সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল :নিউজিল্যান্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

ঝড়টির বেশিরভাগ প্রভাব পড়ছে পূর্ব আইল্যান্ডে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলের প্রভাবে ব্যাপক বন্যা, ভূমিধস ও সাগর ফুলেফেঁপে ওঠায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে নিউজিল্যান্ড সরকার। দেশটির ইতিহাসে এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলো। মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ২৫ হাজার মানুষ বিদু্যৎবিহীন অবস্থায় ছিলেন। বন্যার কারণে বহু লোককে তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, অনেক বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়ে সেখানেই আটকা পড়ে আছেন। ছবিটি মঙ্গলবার নেনপিয়ার শহরের কাছে আওয়াটোটো থেকে তোলা -আল-জাজিরা

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ নিউজিল্যান্ডে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বাড়ি-ঘর ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী কিরেন ম্যাকআন্টলি জরুরি অবস্থা জারিপত্রে মঙ্গলবার স্বাক্ষর করেছেন। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে কয়েক লাখ মানুষ বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেছেন, 'এটি অভাবনীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই ঝড়টির বেশিরভাগ প্রভাব পড়ছে পূর্ব আইল্যান্ডে।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স

জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স বলেছেন, 'নিউজিল্যান্ডবাসীর জন্য এটি একটি দীর্ঘ রাত হয়েছে, বিশেষভাবে নর্থ আইল্যান্ডের ওপরের দিকের বাসিন্দাদের জন্য; সেখানে বহু পরিবার ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, বহু বাড়ি বিদু্যৎবিহীন অবস্থায় আছে, পুরো দেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।'

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় গ্যাব্রিয়েল অকল্যান্ড থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে নর্থ আইল্যান্ডের পূর্ব উপকূলের কাছে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি এই উপকূলের সঙ্গে প্রায় সমান্তরালে দক্ষিণ-পূর্ব মুখে এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নর্থ আইল্যান্ড ও সাউথ আইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের পূর্ব উপকূলের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে জারি করা আবহাওয়া সতর্কতা বজায় আছে।

দেশটির জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী কিরান ম্যাকঅ্যানাল্টি বলেছেন, নিউজিল্যান্ড তখন ঝড়ের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, আরও বৃষ্টি ও প্রবল বাতাস বয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশটি ব্যাপক বন্যা, ভূমিধসের কবলে পড়েছে এবং রাস্তা ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী মেগান উডস জানিয়েছেন, প্রায় দুই লাখ ২৫ হাজার মানুষ বিদু্যৎবিহীন অবস্থায় আছেন। সারা দেশ থেকেই বিদু্যৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদু্যৎ সরবরাহ লাইন ও সাবস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানাচ্ছে।

নদী ফুলেফেঁপে ওঠায় এবং সাগর থেকে ধেয়ে আসা বিশাল ঢেউয়ে সৈকতমুখী বাড়ি ও স্থাপনাগুলো ডুবে যেতে থাকায় কর্তৃপক্ষ সৈকত সংলগ্ন বসতিগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। বহু রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, মোবাইল ফোন পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে, আর কিছু ছোট শহর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের পানি ও খাবার সংরক্ষণ করতে বলা হচ্ছে। এয়ার নিউজিল্যান্ড ফের অকল্যান্ডগামী ও শহরটি থেকে উড্ডয়নের কথা থাকা সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করেছে।

ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত কত মানুষ বাস্তুচু্যত বা আহত হয়েছেন, তা বলার সময় এখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিপকিন্স। এ পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো মৃতু্যর কথা জানা যায়নি।

হকস্‌ বে-তে একটি বাড়ি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটির দমকল পরিষেবা জানিয়েছে, ভূমিধসের সঙ্গে পাহাড় থেকে নিচে চলে যাওয়া একটি বাড়ির ভেতরে তাদের একজন স্বেচ্ছাসেবক দমকল কর্মী রয়ে গিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের একটি যুদ্ধজাহাজ পূর্ব উপকূলের সাগর থেকে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে। ঝড়ে তার ইয়ট উল্টে গিয়েছিল।

নিউজিল্যান্ড এর আগে ২০১১ সালে একটি ভূমিকম্পের পর প্রথমবার এবং ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে