সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৃজনশীলতা বিকাশে বইয়ের দুনিয়া

মো. আবির হাসান
  ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

কালের পরিবর্তনে বর্তমান বিশ্ব আজ প্রযুক্তিনির্ভর। বিশ্বটাকে আঙুলবন্দি করে দেখার বাহ্যিক আনন্দ আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছে মানসিক স্বস্তির পথ ও মস্তিষ্কের আহার সংগ্রহের কথা। কোথায় গেল সেসব সময়, যখন মানুষ সময় কাটাতো বই পড়ে, বই পড়ত জ্ঞান সঞ্চারের জন্য? ইন্টারনেট দুয়ারি বিশ্ব আজ এসব ভুলিয়েছে আমাদের। ইন্টারনেট ব্যবহার যে খারাপ কিছু তেমনটা একেবারেই নয়। তবে অবসরের সময়টুকুতে যদি বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের মরিচা দূর করা যায়, তবে এই অবসরটা হবে সুস্থ মানসিকতার নিয়ামক।

বই পড়ার মাধ্যমে একটা মানসিক ব্যায়ামের সৃষ্টি হয় এবং আমরা আমাদের মনকে অসুস্থতার হাত থেকে দূরে ও প্রফুলস্ন রাখতে পারি। একটি ভালো বই আমাদের মস্তিষ্কে একটা শীতল অনুভূতির সৃষ্টি করে, সঙ্গে আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত এবং তা বিস্তার লাভে সহায়তা করে। পৃথিবীর মধ্যে বই এমন একটি সম্পদ যার সঙ্গে অন্য কোনো পার্থিব সম্পদের তুলনা হয় না। একদিন হয়তো পৃথিবীতে বিদ্যমান সবকিছু বিনষ্ট হয়ে যাবে; কিন্তু একটি ভালো বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের আয়ু কখনোই ফুরাবে না।

আজ যারা তাদের বাস্তবজীবনে সফল, তারা বই পড়ার মাধ্যমেই বিশ্বকে জেনেছে, জীবনের সফলতাকে খুঁজে নিয়েছে গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে নতুন নতুন শব্দের উৎপত্তি হয়, মানুষের সঙ্গে গুছিয়ে কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বই পড়া আমাদের সমাজবোধ শেখায়, জীবনকে বুঝতে শেখায় এবং নতুন কিছু শেখার উদ্দীপনা জাগ্রত করে। ফলস্বরূপ সৃজনশীলতা বিকাশে বইয়ের প্রতিটি ভাবপূর্ণ বাক্যের শব্দসম্ভার বিশেষ মাত্রায় সহায়তা করে থাকে।

ওয়ারেন বাফেট তার কর্মজীবনের শুরুর দিকে ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা পড়তেন নিয়মিত। তিনি বলে গেছেন- 'প্রতিদিন ৫০০ পৃষ্ঠা পড়ুন। এভাবেই জ্ঞান কাজ করে। এটি চক্রবৃদ্ধি সুদের মতো তৈরি হয়। আপনারা সবাই এটি করতে পারেন, তবে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি যে অনেকেই এটি করতে পারবে না'।

একটা বই কি শুধু তথ্য-ই দেয়? একেবারেই তা নয়। তথ্যের পাশাপাশি নতুন প্রশ্ন তৈরির দক্ষতার জন্ম দেয় এবং সৃজনশীলতা বিস্তৃত করতে শেখায়। যত বেশি বই পড়া হবে তত বেশি বৃদ্ধি পাবে আমাদের জ্ঞানের পরিধি। বিশ্বকে জানার কৌতূহল, মাতৃভূমিকে নিয়ে নিজের পরিবারসহ নিজেকে নিয়ে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরিতে বই পড়া আমাদের বিশেষভাবে সাহায্য করে। রাগ নিয়ন্ত্রণেও বই পড়া যৌক্তিক ভূমিকা রাখে। বই পড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে এক বিশেষ ধরনের উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, যেটি মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। শরীর সুস্থ রাখতে যেমন আমরা ব্যায়াম করি, খাবার খাই, তেমনি মস্তিষ্ককে সুস্থ, প্রাণবন্ত ও কর্মচঞ্চল রাখতে বই পড়া বিশেষ জরুরি। বই পড়লে যে শুধু নিজেরই উপকার হয় তেমনটা নয়। মস্তিষ্ক সবল থাকলে আমরা স্বচ্ছ এবং ইতিবাচক চিন্তা করতে সক্ষম হই। আমাদের পরিবার, সমাজ, দেশ এমনকি বিশ্বচরাচরব্যাপী ইতিবাচক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও মতামত দিতে পারি। এ ছাড়া মানসিক চাপ কমাতে বই পড়া একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

২০০৯ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের সাসেক্স ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিকরা হার্ট রেট ও মাসেল টেনশন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেন যে মাত্র ৬ মিনিটের জন্য বই পড়লে মানসিক চাপ ৬৮% পর্যন্ত কমে যায় যা হাঁটা, কফি পান বা গান শোনার থেকে অনেকটা বেশি কার্যকর। বই পড়ার মধ্যে আমাদের ডুবে যাওয়ার ফলে যে বিষয়গুলো অমনোযোগী করে বা স্ট্রেস লেভেল বাড়িয়ে দেয় তা অনেকটাই কমে যায়।

নতুন নতুন বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। কথা বলার সময় সেই শব্দগুলোকে ব্যবহার করে আমাদের বাচনভঙ্গিকে স্পষ্ট ও তাৎপর্যমন্ডিত করতে পারি। নতুন স্থানে নতুন মানুষের সঙ্গে নির্ভয়ে কথা বলার দক্ষতা তৈরি হয় বই পড়ার মাধ্যমে। এ ছাড়া বই পড়ার মাধ্যমে নিজের মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তির সৃষ্টি হয় এবং আত্মমর্যাদাবোধ তৈরি হয়।

শোনা যায় যে অনিদ্রা মানুষের একটি মহা সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, অনিদ্রা দূরীকরণে বই পড়া একটা কার্যকর পন্থা। তা ছাড়া, ঘুমের আগে ফোন বা ল্যাপটপের ব্যবহার অনিদ্রার কারণ। ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ বই পড়লে মস্তিষ্ক পরিষ্কার হয়, ফলে অনিদ্রারোগেও বই পড়ার গুরুত্ব রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে