সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মীদের মোবাইল-ল্যাপটপ পরীক্ষা

ভারতে বিবিসি কার্যালয়ে তলস্নাশি
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ভারতের রাজধানী দিলিস্ন ও মুম্বাইয়ে তৃতীয় দিনের মতো বিবিসির (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) কার্যালয়ে তলস্নাশি অভিযান পরিচালনা করেছেন দেশটির আয়কর কর্মকর্তারা। অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে দিলিস্নর কার্যালয়ের অন্তত ১০ জ্যেষ্ঠ কর্মী বাড়িতে যাচ্ছেন না। অভিযান চলাকালে আয়কর কর্মকর্তারা বিবিসির কর্মীদের কাছ থেকে আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করেছেন। দিলিস্নর বিবিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা প্রতিদিনের মতোই সংবাদ সম্প্রচার করছে এবং অনেক কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করছেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এনডিটিভি

দিলিস্ন ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে আয়কর কর্মকর্তাদের অভিযানের তৃতীয় দিনে জব্দ করা মোবাইল ও ল্যাপটপ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে ভারতের আয়কর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দিলিস্ন ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে হানা দেন। শুরুতেই তারা সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেন। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত তলস্নাশি অভিযান চলেছে। যদিও কর্মকর্তারা বলেছেন, তলস্নাশি নয়, বরং আয়কর জরিপের অংশ হিসেবে তারা বিবিসির কার্যালয় পরিদর্শনে গেছেন।

আয়কর কর্মকর্তরা বিবিসি কার্যালয়েই অবস্থান করছেন। অনেকে রাতে সেখানেই ঘুমাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। মঙ্গলবার রাতে বিবিসির কয়েকজন কর্মীকে তাদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, 'তারা (কর্মকর্তারা) আমাদের কাউকে কাউকে তাদের ল্যাপটপ খুলে দিতে এবং ফোন তাদের কাছে দিতে বলে। পরে তারা ফোন ফেরত দেয়।'

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিবিসির বিতর্কিত তথ্যচিত্র যুক্তরাজ্যে সম্প্রচারের কয়েক সপ্তাহ পর এই অভিযান চালানো হয়। ওই তথ্যচিত্রে ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ঘটনায় মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সময় মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

'ইনডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন' শিরোনামের ওই তথ্যচিত্র ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে মোদি সরকার। তথ্যচিত্রটিকে কেন্দ্র করে ভারতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়েছে। ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এ তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্রটি বিতর্কিত কাহিনি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বানানো 'অপপ্রচার' বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ভারত সরকার।

ফলে তথ্যচিত্রটি কেবল যুক্তরাজ্যের টিভিতে সম্প্রচারিত হলেও ভারত সরকার স্যোশাল মিডিয়ায় এর শেয়ার ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্যচিত্রটি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। টুইটার, ইউটিউবকেও এ সংক্রান্ত সব টুইট এবং ভিডিও মুছে ফেলতে বলা হয়।

এ নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হয়। বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তথ্যচিত্রটি দেখায়। তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে তারা। গতমাসে দিলিস্ন পুলিশ তথ্যচিত্র দেখতে জড়ো হওয়া কয়েকজন ছাত্রকে গ্রেপ্তারও করেছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে তথ্যচিত্র সম্প্রচারের প্রতিশোধ নিতেই বিবিসি দপ্তরে আয়কর কর্মকর্তারা হানা- এমন কথা অস্বীকার করেছেন ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা। আয়কর বিভাগও এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি বা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে, লভ্যাংশের আদানপ্রদান এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছে না বিবিসি। এজন্য বিবিসি কর্তৃপক্ষকে নোটিসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই আয়কর আইন অনুযায়ী এই জরিপ। এটি কোনো তলস্নাশি অভিযান নয়। এ ধরনের সমীক্ষা নিয়মিত করা হয়। এর সঙ্গে তলস্নাশি বা অভিযানকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য আর্থিক লেনদেন বা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কিনা, তা এই সমীক্ষায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভারতে সম্প্রতি কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো আয়কর কর্মকর্তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধানের মুখে পড়েছে। তবে বিবিসিতে যে তলস্নাশি অভিযান চলছে, তার সমালোচনা করেছে কয়েকটি গণমাধ্যম সংগঠন এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে