শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

সালাতুত তারাবিতে পাপ-পঙ্কিলতা দূর

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:০০
ছবি-সংগৃহিত

সংযম পালনের মাধ্যমে শুদ্ধতা অর্জনের মাস রমজানের আজ ৮ তারিখ। আর মাত্র দু’দিন পর শেষ হয়ে যাবে রমজান মাসের রহমতের অধ্যায়। ঈমানদার রোজাদাররা অতীত জীবনের সগিরা ও কবিরা গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি পুণ্যস্নাত হয়ে বেহেশতবাসী হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনে আকুতি জানাচ্ছেন।

হাদিসে এসেছে, ঈমানদার রোজাদারদের জন্য সুখবর- ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমান ও পুণ্যের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক তোমাদের ওপর দিনের বেলায় রমজানের রোজাকে ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্য (রাতে) তারাবিকে সুন্নত রূপে ঘোষণা দিলাম। যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় রমজানের দিনে রোজা রাখবে আর রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে সে তার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়ে যাবে, যেমন সন্তান মাতৃগর্ভ থেকে (পাপমুক্ত) ভূমিষ্ঠ হয়।’

তারাবির নামাজের কিয়াম হলো আল্লাহর রাস্তায় আরামকে হারাম করে কঠোর পরিশ্রম করার শপথ অনুষ্ঠান। তারাবির নামাজের প্রতিটি মুহূর্ত পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণ ও আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে, জীবনে সফলকাম হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রমের শপথ নিতে হবে। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজাগুলো ফরজ করেছেন এবং এর রাতে তারাবির নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’

হাদিসে এসেছে, খতমে তারাবি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। রমজান মাসে প্রত্যেক আমলের জন্য সত্তর গুণ নেকি বেশি দেওয়া হবে। সে হিসেবে কোরআনের প্রতিটি হরফের বিনিময়ে অসংখ্য নেকির আশা করা যায়। তাছাড়া এ নামাজে রুকু-সিজদা ও তাসবির পরিমাণও অনেক। হাদিসে বলা হয়েছে ‘একটি সিজদার মূল্য আসমান ও জমিন এবং তাতে যা আছে সবকিছু থেকে উত্তম।’ সুতরাং একদিনের তারাবিতে আমাদের আমলনামায় কত সওয়াব জমা হয় তার হিসাব কষা কঠিন।

রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে দশ সালামে যে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে তারাবির নামাজ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। ইসলামের পরিভাষায় মাহে রমজানে তারাবির নামাজ পড়াকালীন প্রতি দুই রাকাত অথবা চার রাকাত পর পর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। মাহে রমজানে রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যান। তারপর রাতে এশা ও তারাবির নামাজ দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে হয়। সেই কারণে দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘব করার জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করতে হয় এবং দোয়া ও তাসবি পাঠ করতে হয়। এ জন্য এই নামাজকে ‘সালাতুত তারাবি’ বা তারাবির নামাজ বলা হয়।

রমজান মাসের নির্দিষ্ট নামাজ হচ্ছে সালাতুত তারাবি। তারাবির নামাজ হলো রোজার গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। রমজান মাসে তারাবির নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি সওয়াবের কাজ। তবে ঘরেও আদায় করা যেতে পারে। এ নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। তবে সূরা-কিরাআতের মাধ্যমে আদায় করলেও নামাজের সব সওয়াবই পাওয়া যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবির নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে। নবী করিম (সা.) এ নামাজ বেশির ভাগ সময় রাতের শেষাংশে আদায় করতেন এবং প্রথমাংশে বিশ্রাম নিতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। তিনি কখনো ৮ রাকাত, কখনো ১৬ রাকাত, আবার কখনো ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু বিশেষ কারণবশত নিয়মিত ২০ রাকাত পড়তেন না। কেননা নবী করিম (সা.) কোনো কাজ নিয়মিত করলে তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। এ করুণা দৃষ্টির কারণে তিনি তাঁর আমলে প্রতিনিয়ত ২০ রাকাত পূর্ণ তারাবির জামাত হতে দেননি। যার দরুন সালাতুত তারাবি সুন্নত, ওয়াজিব নয়; তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা জরুরি সুন্নত। ২০ রাকাত তারাবির নামাজ হওয়ার সাপেক্ষে সহিহ হাদিসে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে ‘নবী করিম (সা.) রমজান মাসে বিনা জামাতে (একাকী) ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন।’ (বায়হাকি)

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে