শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
চীন-ভারত সংকট

সমঝোতা বাস্তবায়নে সংশয়

কেউ কাউকে হুমকি দিতে ছাড়ছে না, আশঙ্কা আরও বড় সংঘাতের
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

চীন-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সাম্প্রতিক বৈঠকে পাঁচ দফা সমঝোতা হলেও তার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ী উভয় দেশই। দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ তুলছে। দুই পক্ষই দাবি করছে, তারা যুদ্ধ চায় না। তবে কেউ কাউকে হুমকি দিতেও ছাড়ছে না। সমঝোতার পরও দুই দেশের সংবাদমাধ্যমেই সম্ভাব্য 'সামরিক হস্তক্ষেপের' কথা এসেছে জোরেশোরে। সংবাদসূত্র : টাইমস অব ইনডিয়া, গেস্নাবাল টাইমস কয়েক মাস ধরে হিমালয় বেষ্টিত পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা এবং প্যাংগং সরোবরের দক্ষিণ তীরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ভারত দাবি করে, চীনা সেনারা ভারতের সামরিক ঘাঁটি দখলের চেষ্টা করলে বাধা পেয়ে শূন্যে গুলি চালায় চীনের 'পিপলস লিবারেশন আর্মি'। ১৯৭৫ সালের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এটাই প্রথম গুলির ঘটনা। অপরদিকে চীনের দাবি, ভারতই উসকানিমূলক আচরণ করেছে। চলমান উত্তেজনার মধ্যে ১০ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশন সম্মেলনের ফাঁকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনা হয়। বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ভারত ও চীন সরকারের পক্ষ থেকে ঐক্যমতে পৌঁছানোর ব্যাপারে জানানো হয়। বলা হয়, দুই দেশের নেতাদের চেষ্টায় গড়ে ওঠা দ্বিপক্ষীয় সম্প্রীতি ক্ষুণ্নকারী পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে দুই পক্ষই। বিশেষ করে সতর্ক থাকতে হবে, যেন মতানৈক্য কোনোভাবেই চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছায়। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্তে পৌঁছান, সীমান্ত সমস্যা কোনো পক্ষের জন্যই লাভজনক নয়। আর সে কারণেই চীন ও ভারত সামরিক পর্যায়ে বৈঠকের ভিত্তিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহরের প্রক্রিয়া দ্রম্নত বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। সেই সঙ্গে দুই পক্ষের সেনাঘাঁটির মাঝে ব্যবধান বাড়িয়ে উত্তেজনা প্রশমনের সিদ্ধান্তও হয় বৈঠকে। সমঝোতা হলেও তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম 'গেস্নাবাল টাইমস'-এ বলা হয়, ডোকলাম সীমান্তে উত্তেজনার পর চীনা ও ভারতীয় নেতাদের মধ্যে অনেকবারই বৈঠক হয়েছে। তাদের মধ্যে সমঝোতাও হয়েছিল। তারপরও আবার সীমান্ত সংঘাত হতে দেখা গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জুনে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং সোমবার ভারতীয় সেনারা চীনা সেনাদের প্রতি হুঁশিয়ারিমূলক গুলি ছুড়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি বারবারই এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সমঝোতা বাস্তবায়নের ব্যাপারে জনগণ আস্থা হারিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, 'চীন ও ভারতের মধ্যকার মূল সমস্যাই হলো মৌলিকভাবে পারস্পরিক আস্থার সংকট। জাতীয়ভাবে চীন ও ভারতের মধ্যকার শক্তির ব্যবধান ১৯৬২ সালের তুলনায় অনেক বেশি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া ভারতের মন জিতে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। দিলিস্ন বিশ্বাস করে, বেইজিং এ ব্যাপারে ভীত। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগতভাবে চীনকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রেখেছে। গেস্নাবাল টাইমসের দাবি, চীন আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে চীন-ভারত সীমান্ত সংঘাতের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনীতির সংযোগ তৈরি করতে চাইছে দিলিস্ন। একে জুয়াখেলা হিসেবে অভিহিত করেছে সংবাদমাধ্যমটি। তারা হুমকি দিয়ে বলেছে, 'আমাদের শক্তির কার্যকর ব্যবহার অপরিহার্য। আমাদের অবশ্যই সীমান্ত ইসু্যতে ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ জুয়াখেলার মূল্য আরও বেশি করে দিতে হবে। কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, যেন সে আলোচনা ব্যর্থ হলে আমরা সামরিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে ভারতের ভ্রমকে পুরোপুরিভাবে পরাজিত করতে পারি।' প্রতিবেদনে ভারতকে সতর্ক করে আরও বলা হয়, 'আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের আঞ্চলিক অখন্ডতা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রশান্তি বজায় রাখতে কোনো মূল্যই খুব বেশি নয়। এটি কোনো স্স্নোগান নয়, এটি আমাদের সত্যিকারের চাওয়া। চীনা জনগণ শান্তি ভালোবাসে। তবে প্রয়োজন হলে আমরা লড়াইয়ের জন্যও প্রস্তুত। এটি কেবল বহির্বিশ্বকে হুঁশিয়ার করার জন্য বলা কথা নয়, বরং এটাই চীন।' ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'টাইমস অব ইনডিয়া'র এক প্রতিবেদনে দুই দেশের সেনারা খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে উলেস্নখ করে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সমঝোতা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি না হলে সংঘাতের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে আগাম অনুমান করাটা কঠিন কাজ। তবে মনে হচ্ছে, বড় ধরনের একটি সংঘর্ষ শুরু হওয়াটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। ভারতের জ্যেষ্ঠ সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কোনো জায়গাতেই ভারতীয় সেনাদের প্রস্তুতির ঘাটতি' রাখা হয়নি। এছাড়া সীমান্ত পরিস্থিতি সামলাতে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টিও আলোচনার টেবিলে রাখা আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতি কোন্‌ দিকে মোড় নেবে তার জন্য ভারত-চীন সেনা কমান্ডার পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে