানতেও পারল না। আর জানতে না পারলে কোনো সমস্যাও হবে না।

তো তাদের চিন্তা অনুযায়ী তারা তার পরের দিন সকালেই ছোট ডিঙা নৌকা নিয়ে রওনা হলো নদীর অপর তীরে। রবি ভয়ে চুপচাপ বসে আছে। নিধু ও শিভা তারাতাড়ি করে বৈঠা চালিয়ে চলে গেল অপর পাশে। নৌকা থেকে নেমেই সেই ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। প্রথমেই তারা তিনজনে ভয় পেয়ে গেল; কারণ দিনের আলো ফুটলেও জঙ্গলের ভেতরে তখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার। গাছপালা আর লতাগুল্মের কারণে আলো প্রবেশ করতেই পারছে না ঠিকমতো। তবে সাহসী নিধু তাদের নিয়ে চলল নির্ভয়ে গহীন জঙ্গলের ভেতরে।

প্রথমেই তারা দেখতে পেল একটা ছোট্ট গাছ। গাছের পাতাগুলো অদ্ভুত রকমের সুন্দর। পাতাগুলো একদম আলাদা রকমের, এর আগে কখনোই তারা দেখেনি এ রকম গাছ। চারদিকে থমথমে অন্ধকার থাকলেও গাছটি থেকে আলাদা রকমের আলোর বিচ্ছুরণ হচ্ছে। যার কারণে গাছের চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে আছে। গাছের ঠিক মধ্যখানে একটি ফল আছে যেটা দেখতে স্বর্ণের বলের মতো লাগছে। তো নিধু মন স্থির করল যে সে ওটা ছিঁড়ে নিয়ে আসবে। সে নাকি গ্রামে একদিন শুনেছে যে ওই ফলটি পাবে সে অনেক ধনী হয়ে যাবে। তার আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তার অনেক টাকা হবে। শিভা ও রবি ভয়ে কাঁদ কাঁদ অবস্থা। কিন্তু নিধুর কথা বলে কথা সে যেটা বলে সেটা সে করেই ছাড়ে। শিভা তাকে অনেক করে বলল এই গাছ দেখতে কেমন জানি লাগছে, এই ফল ছিঁড়লে যদি কিছু হয়ে যায় ভাই। চল তার থেকে আমরা গ্রামে ফিরে যাই। কিন্তু নিধু ছিল অহংকারী সে কিছুতেই বাধা মানল না বরং বলল, তোরা চলে গেলে যা আমি একাই এটা নিয়ে তবেই ফিরব। হাজার বাধার পরেও নিধু সেটা মানল না। যখনেই সে গাছের ফলটিতে হাত দিল সঙ্গে সঙ্গেই ঝড়ের মতো শুরু হয়ে গেল চারদিকে; গাছগুলো দুলতে শুরু করল কিন্তু নিধুর সে দিকে খেয়াল নেই। রবি ও শিভা দৌড়ে চলে যাচ্ছিল নদীর তীরের দিকে। হঠাৎ বাতাস থেমে গেল তখন, রবি ও শিভা দাঁড়িয়ে পেছন ফিরতেই দেখতে পেল নিধু ফলটি ছিঁড়ে হাতে নিয়েছে। নিধুর শরীর দিয়ে আলোর বিচ্ছুরণ হচ্ছে। কিন্তু সে একদম কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নড়ছে না একদমই। প্রথমে তার হাত থেকে ফলটি পড়ে গেল তারপর। নিধু ধিরে ধিরে পুড়ে যেতে থাকলো। নিমিষেই নিড়ু বালির মতো হয়ে ঝড়ে পড়ে গেল। এই দেখে রবি ও শিভা দৌড়ে চলে গেল নৌকার কাছে। সন্ধ্যা নামার আগেই তারা পৌঁছে গেল গ্রামে। গ্রামে ফিরেই তারা সবাইকে এসব ঘটনা খুলে বলল। সবাই বুঝতে পারল যে নিধুর মৃতু্য হয়েছে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

লোভ আর অহংকারের কারণে নিধু তার জীবনকে হারাল। তাই আমাদের লোভ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কখনো অহংকার করা যাবে না কারণ, অহংকার পতনের মূল। আর এ থেকে বোঝা গেল, 'লোভে পাপ পাপে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে