শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোবট বিপস্নবের সুদূরপ্রসারী প্রভাব

রোবট ব্যবহৃত হবে মানুষের বিকল্প হিসেবে। রোবটের আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মতো করে কাজ করা। আর এ জন্য দরকার একটি 'গাইডিং ব্রেন' ও একটি যান্ত্রিক হাত। ক্ষেত্রে কম্পিউটারকে একটি বিদু্যতের পস্নাগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এ বিদু্যতের তারের মধ্য দিয়ে রোবটের হাতে সঞ্চারিত হয় বিদু্যৎ। হাতের সাহায্যে কাজ করে রোবট। বড় বড় কাজের জন্য রোবটরা হাইড্রোলিক চাপের সাহায্য নেয়। আধুনিক রোবটদের আছে 'মেমোরি'। এগুলোকে একসঙ্গে অনেক কাজ দিলে এরা সঠিকভাবে তা করে দেয়
সোরিয়া রওনক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মানুষ আর যন্ত্রের মেলবন্ধনে এগিয়ে চলেছে আজকের পৃথিবী। মানুষই যন্ত্র সৃষ্টি করলেও এখন যন্ত্রের হাত ধরেই এগিয়ে চলছে প্রযুক্তির উত্থান। যন্ত্র মানুষের বিকল্প না হলেও অনেক স্থানে যন্ত্র মানুষের স্থান দখল করে নিয়েছে। যন্ত্র যেমন মানুষের প্রতিপক্ষ নয় যান্ত্রিক মানুষও মানুষের শত্রম্ন নয়। এরা এসেছে অনেক মানুষের কাজ একা করে দিতে। মানুষের কাজে সাহায্য করতে। বিশাল এক ঘরের ভেতর ঢুকে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। কোনো মানুষের চিহ্ন নেই। বিরাট আকৃতির কতগুলো যন্ত্র তাদের বড় রবারের গলা কোনো গাড়ির ফ্রেমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে কাজ করছে। ওগুলোর নাকের মধ্যদিয়ে আগুনের ফুলকি ঝরে পড়ছে আর মুখের ভেতর দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার সময় হিস হিস শব্দ হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের মতে যান্ত্রিক মানুষ এক ধরনের যন্ত্র, যা অনেক যান্ত্রিক কাজ একাই করতে পারে। এখন পর্যন্ত যান্ত্রিক মানুষ সংজ্ঞার সীমা অতিক্রম করতে পারেনি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যান্ত্রিক মানুষ নিয়ে আরও বেশি কিছু আশা করছেন। তারা চাইছেন দুই হাতে অনেক কাজের সঙ্গে যান্ত্রিক মানুষ কথাও বলবে এবং অবসর সময়ে বই পড়বে। ইতিমধ্যে বেশকিছু যান্ত্রিক মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও বই পড়া শুরু করেছে। এ রোবট বা যান্ত্রিক মানুষের আবার স্মরণশক্তিও আছে। আছে দৃষ্টিশক্তি, স্বাদ গ্রহণের অনুভূতি এমনকি মানুষের চেয়ে বেশি অনুভূতি আছে এদের।

ইনফ্রারেড লাইট ও আলট্রাসনিক সাউন্ড সম্পর্কে যান্ত্রিক মানুষ যত অনুভূতিশীল, মানুষ ততটা নয়। সামান্য ত্রম্নটিযুক্ত কোনো পার্টস যন্ত্রমানুষ গ্রহণ করবে না। এক নাগাড়ে ৪০ ঘণ্টা কাজ করে প্রাগামা। ১০ জন মানুষ যে পরিমাণ কাজ একটি নির্দিষ্ট সময়ে করতে পারে প্রাগামা একাই এ কাজ অনেক আগে করে দিতে পারে। যা হোক, রোবট বা যান্ত্রিক মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে রোবট বিপস্নব। এ রোবট বাঁচিয়ে তুলেছে রুগ্ন শিল্পকে। উৎপাদনে করেছে গতির সঞ্চার। গাড়ি রং করা, ফ্রিজ, টেলিভিশন সংযোজন করা ছাড়াও রোবট বিমান তৈরি ও খনিশিল্পে কাজ করে চলেছে। চেষ্টা করা হচ্ছে রোবটকে দিয়ে কীটনাশক ছিটানো, গভীর সমুদ্র থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ, মহাশূন্যের বিকল্প উপগ্রহে মেরামতসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করানোর।

ভবিষ্যতে রোবট দিয়ে নতুন নতুন রোবট পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। আজ থেকে একযুগ আগে আধুনিক জীবন শুরুর সঙ্গে রোবটের সূচনা হলেও বিজ্ঞানীরা এখন রোবট বিপস্নব নিয়ে আশাবাদী।

রোবট মানুষের কাজ দ্রম্নত করে দিলেও সেই রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করবে মানুষই। তখন মানুষ আর নতুন নতুন সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারবে। সারা পৃথিবীতে রোবট বিপস্নবের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

রোবট শুধু ২৪ ঘণ্টা কাজই করে না বরং এর জন্য বিরতিরও প্রয়োজন হয় না, অসুখে ছুটি দিতে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা, এর জন্য কোনো বোনাস বা পেনশন দিতে হয় না। দুই দশক আগে একটি 'অ্যাসেম্বলিং লাইন রোবট' তৈরি করতে খরচ হতো ২৫ হাজার ডলার। আর পরিচালনার জন্য এর পেছনে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হতো ৪২০ ডলার যা ছিল প্রত্যেক শ্রমিকের চেয়ে কিছু বেশি। কিন্তু আজ এ রোবটের মূল্য ৪০ হাজার ডলার এবং পরিচালনা খরচ ৪৮০ ডলার। অথচ বর্তমানে একজন শ্রমিকের পেছনে খরচের পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ ডলার। এ হিসেবে মানুষ দিয়ে কাজ করানোর চেয়ে রোবট দিয়ে কাজ করানো অনেক লাভজনক। আর এ জন্যই উন্নত বিশ্বে রোবটের ব্যবহার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

রোবট ব্যবহৃত হবে মানুষের বিকল্প হিসেবে। রোবটের আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মতো করে কাজ করা। আর এর জন্য দরকার একটি 'গাইডিং ব্রেন' ও একটি যান্ত্রিক হাত। এ জন্য কম্পিউটারকে একটি বিদু্যতের পস্নাগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এ বিদু্যতের তারের মধ্যদিয়ে রোবটের হাতে সঞ্চারিত হয় বিদু্যৎ। এ হাতের সাহায্যে কাজ করে রোবট। বড় বড় কাজের জন্য রোবটরা হাইড্রোলিক চাপের সাহায্য নেয়। আধুনিক রোবটদের আছে 'মেমোরি'। এগুলোকে একসঙ্গে অনেক কাজ দিলে এরা সঠিকভাবে তা করে দেয়।

এখন দিন দিন উন্নত ধরনের রোবট তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে নিজেরা যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে রোবটদের দেখা এবং টেস্ট গ্রহণের জন্য ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর সামনে একটি ক্যামেরা থাকে। এ ক্যামেরার সাহায্যেই এগুলো দেখার কাজটি করে। সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান বস্তুর আকার, উচ্চতা, কম্পন নির্ণয় করে হাতের সাহায্যে।

বর্তমান বিশ্বে রোবটের অবদান অনস্বীকার্য। রোবট বিশ্বের অর্থনীতি ও প্রযুক্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে বিরাট ও বিশাল ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিশ্বের যে কটি রাষ্ট্র আজ প্রযুক্তি ও উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে তাদের এ সাফল্যের পেছনে রোবটের অবদান কম নয়। রোবট আজ তাই মানুষের কাজের অগ্রগতী বাড়িয়ে দিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে