শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধুলো উড়িয়ে, রঙ ছড়িয়ে, এলো বসন্ত

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫২
ছবি: সংগৃহীত

বসন্তের আগমনী বার্তা কে নিয়ে আসে? কোকিলের কুহুতান নাকি সবুজ পাতা থেকে উঁকি দেওয়া আমের মুকুল? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কিছুটা দ্বিধায় পড়তে হবে বটে। কে বসন্তের ডাক নিয়ে আসে তা বলা মুশকিল। তবে প্রকৃতি যখন তার দখিন দুয়ার খুলে দেয় তখন প্রেমের বার্তা নিয়ে মিষ্টি বাতাস বয়ে যায় আর বলে যায় ‘বসন্ত এসে গেছে’। ঋতুর পালাক্রমে আজ পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন।

ঋতুরাজ বলা হয় বসন্তকে। বলা হবে নাই বা কেন? নিষ্প্রাণ প্রকৃতিতে রাজার বেশে যে এসে প্রাণ সঞ্চার করে এ তকমা তো তাকেই মানায়। শীতে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। কুয়াশা আর কম বৃষ্টির কারণে জমে ধুলোর রাজত্ব। গাছগুলো ন্যাড়া মাথায় অপেক্ষায় থাকে ফাল্গুনের। ধুলো উড়িয়ে, রঙ ছড়িয়ে প্রকৃতিতে শীতের পর আসে বসন্ত।

গাছে গাছে নতুন পাতা গজায় বসন্তে। চারদিক মুখরিত হয় ফুল আর প্রজাপতির মেলবন্ধনে। চেনা-অচেনা পাখিরা সুর তোলে কণ্ঠে। মানবিক জীবনে বসন্ত খুব একটা প্রভাব না ফেললেও পশু-পাখি সর্বোপরি প্রকৃতির জন্য ঋতুটি বেশ গুরুত্ব রাখে। এই সময় অনেক পশুপাখি মিলন ঘটায় এবং বাচ্চার জন্ম দেয়। নতুন গাছের জন্ম হয় এই ঋতুতে।

ফুলের ঋতু বসন্ত। এই ঋতুতে বাতাসের মাধ্যমে ফুলের রেণু ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই এই ঋতুতে ফুল হয় বেশি। তাইতো প্রেমিক মন গেয়ে ওঠে, ‘বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/ আমার বাড়ি আসে’। নানা রঙা ফুলে এসময় আপন সৌন্দর্যে সাজে প্রকৃতি। ফুলের সঙ্গে বসন্তের প্রেম বেশ গভীর। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় বসন্তের শাশ্বত রূপটি তাই এমন- ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

বসন্তের ফুল বলতেই সবার আগে চলে আসে পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার নাম। এই ঋতুতে আরও ফোটে অশোক, আকড়কাঁটা, হিমঝুরি, রক্তকাঞ্চন, দেবদারু, নাগেশ্বর, মহুয়া, মাদার, শাল, স্বর্ণশিমুল ইত্যাদি।

বসন্তে প্রকৃতি চঞ্চল হয়ে ওঠে। শীতের খোলস ছাড়িয়ে নবরূপে জাগ্রত হয় বৃক্ষরাজি। পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে গ্রাম-শহর, বন-বাদার। প্রকৃতিতে যেন রঙের আগুন লাগে। বাসন্তি রঙের উজ্জ্বলতা আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেয় গাঁদা ফুল। এসময় ঘাসের ওপর পা মাড়াতেও যেন কষ্ট লাগে। কারণ সেখানে ফুটে থাকে গুল্ম ঘাস ফুল। পরিত্যক্ত জলাশয়ের বুকেও কলমি ফুল উঁকি দিয়ে জানান দেয়, প্রকৃতিকে সাজাতে পিছিয়ে নেই তারাও।

বসন্ত ঋতুতে সবচেয়ে বেশি পাখির গান শোনা যায়। দলের নেতৃত্বে থাকে সুরেলা কণ্ঠের কোকিল। উঁচু গাছের মগডালে বসে, নিজেকে আড়াল করে সারাদিন কুহু কুহু রবে গেয়ে যায় সে। কোকিলের সেই গানে বিমোহিত হয় মানুষের মন, বিরহী মন হয়ে ওঠে উতলা। এসময় দেখা মেলে বসন্তবৌরি, ভিমরাজ, বুলবুলি, শালিকেরও।

যুগ যুগ ধরে বসন্ত বিমোহিত করে গেছে কবি সাহিত্যিকদের। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বসন্তের রূপে মুগ্ধ হয়েই লিখেছেন- ‘আহা আজি এই বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’

ভালোবাসার ঋতু বসন্ত। এই ঋতু নতুন কবিতা লেখার, প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার। এই ঋতু শূন্য হৃদয় ভরিয়ে দেয় নানা রঙে। মুছে দেয় কষ্টের ধুলো। প্রকৃতিকে যারা ভালোবাসেন তাদের পছন্দের ঋতুর তালিকায় তাই বসন্তের অবস্থান একটু আলাদা। ফুলপ্রেমিদের জন্য এই ঋতু বড্ড রঙিন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে