সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প

নিরাশার মাঝেই আশার আলো

ভূমিকম্পের ২৪৮ ঘণ্টা পর তরুণীকে জীবিত উদ্ধার তিন ঘণ্টায় ছয় লাখ কোটি টাকা দিল তুর্কিরা!
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

গত ৬ ফেব্রম্নয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকর্মীরা যখন জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন, ঠিক তখনই দক্ষিণ তুরস্কে এক তরুণীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির কাহরামানমারাস প্রদেশে এমন অবিশ্বাস্য ঘটনার কথা জানা গেছে। তাকে উদ্ধার করা হয়েছে ভূমিকম্পের ২৪৮ ঘণ্টা পর। ফলে উদ্ধার অভিযান খুব ধীরে চালাতে হচ্ছে, যদি এমন আরও কাউকে উদ্ধার করা যায় এই আশায়। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, আনাদলু

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, একটি ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে ওই কিশোরীকে বের করে আনা হয়েছে। যদিও এখন বেঁচে যাওয়া লোকদের খুঁজে পাওয়ার আশা প্রায় ম্স্নান হয়ে গেছে। কাহরামানমারাস প্রদেশের দুলকাদিরোগলু জেলায় কর্মরত উদ্ধারকারীরা ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন। তারা জানিয়েছেন, 'ধ্বংসস্তূপের নিচে ১৭ বছর বয়সি আলেনা ওলমাজ নামের ওই তরুণীকে জীবিত খুঁজে পেয়েছেন তারা।'

তিনি জীবিত আছেন এ খবরে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। অনেকে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। অনেকে 'আলস্নাহু আকবর' ধ্বনি দেন। এতে নিখোঁজ স্বজনদের মনে নতুন করে আশার আলো দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, এখনো ধ্বংসাবশেষের নিচে বেঁচে আছেন তাদের স্বজনরা। দ্রম্নত উদ্ধার অভিযান চালালে তাদেরকেও জীবিত বের করা সম্ভব হবে।

এর আগের দিনও (বুধবার) দুই সন্তান ও মাকে উদ্ধার করা হয়েছে আন্তাকিয়া শহর থেকে। উদ্ধারকৃত ওই মায়ের নাম এলা। আর তার দুই সন্তানের নাম মিসাম ও আলি। ভূমিকম্প আঘাত হানার প্রায় ১০ দিন পর তাদের নিজ অ্যাপার্টমেন্টের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। একই দিন তুরস্কের কাহরামানমারাস নামক শহর থেকে ভূমিকম্পের ২২২ ঘণ্টা পর ৪২ বছর বয়সি এক নারীকে উদ্ধার করা হয়। ওই একই শহর থেকে পরবর্তী সময়ে ৭৪ বছর বয়সি এক নারীকে ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়।

শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। কম্পনে হাজার হাজার বাড়ি ধসে পড়ায় এখনো সব জায়গায় ধ্বংসস্তূপ অপসারণ সম্ভব হয়নি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। তুরস্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ১৮৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর সিরিয়ায় এই সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০।

শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ। আর এই শহরটির পাশেই অবস্থিত কাহরামানমারাস। ভূমিকম্পের আঘাতে গাজিয়ানতেপের মতো কাহরামানমারাসও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তিন ঘণ্টায় ছয় লাখ কোটি দিল তুর্কিরা!

কেউ দিল ৫০ তুর্কি লিরা (২৭৫ টাকা), কেউ দিল ১০০। এভাবে করে মাত্র তিন ঘণ্টায় তুরস্কের জনগণ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কার্যক্রমে দান করেছে ১১ বিলিয়ন লিরা (৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ ছয় লাখ কোটি টাকারও বেশি।

স্থানীয় সময় বুধবার রাতে তুরস্কে টেলিভিশন ও রেডিওসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একযোগে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বিশেষ ফান্ডিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে তুরস্কের জরুরি ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্সি (এএফএডি)। এতেই মাত্র তিন ঘণ্টায় এই পরিমাণ অর্থ জোগাড় হয়। এই অর্থের বেশির ভাগই দিয়েছে তুরস্কের সাধারণ জনগণ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই ঐতিহাসিক সহায়তার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং এর প্রতিটি টাকা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য ব্যয় হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে