টানা কয়েকদিন ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি হামলার পর সম্প্রতি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান।
দুই দেশের মধ্যে সামরিক স্তরে নিয়মিত যোগাযোগ এবং যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে আপাতত উত্তেজনা কিছুটা কমেছে।
তবে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে সিন্ধু নদের পানি চুক্তি ঘিরে। ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তে চুক্তি স্থগিত করার পর বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদের দাবি, ভারতের পদক্ষেপ কেবল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নয়, বরং তা কোটি কোটি মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করছে।
রোববার (২৫ মে) পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডন তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৩ মে) জাতিসংঘে ‘সশস্ত্র সংঘাতে পানিসম্পদ সুরক্ষা’ শীর্ষক একটি বৈঠকে পাকিস্তান তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে।
সেখানে জাতিসংঘে পাকিস্তানের ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধি উসমান জাদুন বলেন, ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন এবং চুক্তির আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভারতের এই বেআইনি পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছি।
ভারত যেন অবিলম্বে সিন্ধু পানি চুক্তি মেনে চলে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়, সে বিষয়ে জোর দাবি জানাচ্ছি।
পাকিস্তান কখনোই এমন আচরণ মেনে নেবে না।
পাকিস্তানি প্রতিনিধি ভারতের কিছু রাজনৈতিক নেতার দেওয়া মন্তব্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানিদের না খাইয়ে মারার’ মতো বক্তব্য কেবল বিকৃত মানসিকতার পরিচায়কই নয়, বরং তা বৈশ্বিক মানবাধিকারের চেতনাকেও অপমান করে।
জাতিসংঘের প্ল্যাটফর্ম থেকে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানায়, যাতে ভবিষ্যতে কোনো দেশ পানিকে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।
উসমান জাদুন বলেন, পানি অস্ত্র নয়, জীবন। আর এটিকে চাপের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা মানবিক ও নৈতিকভাবে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকেও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার আহ্বান জানান।
তার ভাষায়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত এমন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা, যেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে।
পাকিস্তান তাদের বক্তব্যে তিনটি মূল দিক তুলে ধরে: ১. পানি সম্পদ বা পরিকাঠামোতে আক্রমণ বা বাধা সৃষ্টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ২. পানিকে কখনোই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। ৩. এর ফলে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ে।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, সিন্ধু নদ শুধু একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়- এটি পাকিস্তানের জন্য জীবনরেখা। এই নদীর পানির প্রবাহ রোধ বা ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথকে আরও কঠিন করে তুলবে।