সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
সুদানে ক্ষমতার লড়াই

ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত খার্তুম

নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২০ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশের তোড়জোড়
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
দুই পক্ষের লড়াইয়ে খার্তুম যেন 'নরক'

ক্ষমতার জন্য সুদানে সংঘাত থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আহ্বানের পরও সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত আট দিনের যুদ্ধে সুদানের রাজধানী খাতুমের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। যে যেভাবে পারছে শহর থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ। সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, খার্তুমের প্রধান সড়কগুলো একেবারেই জনমানবহীন হয়ে পড়েছে। দেখে মনে হবে, এটা কোনো 'ভুতুরে নগরী'। রাস্তায় এখানে সেখানে বিধ্বস্ত সামরিক যান পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। বিমান থেকে হামলা চালিয়ে এগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। ক্ষুধার তাড়নায় কাউকে বাইরে বেরুতে দেখা গেলেও বেশিরভাগ এলাকাই ছিল ফাঁকা নিস্তব্ধ। তবে শহর থেকে পালাতে বাস স্টেশনগুলোতে দেখা গেছে ব্যস্ততা। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি

কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার পর গত ১৫ এপ্রিল রাজধানী খার্তুমে আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সুদানি সশস্ত্র বাহিনী এবং হেমেদতি নামে পরিচিত মোহাম্মদ হামদান দাগালোর র?্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাকা যাত্রীবাহী বিমানগুলোকে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। মাথার ওপর উড়ছে যুদ্ধবিমান। বুলেটের আঘাতে ছিদ্র হয়ে গেছে অনেক ভবনের দেয়াল। রাজধানীজুড়ে শোনা যাচ্ছে কামানের গর্জন। খার্তুমের বাসিন্দা আবদুলস্নাহ মুখতার বলেন, 'হঠাৎ করে যুদ্ধের ফলে রাজধানীতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে তার বাড়িতে বিদু্যৎ নেই।'

নাগরিকদের সরিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশের তোড়জোড়

এদিকে, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী সুদান থেকে তাদের দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে, অন্য দেশগুলোও তাদের নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে। রোববার সুদানের রাজধানী খার্তুমে প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক পক্ষগুলোর লড়াইয়ের মধ্যেই এসব তোড়জোড় চলে।

লড়াই শুরু হওয়ার পর সুদানে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে রোববার পর্যন্তই ৪২০ জন নিহত ও ৩৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। লড়াইয়ের কারণে লাখ লাখ সুদানি নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই বিশৃঙ্খলা থেকে থেকে লোকজন পালানোর উদ্যোগ নিলে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য খার্তুমে বিমান নামায় এবং গাড়িবহর সংগঠিত করে। এ সময় কিছু বিদেশি নাগরিক আহত হন।

রয়টার্সের একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, পুরো শহরজুড়ে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে। ফ্রান্সের একটি গাড়িবহরে হামলার জন্য লড়াইরত পক্ষগুলো একে অপরকে দায় দিয়েছে। উভয় পক্ষই বলেছে, এ ঘটনায় ফ্রান্সের একজন নাগরিক আহত হয়েছেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে তারা জানিয়েছিল, তারা তাদের দূতাবাস কর্মী ও নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে।

ফ্রান্স জানিয়েছে, তাদের একটি বিমান খার্তুমে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকসহ প্রায় ১০০ জনকে জিবুতিতে সরিয়ে নিয়েছে এবং আরেকটি উড়োজাহাজ একই সংখ্যক যাত্রীসহ উড্ডয়নের পর্যায়ে রয়েছে।

তবে নাগরিকদের সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকিও রয়েছে। পোর্ট সুদানের দিকে যেতে থাকা কাতারের একটি গাড়িবহরে আরএসএফ লুটপাট চালিয়েছে বলে সুদানের সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে। পৃথক আরেক ঘটনায় সংঘর্ষ চলাকালে এক ইরাকি নাগরিক নিহত হয়েছেন আর মিশর জানিয়েছে, তাদের একজন কূটনীতিক আহত হয়েছেন।

খার্তুম থেকে বিদেশি বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের উদ্যোগে কিছু সুদানি হতাশ বোধ করছেন, বিবদমান পক্ষগুলো বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হলেও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে খুব একটা উদ্বেগ দেখাচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা। আলসাদিক আলফেইত; লড়াই শুরু হওয়ার পর রোববার প্রথমবারের মতো তিনি নিজ বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে আসতে পেরেছেন, তিনি আর মিশরের দিকে যাওয়ার সময় বলন, 'বিদেশিদের চলে যেতে দেখার পর আমার মন খারাপ হয়েছে। আমি দেখলাম, কিছু দলকে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ, উভয়েই সহযোগিতা করছে আর এদিকে আমরা আহত হচ্ছি।'

সুদানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা খার্তুমের উত্তরে বিমানঘাঁটি ওয়াদি সেদনা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযানে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করেছে। আর কাতার ও জর্ডান তাদের নাগরিকদের স্থলপথে পোস্ট সুদান হয়ে ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে বাহিনীটি জানিয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তারাও তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছেন এবং তাদের সুদানি কর্মীদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে