সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে বিবিসির কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনেও তলস্নাশি

নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বিবিসির দিলিস্ন এবং মুম্বাই অফিসে বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো চলেছে তলস্নাশি। ভারতের আয়কর কর্মকর্তারা গত ২৪ ঘণ্টা ধরে সেখানে আছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতেও চলছে তলস্নাশি। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, তলস্নাশি নয়, 'আয়কর জরিপের' অংশ হিসেবে তারা বিবিসির কার্যালয় পরিদর্শনে গেছেন।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আয়কর দপ্তরের দল পৌঁছায় দিলিস্ন এবং মুম্বাইয়ে বিবিসির দপ্তরে। এরপরই সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ জমা রাখেন আয়কর কর্মকর্তারা।

এদিকে বিবিসির দিলিস্ন ও মুম্বাইয়ের কার্যালয়ে ভারত সরকারের আয়কর বিভাগের তলস্নাশি নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। বিরোধীদের কেউ বলেছেন, এটা বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি। কেউ বলেছেন, গৌতম আদানি 'সেবি'তে গেলে তাকে সাদর আপ্যায়ন করা হয়, আর বিবিসির ভাগ্যে জোটে তলস্নাশি। এডিটর্স গিল্ডও এ তলস্নাশির তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছে, বিবিসির ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা সরকারের পুরনো রীতিরই ধারাবাহিকতা। বারবার সরকার এভাবে ভয় দেখিয়ে সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করে চলেছে।

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে দুই পর্যায়ে তথ্যচিত্র সম্প্রচারের কিছুদিনের মধ্যেই গত মঙ্গলবার সকালে আচমকা এই তলস্নাশি অভিযান শুরু হয়। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, আয়কর কর্মকর্তারা কয়েকজন সাংবাদিকের মুঠোফোন, ল্যাপটপ কেড়ে নিয়েছেন।

বিবিসির দুই কার্যালয়ে আয়কর কর্মকর্তাদের অভিযানের খবর প্রকাশিত হলে সমালোচনা শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে আয়কর কর্তৃপক্ষ বলেছে, এটা মোটেই তলস্নাশি নয়। এটা এক ধরনের 'সার্ভে' বা জরিপ। আয়করসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে বারবার বলা সত্ত্বেও বিবিসি আইন মানছিল না। একে তলস্নাশি অভিযানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। যদিও বিরোধীদের সমালোচনা করে বিজেপি বলেছে, 'বিবিসি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা। ঐতিহাসিকভাবে তারা ভারতবিরোধী এক কালো সংগঠন।

তাদের প্রচার কংগ্রেসের প্রচারের সঙ্গে পুরো মিলে যাচ্ছে।' বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়ার মতে, এ দেশে ব্যবসা করতে গেলে দেশের আইন মানতে হবে। তারা আইন মেনে থাকলে ভয়ের কিছু নেই।

এদিকে এই তলস্নাশি নিয়ে বিবিসি নিউজ প্রেস টিম এক টুইটে বলেছে, 'বিবিসির দিলিস্ন ও মুম্বাই অফিসে আয়কর কর্তৃপক্ষ এখনো রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছি। যত শিগগির সম্ভব বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে পারব বলে আমরা আশা করছি।'

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে দুই পর্বে বিবিসি 'ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন' তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার করে। ভারতে তা সম্প্রচারিত না হলেও ভারত সরকার তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই তথ্যচিত্রের মূল বক্তব্য, গুজরাট দাঙ্গার সঙ্গে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পৃক্ততা ছিল। ওই দাঙ্গাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ওই দাঙ্গা তাকে প্রধানমন্ত্রী হতেও সাহায্য করেছে।

বিবিসির কার্যালয়ে তলস্নাশি বা 'সার্ভে' করার সময়টি উলেস্নখযোগ্য। ওই তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করা নিয়ে সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। সরকার তখন কিছু বলেনি। গত সোমবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে। এক মাস পর অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় তলস্নাশি বা সার্ভে ও জিজ্ঞাসাবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে