সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বললেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট

অস্ত্র না দিলে রাশিয়ার জয় নিশ্চিত

একটু একটু করে 'ইউক্রেনের দুর্গ' বাখমুত দখলে নিচ্ছে রাশিয়া গোলাবর্ষণে কেঁপে উঠছে শহরটি
যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পশ্চিমা দেশগুলো যদি আগামী সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ না করে, তাহলে চলমান সংঘাতে রাশিয়া জিতে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা। ফ্রান্সের 'লা ফিগারও' পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শনিবার এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট। পত্রিকার পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, চলমান সংঘাতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারে কি না। জবাবে আন্দ্রেজ দুদা বলেন, 'হঁ্যা, তারা জিততে পারে, যদি ইউক্রেন জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রের সহযোগিতা না পায়।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরা, পার্স টুডে

প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা বলেন, 'কিয়েভ সরকারের কাছে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো নেই। কিন্তু তাদের লোকজন আছে। যদি আমরা তাদের কাছে আগামী সপ্তাহগুলোতে সামরিক সরঞ্জাম না পাঠাই, তাহলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জিতে যেতে পারেন।' আন্দ্রেজ দুদা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'তিনি বিজয়ী হতে পারেন এবং আমরা জানি না তিনি কোথায় থামবেন।'

একটু একটু করে বাখমুত দখলে নিচ্ছে রাশিয়া

এদিকে, ইউক্রেন এখন আস্তে আস্তে বাখমুতে হারতে শুরু করেছে। অর্থাৎ সেখানে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই শহরকে বর্ণনা করেন 'আমাদের দুর্গ' হিসেবে।

রাশিয়ার সেনারা প্রায় ছয় মাস ধরে এই বাখমুত (আর্তিমোভস্ক) শহরের কাছাকাছি অবস্থান করছিল। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে গরম পড়তে শুরু করলে রুশ সেনারা ইউক্রেনের অভ্যন্তরে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করে দেয়। তারা শীতের জন্য অপেক্ষা করছিল। ইউক্রেনও জানত শীত তীব্র হলে রাশিয়া 'উইন্টার অফেন্সিভ' (শীতকালীন হামলা) শুরু করবে। ফলে তারাও গোটা সময়টা কাজে লাগিয়েছে নিজেদের প্রতিরক্ষা লাইন শক্তিশালী করতে। আর ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা লাইনের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাটাই হচ্ছে বাখমুত।

এই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন দোনেৎস্কে অনেকটা স্থির থাকলেও যুদ্ধ কখনো বন্ধ থাকেনি। ধারণা করা হয়, বাখমুতে ইউক্রেনের ৫০ থেকে ৭০ হাজার সেনা আছে। শীত পড়তে শুরু করলে রাশিয়ার সেনারা সচল হয়ে ওঠে। বাখমুতের পাশের শহর সোলেডার দখল করে নেয় তারা। কিন্তু ইউক্রেনের তীব্র প্রতিরক্ষার সামনে বাখমুতে প্রবেশ অসম্ভব হয়ে যায়। ফলে নতুন কৌশল হাতে নেয় রাশিয়া। শহর দখলের আদিম পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা বিশাল এই বাখমুতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। যাতে বাখমুতে থাকা ইউক্রেনের এই হাজার হাজার সেনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

গত এক মাসে বাখমুতের আশপাশের সব এলাকা দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। যে তিনটি প্রধান সরবরাহ রুট ছিল, তার দুটিই এখন রাশিয়ার দখলে। বাকি থাকা সড়কটি রাশিয়া দখলে নিলেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বাখমুত। এর আগে এভাবে আজভ সাগরের তীরে অবস্থিত মারিউপোল দখলে নিয়েছিল রাশিয়া। সেখানে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয় ইউক্রেনীয় সেনাদের।

সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, গোলা বর্ষণের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে একটানা কেঁপে উঠছে শহরটি। দুই পক্ষই সমানে গোলা ছুড়ছে। মাথার ওপর দিয়ে উড়ছে রুশ যুদ্ধবিমান। শহরের কোনো কোনো স্থানে 'স্ট্রিট ফাইটিং' শুরু হয়ে গেছে, অর্থাৎ রাশিয়ানরা এখন বাখমুতের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। তবে ইউক্রেনীয় সেনারা সর্বোচ্চটা দিয়ে তাদের রুখতে যুদ্ধ করে চলেছে।

তাপমাত্রা শূন্যের নিচে এবং ইউক্রেনীয়দের গুলিও শেষ হয়ে আসছে। ৯৩তম মেকানাইজড ব্রিগেডের ক্যাপ্টেন মিখাইলো বলেন, 'আমাদের সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গোলা ফুরিয়ে এসেছে। আমাদের এখন এনক্রিপ্টেড কমিউনিকেশন ডিভাইস প্রয়োজন, যা পশ্চিমা মিত্ররাই সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া সেনাদের সরাতে আরমর্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার প্রয়োজন। তবে আমরা এরপরও চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ এই যুদ্ধের সবথেকে বড় শিক্ষা হচ্ছে, কীভাবে অল্প রিসোর্স নিয়েই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যায়।'

বাখমুতের লড়াইকে বর্ণনা করা হচ্ছে 'যুদ্ধের ভেতরে আরেক যুদ্ধ' হিসেবে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ লড়াই হয়েছে সেখানে। এখন রুশ সেনারা একটু একটু দখল করে নিচ্ছে ইউক্রেনের এই দুর্গকে। আর এতে বড় ভূমিকা রাখছে ওয়াগনারের যোদ্ধারা। এই রুশ প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানিটি সোলেডার দখল করেছিল। তারাই এখন বাখমুতকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। এখন রাশিয়ার নিয়মিত সেনারাও এসে যুক্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে