বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গুজরাটকে হারিয়ে পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ মে ২০২৩, ১০:৩০

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বৃষ্টি আইনে গুজরাট টাইটান্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো আইপিএল-এর শিরোপা জিতলো চেন্নাই সুপার কিংস। শেষ ওভারে চেন্নাই সুপার কিংসের দরকার ১৩ রান। গুজরাট টাইটান্সের মোহিত শর্মার করা প্রথম বলে রান নিতে পারলেন না শিবাম ধুবে। পরের তিন বল থেকে এলো তিন রান। শেষ দুই বলে দরকার ১০ রান, স্ট্রাইকে রবীন্দ্র জাদেজা।

সোমবার (২৯ মে) রাতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের দর্শকঠাসা গ্যালারিতে তখন চরম উৎকণ্ঠা, দুই দলের ডাক আউটে নিশ্বাস বন্ধ হওয়া অবস্থা।

এমন চাপে ২ বলে ১০ রান নেওয়া সম্ভব? অনেকে যখন মনে মনে এমন প্রশ্ন আওড়াচ্ছেন, জাদেজা তখন জয়ের বন্দরে চোখ রেখেছেন। মোহিতের পঞ্চম বলে ছক্কা ও শেষ বলে চার; জাদেজা বীরত্বে দারুণ এক জয়ে আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই। সোমবার আহমেদাবাদে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে বৃষ্টি আইনে গুজরাটকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল চেন্নাই। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের পাঁচটি শিরোপা জেতার রেকর্ডে ভাগ বসালো চেন্নাই।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে গুজরাট টাইটান্স। ঋদ্ধিমান সাহা ও শুভমান গিলের দারুণ শুরুর পর চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলেন সাই সুদর্শন, শেষ দিকে ঝড়ো ইনিংস খেলেন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াও। এই চার ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ৪ উইকেটে ২১৪ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে গুজরাট।

এরপর শুরু হয় বৃষ্টি, লম্বা বিরতির পর বৃষ্টি আইনে ১৫ ওভারে চেন্নাইয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭১ রান। জবাবে সাতজন ব্যাটিং করা চেন্নাইয়ের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ধোনি ছাড়া সবাই রান করেন। রুতুরাজ, কনওয়ে, ধুবে, রাহানে, রাইডুর লড়াইয়ের পর শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে চেন্নাইকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দেন জাদেজা।

বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা হয় চেন্নাইয়ের। উদ্বোধনী জুটিতে ৬.৩ ওভারে ৭৪ রান যোগ করেন রুতুরাজ গায়কোয়াদ ও ডেভন কনওয়ে। ১৬ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৬ রান করে আউট হন গায়কোয়াদ। ৪ রান পর থামেন কনওয়েও। এর আগে ২৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

এরপর শিবাম ধুবেকে সঙ্গে নিয়ে মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেন অজিঙ্কা রাহানে। রান ও বলের ব্যবধান বেশি থাকায় রাহানে স্বভাবজাত ব্যাটিং ছেড়ে দ্রæত ব্যাট চালান। তবে ধুবে সেভাবে ব্যাটিং করতে পারেননি। এতে রান-বলের ব্যবধান আরও বাড়তে থাকে। এর মাঝেই বিদায় নেন ১৩ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৭ রান করা রাহানে।

রাহানের বিদায়ের পর ছন্দ পান ধুবে, বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন। শেষ তিন ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার পড়ে ৩৮ রান। ১৩তম ওভার থেকে ১৭ রান পায় চেন্নাই। কিন্তু শেষ দুই বলে ২ উইকেট হারায় তারা। ৮ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ১৯ রান করা অম্বতি রাইডুর বিদায়ের পরের বলেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক ধোনি, প্রথম বলেই আউট আউট হন তিনি।

১২ বলে দরকার পড়ে ২২ রান। কিন্তু ১৪তম ওভারে দারুণ বোলিং করেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মোহাম্মদ শামি। ৮ রান খরচা করেন তিনি। শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান, উইকেটে ধুবে ও রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম চার বল থেকে তিন রান এলেও শেষ দুই বল কাজে লাইগিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়ান জাদেজা। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার ৬ বলে একটি চার ও একটি ছক্কায় ১৪ ও ধুবে ২১ বলে ২টি ছক্কায় ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। গুজরাটের মোহিত ৩টি ও নূর আহমেদ ২টি উইকেট পান।

এর আগে ব্যাটিং করতে নামা গুজরাট উদ্বোধনী জুটি থেকেই পায় ৬৭ রান। এর জন্য ঋদ্ধিমান ও শুভমান বল খরচা করেন ৪২টি। তাদের জুটি ভাঙে এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শুভমানের বিদায়ে। ২০ বলে ৭টি চারে ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

পুরো আসরজুড়ে আলো ছড়ানো শুভমান ১৭ ম্যাচে ৩টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৫৯.৩৩ গড়ে ৮৯০ রান করেছেন শুভমান, যা আসরের সর্বোচ্চ। কারণ ফাইনালে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই কোনো ব্যাটসম্যানের। শুভমানের এই রান আইপিএলের এক আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, রেকর্ডটি বিরাট কোহলির দখলে। ২০১৬ আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরিতে ৯৭৩ রান করেন তিনি।

শুভমানের বিদায়ে চাপ বুঝতে হয়নি গুজরাটকে। ঋদ্ধিমানের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঝড় তোলেন সুদর্শন। এই জুটি থেকে আসে ৪২ বলে ৬৪ রান। দলীয় ১৩১ রানে থামেন ঋদ্ধিমান। এর আগে ৩৯ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৪ রান করেন তিনি। এরপর হার্কিককে এক পাশে রেখে ২২ গজে সাইক্লোন বইয়ে দেন সুদর্শন। শেষ ওভার পর্যন্ত চেন্নাইয়ের বোলারদের কোণঠাসা করে রাখেন তিনি।

শেষ ওভারে ফেরার আগে ৪৭ বলে ৮টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৯৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন সুদর্শন। সুদর্শন-হার্দিকের জুটি থেকে মাত্র ৩৩ বলে ৮১ রান পায় গুজরাট। হার্দিক ১২ বলে ২টি ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ দুটি বল কাজে লাগাতে পারেনি তারা। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ডট দেওয়া রশিদ খান শেষ বলে আউট হয়ে যান। চেন্নাইয়ের মাথিসা পাথিরানা ২টি এবং দীপক চাহার ও রবীন্দ্র জাদেজা একটি করে উইকেট পান।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে