সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
সামরিক শক্তি মোকাবিলা

চীনা সাবমেরিনে চাপে আমেরিকা

চীনের পারমাণবিক সাবমেরিনগুলো নতুন, দূরপালস্নার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত। যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমেরিকার মূল ভূখন্ডে আঘাত হানতে সক্ষম
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
পূর্ব চীন সাগরে কুচকাওয়াজে চীনের সাবমেরিন

বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি মোকাবিলায় আমেরিকা ও এর মিত্রদের চেষ্টার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে চীন। কারণ চীনের পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী অন্তত একটি সাবমেরিন সমুদ্রে সর্বক্ষণিক টহলে রেখেছে বলে পেন্টাগনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম।

কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চীনের সামরিক সক্ষমতার মূল্যায়ন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের জিন-শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ছয়টি সাবমেরিনের বহর হাইনান দ্বীপ থেকে দক্ষিণ চীন সাগরে 'প্রায়-সর্বক্ষণিক' টহল দিচ্ছে। এগুলো নতুন, দূরপালস্নার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত। যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমেরিকায়ও আঘাত হানতে সক্ষম বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

১৭৪ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনটি গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত হওয়ার পর তেমন মনোযোগ কাড়তে না পারলেও এটি চীনের সামরিক সক্ষমতা উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বাড়ার বিষয়টি জানান দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন নৌ-অপারেশন সম্পর্কে অবগত চার আঞ্চলিক সামরিক অ্যাটাশে ও পাঁচ নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

চীনকে ঠেকাতে আমেরিকা এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে 'অকাস' জোট করেছে। তাতে চুক্তি অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন পাবে। কিন্তু নিজেদের একটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করতে করতে অস্ট্রেলিয়ার দুই দশকের বেশি সময় লেগে যাবে। এর মধ্যে সমুদ্রে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে চীনের নিয়মিত টহল আমেরিকা ও মিত্রদের ওপর তুমুল চাপ সৃষ্টি করায় তারা এখন স্নায়ু-যুদ্ধকালীন কৌশলের মতো নৌ-যান মোতায়েনের তীব্রতা বাড়িয়েছে।

এই নতুন টহলের মাধ্যমে সরঞ্জাম, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ এবং অস্ত্রসহ নানান ক্ষেত্রে চীনের উন্নতির বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে। আমেরিকা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স দশকের পর দশক ধরে যেভাবে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন চালিয়েছে, চীনও যে এখন অনেকটা সেভাবেই চালাচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের টহলও সেটাই দেখাচ্ছে।

বেইজিংয়ের এই 'প্রতিরোধমূলক টহল' ভূমিতে থাকা ক্ষেপণাস্ত্র এবং এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেলেও তাদের পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে পাল্টা আক্রমণের হুমকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। চিরাচরিত পারমাণবিক ডকট্রিন মোতাবেক, এই ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন যে কোনো বৈরী শক্তিকে চীনের ওপর প্রথম আঘাত হানার ব্যাপারে কয়েকবার ভাবতে বাধ্য করবে। চীনের এই সাবমেরিনগুলো এখন তৃতীয় প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র জেএল-৩ দ্বারা সজ্জিত বলে মার্চে মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে বলেছেন আমেরিকার স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল অ্যান্থনি কটন।

একাধিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ১০ হাজারের বেশি কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে অনুমান করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে, চীনের জলসীমা থেকে এ ধরনের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলে সেটি আমেরিকার মূল ভূখন্ডেও আঘাত হানতে পারবে বলে বলা হয়েছে পেন্টাগনের নভেম্বরের প্রতিবেদনে।

চীন আগামী বছরগুলোতে তাদের পরবর্তী-প্রজন্মের টাইপ-৯৬ সাবমেরিন নামানোর আগ পর্যন্ত তারা এই জেএল-৩ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে না বলে পেন্টাগনের আগের প্রতিবেদনগুলোতে অনুমান করা হয়েছিল। পেন্টাগনের সর্বশেষ প্রতিবেদন বা সাবমেরিন মোতায়েন প্রসঙ্গে 'রয়টার্স' চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাইলেও তারা সাড়া দেয়নি। পেন্টাগনও তাদের আগের মূল্যায়ন এবং চীনের মোতায়েন করা এসব সাবমেরিন তাদের কর্মকান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

গুয়াম ও হাওয়াইসহ প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে মার্কিন নৌ-বাহিনী প্রায় দুই ডজন পারমাণবিক শক্তিধর আক্রমণকারী সাবমেরিন রাখে বলে জানিয়েছে আমেরিকার প্যাসিফিক নৌ-বহর। আর অকাস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৭ সাল থেকে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বাইরে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন মোতায়েন থাকবে।

পানির ওপরে চলা জাহাজ ও নজরদারি এয়ারক্রাফট পি-৮ পসাইডনের সহায়তায় এ ধরনের সাবমেরিনগুলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনের খোঁজে মূল অস্ত্রের ভূমিকা পালন করে, সাবমেরিনের খোঁজ পেতে আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথগুলোতে সমুদ্র তলদেশেও সেন্সর রেখে দিয়েছে।

লন্ডন 'ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ'র প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক টিমোথি রাইট বলেছেন, মার্কিন বাহিনী হয়তো এখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে একরকম মানিয়ে নিতে পারবে, কিন্তু আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে সেখানে আরও সামরিক সহযোগিতা রাখার প্রস্তুতি নিতে হবে, বিশেষ করে যখন টাইপ-৯৬ সাবমেরিনের টহল শুরু হবে, সেই সময়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে।

চীনের পারমাণবিক বাহিনীর দ্রম্নত বিকাশের মানে দাঁড়াচ্ছে, আমেরিকার কৌশলবিদদের প্রথমবারের মতো রাশিয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় কোনো 'পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিপক্ষকে' নিয়েও মাথা ঘামাতে হবে। টিমোথি রাইট বলেন, এটা আমেরিকার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, কেননা (দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবিলায়) দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে প্রসারিত করতে হবে, আরও ঝুঁকির দিকে নজর দিতে হবে, এসব মোকাবিলায় প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত সক্ষমতার দরকার হবে।' সংবাদসূত্র : রয়টার্স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে